৬ মাসে ২৪৪ জনের আত্মহত্যার চেষ্টা


ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে গত ৬ মাসে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৪৪ জন নারী-পুরুষ। এর মধ্যে বিষ পান করে ১৮৩, গলায় দড়ি দিয়ে ২৬ আর ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে ৩৫ জন আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তবে সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারলে এ সমস্যার প্রতিকার সম্ভব বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল।
জানা গেছে, গত ৬ মাসে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে কোটচাঁদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৪৪ জন নারী-পুরুষ। এর মধ্যে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টার সংখ্যাই বেশি।
গত জানুয়ারি মাসে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে কোটচাঁদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪০ জন। এর মধ্যে বিষপানে চিকিৎসা নেন ২৮, গলায় দড়ি দিয়ে ৫ ও ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে ৭ জন। ফেব্রুয়ারি মাসে বিষপানে ৩১, গলায় দড়ি দিয়ে ৪ ও ঘুমের বড়ি খেয়ে ৯ জন। মার্চ মাসে বিষপানে ৩৩, গলায় দড়ি দিয়ে ১ ও ঘুমের ট্যাবলেট খান ৩ জনে।
এ ছাড়া এপ্রিল মাসে বিষ পান করে চিকিৎসা নেন ৩০, গলায় দড়ি দিয়ে ৮ ও ঘুমের বড়ি খেয়ে ৫ জন। মে মাসে বিষপান করে ৩৩, গলায় দড়ি দিয়ে ৩ ও ঘুমের বড়ি খেয়ে ২ জন। সবশেষ গত জুন মাসে বিষপান করে ২৮, গলায় দড়ি দিয়ে ৫ ও ঘুমের বড়ি খেয়ে চিকিৎসা নেন ৯ জন।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় কোটচাঁদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভৌগোলিক কারণে আমাদের জেলার মানুষ বেশি আবেগপ্রবণ। আর এ কারণে আত্মহত্যার প্রবণতাও বেশি। এর মধ্যে কোটচাঁদপুর অন্যতম। আত্মহত্যা অন্য কারণেও করে থাকেন। তবে মূল কারণ সেটিই বলে আমি মনে করি।’
জানতে চাইলে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা শিলা বেগম বলেন, ‘মানুষ ভিন্ন ভিন্ন কারণে আত্মহত্যা করে থাকেন। এর কোনো নির্দিষ্ট কারণ দেখছি না। আর এ সম্পর্কে আমার তেমন কিছু জানা নেই।’ প্রতিকারে আপনাদের কোনো ব্যবস্থা রয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময়ই আমাদের কাজকর্মের সঙ্গে মানুষকে এসব বিষয় নিয়ে সচেতন করে থাকি।’
কোটচাঁদপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুন্না বিশ্বাস বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। যার মধ্যে প্রেমঘটিত বিষয়ে হতে পারে। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, ইভ টিজিং ও বাল্যবিবাহও অন্যতম। এটা প্রতিরোধে আইন আছে। তবে সবার আগে প্রয়োজন সচেতনতা বৃদ্ধি করা। আর এ কাজ করতে হলে আমাদের সমন্বিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে। এটা কারও একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। আমরা আমাদের কার্যক্রমের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে আলোচনা করে থাকি। তবে এর প্রতিফল কতটুকু ঘটে, সেটা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। এটা নিয়ে কাজ করলে অনেকটা প্রতিরোধ করা সম্ভব।’
এ বিষয়ে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘মানুষ আত্মহত্যা কেন করে তাঁর কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ নেই। বিভিন্ন কারণে মানুষ এ পথ বেছে নেন। যার মধ্যে মানুষ মানুষের প্রতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারা, সামাজিক অবক্ষয়, বাল্যবিবাহ, পারিবারিক শিক্ষার অভাব, ধর্মীয় রীতিনীতির অভাব অন্যতম। এটা প্রতিরোধে জেলাব্যাপী আমরা সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের ধর্মীয় রীতিনীতি অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এ ছাড়া মানুষের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তাদের পুনর্বাসনসহ বিভিন্ন ধরনের সহায়তা নিয়ে কাজ করতে হবে। আর এ কাজগুলো আমাদের সবাইকে নিয়ে করতে হবে। কারও একার পক্ষে এটা প্রতিকার বা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না।’