‘নিম্ন ও উচ্চ আদালতের বিচারকদের সম্পর্ক দাস-প্রভুর মতো’, ভারতীয় বিচারপতির ক্ষোভ


নিম্ন ও উচ্চ আদালতের বিচারকদের সম্পর্ক ‘সামন্তপ্রভুর অধীনে ভূমিদাসের মতো’। নিম্ন ও উচ্চ আদালতের বর্তমান ব্যবস্থা পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে কোনো বিচারিক স্তরবিন্যাসকে প্রতিফলিত করে না; বরং এটি এমন এক ব্যবস্থা, যেখানে ভয়, বশ্যতা ও মানসিক অধীনতা গভীরভাবে গেঁথে আছে।
নিম্ন আদালতে বরখাস্ত হওয়া একজন বিচারকের মামলার রায়ে এসব মন্তব্য করেন ভারতের মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের বিচারপতি অতুল শ্রীধরন।
রায়ে তিনি বলেন, ‘নিম্ন ও উচ্চ আদালতের বিচারকদের সম্পর্ক সামন্ত প্রভু ও ভূমিদাসের মতো। হাইকোর্টের বিচারকদের অভিবাদন জানানোর সময় জেলা বিচারকদের শারীরিক ভাষা এতটাই বিনয়ী থাকে, যা চাটুকারিতার কাছাকাছি। জেলা বিচারকেরা যেন অমেরুদণ্ডী স্তন্যপায়ী প্রাণীর একমাত্র শনাক্তযোগ্য প্রজাতি।’
আজ শনিবার এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রায়ে মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট নথিভুক্ত করে এমন ঘটনাও, যেখানে জেলা বিচারকেরা হাইকোর্টের বিচারকদের রেলস্টেশনে গিয়ে অভ্যর্থনা জানান এবং তাদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেন।
আদালত এ ধরনের কার্যকলাপকে ‘ঔপনিবেশিক অবক্ষয়’ এবং ‘অধিকারবোধ জিইয়ে রাখার অনুশীলন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
রায়ে বলা হয়, জেলা বিচারকেরা যখন হাইকোর্টের রেজিস্ট্রিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন, তখনো তাঁদের বসার জন্য চেয়ার দেওয়া হয় না। বিরল ক্ষেত্রে দেওয়া হলেও তাঁরা বসতে সংকোচ বোধ করেন।
মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট মনে করছে, এই কাঠামোগত বৈষম্য জেলা বিচারকদের মানসিক দাসত্বের দিকে ঠেলে দিয়েছে, যেখানে তারা সব সময় হাইকোর্টকে অখুশি না করার ভয়ে কাজ করে। এই ভয় বিচারব্যবস্থার ভিতকেই নাড়িয়ে দিয়েছে।
এর ফলে এমন এক বিচারিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে, যেখানে জামিন পাওয়ার যোগ্য মামলায়ও তা দেওয়া হয় না; যথেষ্ট প্রমাণ না থাকলেও দণ্ড দেওয়া হয়। উচ্চ আদালতের বিরাগভাজন হওয়ার ভয়ে বিচারকেরা অভিযুক্তকে অব্যাহতি দিতেও সাহস পান না।
কেবল জেলা ও হাইকোর্টের বিচারকদের সম্পর্কের সমালোচনাতেই থেমে থাকেনি মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের রায়; বরং জাতিভেদও টেনে আনা হয়।
হাইকোর্ট বলেছেন, ‘অবচেতন স্তরে এই রাজ্যের বিচারিক কাঠামোয় জাতিভেদের ছায়া স্পষ্ট, যেখানে হাইকোর্টের বিচারকেরা যেন সাবর্ণ (উচ্চবর্ণের হিন্দু; যারা ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য–এই তিন বর্ণভুক্ত) আর জেলা বিচারকেরা সেই ব্যবস্থার শূদ্র।’
এমন প্রাতিষ্ঠানিক ভয় নিম্ন আদালতের বিচারকদের মানসিক দুর্বলতার দিকে ঠেলে দেয়, যা শেষ পর্যন্ত তাদের বিচারিক কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে এবং আইনের শাসনকে হুমকির মুখে ফেলে—রায়ে এমন মন্তব্যও করা হয়।