লন্ডনে ট্রান্স অধিকার কর্মীদের বিক্ষোভে ‘অস্ত্র ধরার’ ডাক


ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক এক রায়ের প্রতিবাদে লন্ডনে আয়োজিত ‘ট্রান্স-প্লাস প্রাইড’ মিছিলে ট্রান্স অধিকারকর্মীরা নিজেদের অস্ত্রসজ্জিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। রায়টি জৈবিক লিঙ্গকে এমনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে, যা নারীর সংজ্ঞা থেকে ট্রান্স নারীদের বাদ দেওয়ার পথ তৈরি করে। রায়ে বলা হয়েছে—সমতা আইনে নারী তারাই, যাদের জৈবিক লিঙ্গ নারী, অর্থাৎ জন্মসূত্রে বা শারীরিকভাবে যারা নারী।
শনিবার অনুষ্ঠিত ওই মিছিলে এক কর্মীর হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল—‘নিজে করো, নয়তো মরো। ট্রান্সদের মুক্তি চাই। রংধনু পুঁজিবাদের ভণ্ডামি নয়। ট্রান্স মানুষকে অস্ত্র ধরতে দাও!’
আরেকটি প্ল্যাকার্ডে ছিল লেখক জে কে রাউলিং ও ‘ফর ওম্যান স্কটল্যান্ড’-এর নেতাদের ছবি। প্ল্যাকার্ডে তাঁদের ‘নরক থেকে আসা বিপজ্জনক নারী’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
আয়োজকদের মতে, এটি ছিল যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ট্রান্স বিক্ষোভ। প্রায় ১ লাখ মানুষ এতে অংশ নেন। এই বছরের মূল বার্তা ছিল ‘অস্তিত্ব ও প্রতিরোধ’। বিক্ষোভে রূপান্তর থেরাপি নিষিদ্ধকরণ, ট্রান্স স্বাস্থ্যসেবার জন্য সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়ন এবং নন-বাইনারি মানুষদের আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি তোলা হয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থা ‘সেক্স মেটারস’-এর অ্যাডভোকেসি পরিচালক হেলেন জয়েস বলেছেন, “ট্রান্স আন্দোলনে নারীদের প্রতি বিদ্বেষ স্পষ্ট। জে কে রাউলিং বা ‘ফর ওম্যান স্কটল্যান্ড’-এর মতো নারীরা যখন নারী-সীমা রক্ষা করতে চান, তখনই তাঁরা এই আন্দোলনের শত্রু হয়ে ওঠেন। ”
লন্ডন অ্যাসেম্বলির কনজারভেটিভ নেত্রী সুসান হল মন্তব্য করেন, ‘ট্রান্স কর্মীরা যদি অস্ত্রধারণের দাবি করেন এবং জন সম্মানীয় নারীদের নরকের দানব বলেন, তাহলে স্বাভাবিকভাবে তারা জনমনে সমর্থন হারাবেন।’
এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন লন্ডনের মেয়র সাদিক খান। তবে প্রধানমন্ত্রী ও লেবার নেতা স্যার কিয়ার স্টারমার সুপ্রিম কোর্টের রায়কে সম্মান জানিয়ে বলেন, ‘আইনের দৃষ্টিতে একজন নারী মানে জৈবিক নারী।’
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে অনেক ট্রান্স ব্যক্তি মনে করছেন তাঁদের অধিকার হ্রাস পেয়েছে। ‘ওয়ে আউট ক্লাব’-এর পরিচালক ভিকি লি বলেন, ‘ট্রান্স কমিউনিটি এখন ভীত, বিভ্রান্ত ও ক্ষুব্ধ। আমরা আর হার মানব না।’
লন্ডনে ‘ট্রান্স-প্লাস প্রাইড’ বিক্ষোভের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা লুইস জি বার্টন বলেছেন, ‘এই বছর আমরা ১ লাখেরও বেশি মানুষের অংশগ্রহণে ইতিহাস গড়েছি। ট্রান্স অধিকার খর্ব করার চেষ্টার মধ্যেও আমরা বলেছি—আমরা বিলুপ্ত হব না। আমরা মানবতার অংশ, আমাদের সমাজ থেকে মুছে ফেলা যাবে না।’