ট্রাম্পের কেন এত পাকিস্তান প্রেম, ভারতের ওপর কিসের ক্ষোভ


বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে দ্রুত উত্থান, মার্কিন কৌশলগত নীতির কারণে ভারত মহাসাগর অঞ্চলে ওয়াশিংটনের কাছে দিল্লির একটা আলাদা গুরুত্ব সব সময়ই ছিল। এতে ভারতের আত্মবিশ্বাস ও আঞ্চলিক প্রভাব অনেক বেড়েছে। বিশ্বমঞ্চে ভারতের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে দিল্লি যখন এগিয়ে যাওয়ার মঞ্চ প্রস্তুত করছে, ঠিক তখনই বিনা মেঘে বজ্রপাত! হঠাৎ করেই ‘মোদির বন্ধু ট্রাম্প’ বৈরী আচরণ করতে শুরু করেছেন!
ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং ভারতকে একাধিকবার ‘বন্ধু’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। সরাসরি সাক্ষাতে, বক্তৃতায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিবৃতিতে তিনি এই শব্দটি উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সেই বন্ধুর ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেন! পাশাপাশি, শাস্তি স্বরূপ ভারতের ৬ কোম্পানির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করা হয়েছে। ট্রাম্পের বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, তাঁর দেশ শুল্ক আলোচনার ক্ষেত্রে ভারতকে কোনো ছাড় দেবে না।
নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে শেয়ার করা পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের ব্যবসা খুবই কম। কারণ, তাদের শুল্কহার বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ। রাশিয়ার সঙ্গেও আমাদের বাণিজ্য নেই বললেই চলে এবং এভাবেই থাকুক।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘ভারত রাশিয়ার সঙ্গে কী করছে, আমার কিছু আসে যায় না। তারা চাইলে তাদের মরা অর্থনীতি একসঙ্গে ডোবাতে পারে!’
অপরদিকে পাকিস্তান আজ বৃহস্পতিবার বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বহু প্রতীক্ষিত বাণিজ্য চুক্তি দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার এক নতুন যুগের সূচনা করেছে, বিশেষ করে জ্বালানি, খনিজ ও আকরিক, তথ্যপ্রযুক্তি, ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং অন্যান্য খাতে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার ঘোষণা করেছেন, তাঁর প্রশাসন পাকিস্তানের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি করেছে, যার মধ্যে দেশটির ‘বিশাল’ খনিজ তেল রিজার্ভের যৌথ উন্নয়ন অন্তর্ভুক্ত।
চুক্তির অতিরিক্ত বিস্তারিত তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।
ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্র কেন ভারতকে দূরে ঠেলে পাকিস্তানকে কাছে টানছে, সে বিষয়ে বিশ্লেষকেরা একাধিক মত দিয়েছেন। এর মধ্যে, একটি হতে পারে—ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ। ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, দ্রুতই এই যুদ্ধ থামাবেন। কিন্তু ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রায় ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও কিছুই হয়নি।
ট্রাম্প রাশিয়াকে নানাভাবে সুবিধা দেওয়ার কথা দিয়ে, হুমকি দিয়ে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পুতিন কর্ণপাত করেননি। এমনকি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাও রাশিয়ার অর্থনীতিকে খুব একটা চাপে ফেলতে পারেনি। বিশেষ করে, ভারতের মতো দেশগুলো রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কিনতে থাকায় পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা অনেকটাই প্রশমিত হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্প কোনো লুকোছাপাও করেননি। তিনি আরও বলেছেন, ‘ভারত রাশিয়ার সঙ্গে কী করছে, আমার কিছু আসে যায় না। তারা চাইলে তাদের মরা অর্থনীতি একসঙ্গে ডোবাতে পারে!’ তবে এই অবস্থায় পাকিস্তানের সঙ্গে জ্বালানি চুক্তির ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প কী বোঝাতে চাইলেন তা স্পষ্ট নয়। তবে ভারতীয় বিশ্লেষক চন্দ্রশেখর শ্রীনিবাসনের মতে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সঙ্গে যে তেল চুক্তি করেছে তার উদ্দেশ্য আসলে টাকা নয়, বরং ভারতের ওপর চাপ তৈরি করা।
তিনি বলেন, ‘ওয়াশিংটনের চাওয়া, ভারত যেন রাশিয়ার তেলের বদলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল কেনে। যদিও মোদি আগে যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে তেল কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ভারত এখনো রাশিয়ার বড় ক্রেতা। এটা ট্রাম্পকে খুশি করেনি। পাকিস্তানকে সাহায্য করে যুক্তরাষ্ট্র আসলে ভারতকে বার্তা দিচ্ছে—যদি আমাদের কথা না মানো, তবে তোমার শত্রুকেই আমরা শক্তি দেব।’
বিশ্লেষকদের ধারণা, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারতের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার অন্যতম আরেক বড় কারণ, গত মে মাসে চলা চার দিনের যুদ্ধ। এই যুদ্ধ বন্ধে নিজের কৃতিত্ব দাবি করেন। পাকিস্তান তাঁর এই দাবির সঙ্গে তাল মেলালেও ভারত কঠোর ভাষায় বিরোধিতা করেছে। ভারত জোর দিয়ে বলেছে, যুদ্ধবিরতি কেবল দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমেই হয়েছে। এখানে তৃতীয় পক্ষের কোনো ভূমিকা ছিল না। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছিলেন, নরেন্দ্র মোদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন এবং নয়াদিল্লি এই অবস্থান তুলে ধরেছেন যে, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো মধ্যস্থতা ছিল না।
তবে ভারতকে ছেড়ে পাকিস্তানকে আরও কাছে টানার ব্যাপারে ট্রাম্পকে আকৃষ্ট করেছে আরও একটি বিষয়। ওয়াশিংটনভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পলিট্যাক্টের প্রধান কৌশলবিদ আরিফ আনসার বলেন, ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভূমিকা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আগ্রহী করে তোলে।
