থ্রি সিক্সটি গ্রুপের অর্থ পাচারের অভিযোগ নিষ্পত্তির নির্দেশ হাইকোর্টের


মুজিববর্ষ উদযাপন, মুজিব সিনেমাসহ নানা দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও কর ফাকির অভিযোগ নিয়ে এশিয়াটিক থ্রি সিক্সটি গ্রুপের বিরুদ্ধে দুদক, এনবিআর ও বিএফআইইউতে দেওয়া অভিযোগ নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল সোমবার বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুরের বেঞ্চ ৬০ দিনের মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন।
আজ মঙ্গলবার রিটকারীর আইনজীবী ফিরোজ হোসেন আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এশিয়াটিক থ্রি সিক্সটি গ্রুপের দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও কর ফাকির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে দুদক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং বিএফআইইউ’র ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে এনায়েত উল্লাহ নামে এক ব্যক্তি রিট করেন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সাব্বির আজম ও ফিরোজ হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শফিকুর রহমান ও তানিম খান।
আইনজীবী ফিরোজ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, এশিয়াটিক থ্রি সিক্সটি গ্রুপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুদক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং বিএফআইইউ–তে আবেদন করা হয়েছিল। তারা কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় রিট করা হয়।
তিন সংস্থায় দেওয়া আবেদনে এশিয়াটিক থ্রি সিক্সটি গ্রুপের যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তারা হলেন– আসাদুজ্জামান নুর, সারা যাকের, ইরেশ যাকের, মোর্শেদ আলম, রেজাউল হাসান, ইকরাম মঈন চৌধুরী ও মোহাম্মদ হাসান ফারুক।
অভিযোগসমূহ
দুদক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং বিএফআইইউ–তে করা অভিযোগে বলা হয়, গত ১৬ বছরে স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থ, আইসিটি, বিদ্যুৎ, তথ্য সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের হাজার কোটি টাকার বিজ্ঞাপনের টেন্ডার রাজনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মিডিয়ায় একচেটিয়া লুটপাট। আওয়ামী সরকারের মদদে সরকারের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন কথিত উন্নয়ণের ক্যাম্পেইন, বিজ্ঞাপন বানানো ও দেশে বিদেশে প্রচার। গত ৫ আগষ্ট বিকেল ৪টা পর্যন্ত এশিয়াটিকের এমবিএ নামক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরকারি বিজ্ঞাপন সময়, ৭১, যমুনাসহ বিভিন্ন টিভিতে প্রচারিত হয়। মুজিব সিনেমা বিশ্বব্যাপি প্রচারনার কাজে সি.আর.আই ও প্রধানমন্ত্রীর অফিসের সরাসরি হস্তক্ষেপে বিভিন্ন সরকারি–বেসরকারি ব্যাংক, বীমা ও দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে শত-শত কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়। বিশ্বব্যাপি প্রচারনার কাজে বিদেশে এশিয়াটিক এফজেডই নামে পৃথক কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে। দেশ থেকে বিপুল টাকা পাচারের মাধ্যমে বিদেশি মিডিয়ায় মুজিব সিনেমার ব্যাপক প্রচার কাজ করে এশিয়াটিক গ্রুপের মাইন্ডশেয়ার ও ফোরথট পিআর।
অভিযোগে আরও বলা হয়, ২০২১ সালে মুজিব জন্মশত বার্ষিকী উদযাপনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে সরকারের কয়েক হাজার কোটি টাকা অপচয় হয়। শুধুমাত্র নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে একদিনের আয়োজিত অনুষ্ঠানে এশিয়াটিক এর মাধ্যমে প্রায় শতকোটি সরকারি তহবিল খরচ করা হয়। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি কোম্পানির বিজ্ঞাপনের বাজেট একচেটিয়াভাবে নিয়ন্ত্রণ নেয় এশিয়াটিক গ্রুপ। আওয়ামী শাসনের শেষ কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য ১০টি সরকারি ইভেন্ট হলো–তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক ২৫তম বিশ্ব কংগ্রেস (ডব্লি সি আই টি) -২০২১, বিশ্ব শান্তি সম্মেলন-২০২১, ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ফেয়ার ২০২২, ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস কনসার্ট ২০২২, বিশ্ব পর্যটন দিবস ২০২২, শেখ রাসেল দিবস ২০২২, আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনাল ২০২২, বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি, পদ্মা সেতু উদ্বোধন এবং ডকুমেন্টারি ও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রচারণা। এসব অনুষ্ঠানের মূল আয়োজক হিসেবে এশিয়াটিক গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো নানান নামে কাজ করে সরকারের রাজস্ব তহবিলের কয়েক হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি করে।