ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া দেশের সংখ্যা কতটি


ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতিদানকারী দেশের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন তথ্য প্রচারিত হচ্ছে। তবে বার্তা সংস্থা এএফপি জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে অন্তত ১৪২টি রাষ্ট্রকে চিহ্নিত করেছে, যারা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এএফপির গণনায় ফ্রান্স অন্তর্ভুক্ত। কারণ, দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ গত বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছেন, সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হবে।
গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে অন্তত ১০টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছে। ২০২৪ সালে চারটি ক্যারিবীয় দেশ—বাহামাস, বার্বাডোজ, জ্যামাইকা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো এবং ইউরোপের পাঁচটি দেশ—আর্মেনিয়া, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে, স্লোভেনিয়া, স্পেন–ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
ফিলিস্তিনের কিংবদন্তি নেতা ইয়াসির আরাফাত ১৯৮৮ সালে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। জাতিসংঘে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্থায়ী পর্যবেক্ষক মিশন জানিয়েছিল, ১৩৯টি দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর সঙ্গে ২০২৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গৃহীত কূটনৈতিক পদক্ষেপগুলো যোগ করলে মোট সংখ্যা দাঁড়াবে ১৪৯।
এএফপি বিশ্বব্যাপী তার ব্যুরো নেটওয়ার্ক থেকে প্রাপ্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এবং প্রতিক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে এই সংখ্যা গণনা করেছে। তাতে দেখা গেছে, অন্তত চারটি দেশকে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত ছিল না। দেশগুলো হলো—চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরি, মাল্টা এবং পাপুয়া নিউ গিনি।
ভ্যাটিকানকেও কিছু গণনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু ভ্যাটিকানের জাতিসংঘের শুধুমাত্র পর্যবেক্ষক মর্যাদা আছে। এটি কোনো সদস্য রাষ্ট্র নয়। আফ্রিকার তিন দেশ—সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, ইথিওপিয়া ও টোগোর ক্ষেত্রে এএফপি ২৫ জুলাই পর্যন্ত কোনো নিশ্চিতকরণ তথ্য পায়নি।
অন্যদিকে, মেক্সিকো ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলেও এই তালিকায় অনুপস্থিত ছিল। ২০২৪ সালে মেক্সিকোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছিল, ‘ফিলিস্তিনের রাষ্ট্র হিসেবে মর্যাদাকে স্বীকৃতি দেওয়ার আইনি প্রভাব ফেলে এমন পদক্ষেপকে মেক্সিকো দীর্ঘদিন ধরে সমর্থন করে আসছে।’
সুতরাং, এএফপির হিসাব অনুযায়ী—গাজায় যুদ্ধ শুরুর আগে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া রাষ্ট্রের সংখ্যা গণনা করা হচ্ছিল ১৩৯টি, তবে এই তালিকার মধ্যে চারটি বাদ পড়েছে। অর্থাৎ, মোট সংখ্যা ছিল আসলে ১৩৫। এ ছাড়া, তিনটি রাষ্ট্রের স্বীকৃতি এখনো নিশ্চিতকরণ করতে না পারায় সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩২ টিতে। একই সঙ্গে ভ্যাটিকানকে বাদ দিলে তা হয় ১৩১। কিন্তু মেক্সিকো ও নতুন স্বীকৃতি দেওয়া ১০ দেশ যোগ করলে মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪২ টিতে।
তালিকায় থেকে বাদ পড়া চারটি রাষ্ট্রের মধ্যে দুটি ভেঙে যাওয়া ‘ইস্ট ব্লকের’ দেশ ছিল। সেগুলো হলো—হাঙ্গেরি ও চেক প্রজাতন্ত্র। যারা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয় না অথবা এখন আর দিচ্ছে না। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্তর অরবান ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ মিত্র। অরবান গত বছর বলেছিলেন, তাঁর দেশ ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার সঙ্গে একমত নয়।’
চেক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এএফপিকে জানিয়েছে, তাদের সরকার ‘এখনো ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।’ তারা জানিয়েছে, ১৯৮৮ সালে সরকার ‘শুধুমাত্র ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ঘোষণার কাজটিকেই স্বীকৃতি দিয়েছিল…তবে এর অর্থ রাষ্ট্রত্বের স্বীকৃতি নয়।’
পাপুয়া নিউগিনির পররাষ্ট্রসচিব ইলিয়াস ওহেংগু এএফপিকে বলেছেন, তিনি ‘ফিলিস্তিনের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক স্থাপনের জন্য তাঁর দেশের কোনো অবস্থানের বিষয়ে অবগত নন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ফিলিস্তিন কখনো একটি জাতি ছিল না।’ দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাস্টিন টিকাটচেঙ্কো জানিয়েছেন, তাঁর দেশ ‘ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয় এবং এই মুহূর্তে সেখানেই এটি স্থির আছে।’
চারটি দেশের মধ্যে বাকি থাকা মাল্টা, আয়ারল্যান্ড, স্পেন এবং স্লোভেনিয়ার সঙ্গে মিলে ২০২৪ সালের মার্চে এক যৌথ বিবৃতিতে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছিল। কিন্তু অন্য তিনটি দেশ কয়েক মাস পরে সেই পদক্ষেপগুলো নিলেও, মাল্টা এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি।