শিরোনাম

মধ্য বয়সে জেগে উঠুন

মধ্য বয়সে জেগে উঠুন

পঞ্চাশের পর নিজেদের গুটিয়ে নেওয়া বেশিরভাগ নারীর সাধারণ প্রবণতা। খুব কম সংখ্যার নারীরা নিজেদের বিকশিত রাখতে পছন্দ করে। তবে বয়সের কারণে গুটিয়ে না গিয়ে নিজেদের বিকশিত করার এই প্রবণতা এখন কিছুটা বেড়েছে বলা চলে। এই বিষয়টিকে বলা হচ্ছে ‘মিডলাইফ গ্লো আপ’। বাংলায় একে বালা যায় ‘মাঝবয়সের নয়া দীপ্তি’।

আত্মবিশ্বাস, অভিজ্ঞতা, নতুন উদ্দেশ্য ও নিজের প্রতি যত্ন নেওয়ার মিলিত রূপকেই বলা হচ্ছে গ্লো আপ। ব্রিটেনের নারীদের মধ্যে মাঝ বয়সের এই নতুন ঝলক বাড়ছে। বলা যায়, মাঝবয়সে জীবনবোধ নতুন করে বাড়ছে তাদের। ব্রিটেনের ৫০ বছরের বেশি বয়সী নারীদের মধ্যে দেখা গেছে, প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৭ জনই এখন মিডলাইফ গ্লো আপ বা জীবনের মাঝবয়সে এসে এক ধরনের নতুন জাগরণ অনুভব করছে। তাদের মধ্যে অনেকেই ব্যবসা শুরু করেছেন, ভ্রমণ করছেন এবং উল্লেখযোগ্য ভাবে নজরে পড়ছে, এ বয়সের নারীদের মধ্যে উপন্যাস লেখার প্রবণতা বাড়ছে!

মধ্যবয়স কোনো কিছুর শেষের শুরু নয়। বরং এটি একটি অসাধারণ নতুন অধ্যায়ের সূচনা। তবুও, মেনোপজ ও বার্ধক্যের পথ পেরিয়ে যাওয়ার সময় সমাজ নারীদের মনে করিয়ে দেয়, তাদের সেরা দিনগুলো পেছনে পড়ে গেছে। অথচ বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। এটাই সময় নিজেকে নতুনভাবে দেখার, নিজের শরীরের যত্ন নেওয়ার পদ্ধতি বদলানোর এবং পৃথিবীর সামনে নিজেকে নতুন করে উপস্থাপন করার।

ফোর্ড মানি নামক একটি ওয়েবসাইটের এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, ৫০ ও ৬০ বছর বয়সী নারীরা জীবনের এই পর্যায়টিকে পরিবর্তনের, নিজেকে নতুন করে গড়ে তোলার এবং আরও পরিপূর্ণভাবে বেঁচে থাকার সুযোগ হিসেবে দেখছে। ব্রিটেনের একদল গবেষক ৫০ বছরের বেশি বয়সী নারীদের জিজ্ঞেস করেছিলেন, তারা জীবনে কী কী অর্জন করতে এবং অভিজ্ঞতা নিতে চায়। তাঁদের জরিপে উঠে এসেছে, বয়সী নারীরা ভ্রমণকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। আর ভ্রমণের এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে উত্তরীয় আলো বা নর্দান লাইটস দেখা। গবেষণায় অংশ নেওয়া ৫৪ শতাংশ নারী তাদের এই ইচ্ছের কথা প্রকাশ করেছে। ৪৮ শতাংশ নারী ভ্রমণ করতে চায় ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেসে। আর ৩১ শতাংশের ইচ্ছা নায়াগ্রা ফলস দেখার। এই ভ্রমণপ্রিয়তা থেকেই হয়তো ৩০ শতাংশ নারী নতুন ভাষা শিখতে চায় এবং ১৮ শতাংশ নারী অন্য দেশে বাস করতে চায়।

