বরিশালে নাহিদের সামনেই এনসিপির মতবিনিময়ে হট্টগোল


ক্রাইম জোন ২৪।। বরিশালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) সন্ধ্যায় বরিশাল ক্লাব মিলনায়তনে দলীয় এক মতবিনিময় সভার সময় এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ইফতারের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা ও মহানগর কমিটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করছিলেন নাহিদ ইসলাম। এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল মহানগর কমিটির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম শাহেদ এবং জেলা কমিটির সদস্য সচিব এস এম ওয়াহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তোলেন সাধারণ কর্মীরা।
কর্মীদের অভিযোগ, সংগঠনের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা একক সিদ্ধান্ত নিয়ে সংগঠন চালাচ্ছেন, সাধারণ সদস্যদের কথা শোনা হচ্ছে না। এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে উপস্থিত নেতাকর্মীরা তিনভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন এবং একপর্যায়ে তর্কবিতর্ক হাতাহাতিতে রূপ নেয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে মাইকে সবাইকে সংযত হতে বলেন নাহিদ ইসলাম। কিন্তু উত্তেজিত কর্মীরা তা উপেক্ষা করে স্লোগান দিতে থাকেন এবং মিলনায়তনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে পুলিশ হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা চালায় এবং নাহিদ ইসলামকে নিরাপদে বের করে আনে।
ছাত্রনেতা হৃদয় বলেন, “বরিশাল জেলা ও মহানগরের বৈষম্যবিরোধী কমিটিতে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তারা বিভিন্ন অন্যায় করেছেন। তারা ছাত্র পরিচয় দিয়ে ফায়দা নিয়েছেন। আমরা আজকে তাদের নৈরাজ্য দলীয় প্রধানের কাছে তুলে ধরতে চেয়েছি, কিন্তু আমাদের বাধা দেওয়া হয়েছে। আমরা নাহিদ ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম, সেটাও করা যায়নি।”
আরেক নেতা জোবায়ের কাইয়ূম বলেন, “শাহেদ ভাই ও ওয়াহিদুর রহমান ভাই নিজেদের মতো করে সংগঠন চালান। সাধারণ কর্মীদের কোনো মূল্যায়ন করা হয় না। আমরা চাই সংগঠনের সব সদস্যদের মতামত গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হোক।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা ফেসবুক গ্রুপে, মেসেঞ্জারে আমাদের মতামত জানাতে চাইলেও আমাদের বের করে দেওয়া হয়। আজ আমরা ৫ মিনিট কথা বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সেই সুযোগও দেওয়া হয়নি।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল মহানগর কমিটির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম শাহেদ বলেন, “অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে কিছু অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছিল। তারা পরিকল্পিতভাবে নাহিদ ইসলামকে অপমান করার চেষ্টা করেছে। এর প্রতিবাদে আমরা নগরীতে বিক্ষোভ করেছি।”
বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, “আমাদের টহল টিম বরিশাল ক্লাব সংলগ্ন এলাকায় ছিল। হট্টগোল শুনে সেখানে গিয়ে দেখি ক্লাবের মূল ফটক আটকে রেখেছে কিছু নেতাকর্মী। পরে পুলিশ গেট খুলে দিলে নাহিদ ইসলামকে বহনকারী গাড়িসহ মোট তিনটি গাড়ি নিরাপদে বেরিয়ে যায়।”
এই ঘটনার পর বরিশালে এনসিপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নতুন করে আলোচনায় এসেছে। আগামীতে পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেওয়া হবে, তা নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ রয়েছে।