সোনামসজিদ বন্দরে আমদানি কম, রাজস্ব ঘাটতি ২১৪ কোটি


দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দরে টানা তিন অর্থবছর ধরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১৪ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফল ও কৃষিপণ্য আমদানি বন্ধ থাকায় এবং দুই দেশের সম্পর্কের টানাপোড়েনে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
কাস্টমস সূত্র জানায়, গত অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ১২২ কোটি ৪১ লাখ টাকা। তবে আদায় হয়েছে মাত্র ৯০৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৯ দশমিক ১২ শতাংশ কম। পুরো অর্থবছরে কেবল মে মাসেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়ানো সম্ভব হয়েছে।
এর আগের দুই অর্থবছরেও ঘাটতি ছিল বড় অঙ্কের। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪১৮ কোটি এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৬৩ কোটি টাকা।
বন্দরের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফল, কৃষিপণ্য, পাথর ও গুড়ের মতো পণ্যের আমদানি একদিকে যেমন কমেছে, অন্যদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ডলার সংকট ও অবকাঠামোগত দুর্বলতা আমদানি-রপ্তানির গতি কমিয়ে দিয়েছে।
আমদানিকারক আব্দুল বাতেন আলী বলেন, ‘ডলার সংকট থাকায় এলসি করতে প্রচুর বেগ পেতে হয়েছে বিগত অর্থবছরে। এ ছাড়া দুই দেশের সরকারের মধ্যেও সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক ছিল না। তবে ধীরে ধীরে সম্পর্ক স্বাভাবিক হচ্ছে। আশা করছি, নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় গেলে আবারও আগের মতো আমদানি-রপ্তানিতে প্রাণচঞ্চল ফিরে আসবে।
সোনামসজিদ আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি মো. একরামুল হক বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক খারাপ হওয়া আর দেশের পরিস্থিতির কারণে বেচাকেনা ভালো হচ্ছে না। এ ছাড়া এ বন্দরে ফল না আসারও অন্যতম কারণ রাজস্ব ঘাটতি। আর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ফল আমদানি হলে পরিবহন খরচ কম হচ্ছে। এ ছাড়া পেঁয়াজ, নারকেল, আলু এসব পণ্যের আমদানি অনুমতিপত্র (আইপি) বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। আর গুড় আগের থেকে কম এলেও বিএসটিআই পরীক্ষা করতে ৭ থেকে ৮ দিন সময় লাগিয়ে দিচ্ছে। এসব কারণেই রাজস্ব ঘাটতি হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট বলেন, বর্তমানে শুধু পাথরের স্থলবন্দরে পরিণত হয়েছে সোনামসজিদ স্থলবন্দর। কারণ এখানকার কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ও পানামা পোর্টলিংক লিমিটেডের অসহযোগিতার কারণে এই স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি করতে চান না আমদানিকারকেরা। এ ছাড়াও অবকাঠামোগত সমস্যা ও যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমেছে।
সোনামসজিদ স্থলবন্দর কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নুরুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার আমদানিনির্ভরতা কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। যে কারণে আলু, পেঁয়াজ ও গুড়সহ কৃষিপণ্য না আসায় রাজস্ব ঘাটতির অন্যতম কারণ। এ ছাড়াও রাজস্ব আদায় বেশি হওয়া মানে আমাদের দেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা চলে যাওয়া। চলতি বছর দেশে বিভিন্ন কৃষিপণ্য বিশেষ করে পেঁয়াজ, আলুসহ নিত্যপণ্যের দাম নাগালের মধ্যে ছিল। ফলে তা আমদানির প্রয়োজন পড়েনি। এতেই রাজস্ব আদায় কম হয়েছে।’