ছবি: পেক্সেলস
ছবি: পেক্সেলস

তবে কিছু নারী দেশে থেকেই সুখ খুঁজতে চায়। তাদের সংখ্যাও খুব কম নয়, ১৯ শতাংশ। এই নারীদের স্বপ্ন বাড়ির সামনে একটি নিখুঁত বাগান তৈরি করা। উপন্যাস লিখতে চাওয়া নারীদের সংখ্যা ১৮ শতাংশ। ১০ শতাংশ নারী নিজেদের ব্যবসা শুরু করতে চায়। এমনকি ১৬ শতাংশ নারী স্বেচ্ছাসেবায় অংশ নিতেও আগ্রহী। নারীদের ২৭ শতাংশ স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, তারা শুধু আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হতে চায়। এই গবেষণায় ৫০ এর বেশি বছর বয়সী ২ হাজার ব্রিটিশ নারী অংশগ্রহণ করেছিল। অংশগ্রহণকারী নারীদের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ মনে করে, এই সময়টি মিড-লাইফ ক্রাইসিস নয়, বরং এটি গ্লো আপ বা উন্নতির সময়।

দুই-তৃতীয়াংশ বা ৬১ শতাংশ নারী বলেছেন, পঞ্চাশে পা দেওয়ার পর তাদের জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে। তারা জীবনকে অন্যভাবে গুছিয়ে নিয়ে নতুন করে ভাবছে। আবার তিন-চতুর্থাংশ বা ৭৪ শতাংশ নারী এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সন্তুষ্ট। নিজেকে নিয়ে ভাবা শুরু করা এই আত্মবিশ্বাসের কারণ বলে জানিয়েছে তারা। এই নারীদের মধ্যে অনেকেই জানিয়েছে, অন্যরা কী ভাবছে তা নিয়ে তারা এখন কম চিন্তা করছে। এদের মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য অংশ নারী নিজেকে বেশি সময় দেয়।

এই গবেষণায় অংশ নেওয়া প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ নারী মনে করে, আগের প্রজন্মের তুলনায় এখনকার ৫০ বছরের বেশি বয়সী নারীরা অনেক বেশি সক্রিয় ও দুঃসাহসী। এমনকি ১১ শতাংশ নারী তাদের শরীরে ট্যাটু করাতে চান। গবেষণা অনুযায়ী, প্রায় অর্ধেক বা ৪৮ শতাংশ নারী এখন নিয়মিতভাবে অর্থ সঞ্চয় করছে।

ফোর্ড মানি নামের প্রতিষ্ঠানটির সেভিংস সার্ভিসের অপারেশন ম্যানেজার মোন্না প্যাটেল জানিয়েছেন, এই ফলাফলগুলো স্পষ্ট করে, ৫০ বা ৬০ বছর বয়স মানেই এখন আর ‘অবসরের সময়’ নয়। আজকের প্রজন্মের নারীরা এই সময়টাকে গভীর আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গ্রহণ করছেন– যাঁদের লক্ষ্য ভ্রমণ, সম্পত্তি কেনা ও আর্থিক স্বাধীনতা অর্জন করা। সঞ্চিত অর্থ অনেকের জন্য এই আকাঙ্ক্ষাগুলো বাস্তবায়নের চাবিকাঠি। মোন্না প্যাটেল বলেন, ‘এটা শুধু একটা নিরাপত্তা বলয় নয়; এটা এমন এক শক্তি, যা আমাদের নিজেদের মতো করে জীবন যাপন করার স্বাধীনতা দেয়।’

মধ্যবয়সের গ্লো-আপ মানে তারুণ্য ধরার চেষ্টা নয়। বরং এটি হলো নিজের ভেতর থেকে আত্মবিশ্বাস, প্রাণশক্তি ও আত্মমর্যাদার দীপ্তি ছড়িয়ে দেওয়া।

সূত্র: এম এস এন



আরও দেখান
Back to top button