আরিফ আনসার বলেন, ‘রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা থাকলেও পাকিস্তান প্রমাণ করেছে—তারা বড় প্রতিপক্ষকে কৌশলে টপকে যেতে পারে। এই কারণেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পাকিস্তানের ঐতিহ্যবাহী ক্ষমতাকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে কৌশলগত স্বার্থে যোগাযোগ শুরু করেছেন।’
এই বিষয়টির পক্ষে প্রমাণও মেলে। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধ শেষ হওয়ার কয়েক দিনের মাথায় পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে হোয়াইট হাউসে আতিথ্য দেন, যা ইতিহাসে নজিরবিহীন। নিকট অতীতে তো বটেই, সুদূর অতীতেও হোয়াইট হাউসে অন্য দেশের হাতে গোনা কয়েকজন সেনাপ্রধানকে আতিথ্য দেওয়া হয়েছে।
এই বিষয়ে সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের অধ্যাপক রেজা আহমদ রুমি বলেছেন, ‘পাকিস্তানের সেনাপ্রধানকে ট্রাম্পের মধ্যাহ্নভোজের আমন্ত্রণ শুধু প্রথা ভাঙা নয়, এটা প্রথার সংজ্ঞাই বদলে দিচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটা স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, পাকিস্তান এখন শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নজরেই নেই, তারা ঘনিষ্ঠ পরিসরে চলে এসেছে—অন্তত এই মুহূর্তে।’
অবশ্য, যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তানের এই সম্পর্কের ইতিহাস পুরোনো। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকেই পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল। স্নায়ুযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ওয়াশিংটনের পক্ষ নেয়। এরপর সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান দখল করলে, পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে আফগান মুজাহিদীনদের সহায়তা করে। এই সহযোগিতার ফলে সোভিয়েত সেনারা আফগানিস্তান থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়।
এরপর ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে টুইন টাওয়ারে হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র যখন সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে নামে, তখনো পাকিস্তান পাশে দাঁড়ায়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের ওপর আস্থা হারাতে থাকে। বিশেষ করে, ২০১১ সালে ৯ / ১১ হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ওসামা বিন লাদেনকে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ শহরে পাওয়া যাওয়ার পর। শহরটি রাজধানী ইসলামাবাদের কাছেই।
এরপর, ২০২১ সালের আগস্টে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ফেরার পর যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান কৌশলগত সম্পর্ক আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। এরপর থেকে পাকিস্তান অর্থনৈতিক, সামরিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তার জন্য ক্রমেই চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের গোয়েন্দা ও গবেষণা ব্যুরোতে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান বিষয়ক বিশ্লেষক ওয়াইনবাম বলেন, ট্রাম্প ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে যে সম্মান পাচ্ছে, তা বাইডেন প্রশাসনের সময় পায়নি। ওয়াইনবামের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘ট্রাম্প সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে সহায়তা চেয়েছিলেন—এবং তা পেয়েছেনও।’
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ‘আইসিং অন দ্য কেক’ বা আকর্ষণীয় সংযুক্তি হিসেবে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রকে আরও কিছু সুবিধা দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ওয়াইনবাম। এর মধ্যে আছে—শুল্কমুক্ত বাণিজ্য চুক্তি, বিরল খনিজ সম্পদ দেওয়ার প্রস্তাব এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কিত সুযোগ। প্রতিরক্ষা, রোবোটিকস ও ইলেকট্রনিকস শিল্পে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ বিরল খনিজ এখন পাকিস্তান বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য উন্মুক্ত করছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের কথাও রয়েছে।
পাকিস্তান সম্প্রতি একটি ‘ক্রিপ্টো কাউন্সিল’ গঠন করেছে। এই খাতে বিনিয়োগ ও অংশীদারত্ব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। রেজা আহমেদ রুমি সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠককে ‘ঐতিহাসিক’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র চায় পাকিস্তান যেন আঞ্চলিক অস্থিরতা কমাতে সাহায্য করে, অথচ এর বিনিময়ে খুব বেশি কিছু দিচ্ছে না। মুনিরের জন্য এটা নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার সুযোগ এবং দেশের ভেতরে নিজের অবস্থান আরও মজবুত করার কৌশল হতে পারে।’
যাই হোক, ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র যে, পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে এ বিষয়ে বোধহয় আর কোনো সন্দেহ নেই। সে ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক কেমন হবে, বা কোন দিকে মোড় নেবে সেটিও ধর্তব্যে আনার বিষয়। যদিও এখনই নিশ্চিত করে বলা মুশকিল যে, পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার ফলে চীনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কেমন হবে। কারণ, পাকিস্তানে চীনের কৌশলগত, অর্থনৈতিকসহ নানা বিনিয়োগ আছে। এমনকি, যে যুদ্ধে পাকিস্তান ভারতের ওপর আধিপত্য দেখিয়েছে, তাতেও চীনের সরাসরি অবদান আছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
পাকিস্তানকে যুদ্ধবিমান তৈরিতে প্রযুক্তি সহায়তা করছে চীন। দেশটিতে বিভিন্ন প্রকল্পে বিপুল বিনিয়োগ করেছে। আরব সাগরের তিরের গদর বন্দর প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ আছে। কারাকোরাম পর্বতের বুক চিরে পাকিস্তান থেকে চীন পর্যন্ত ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার মহাসড়ক দুই দেশকে সংযুক্ত করেছে। কেবল তাই নয়, পাকিস্তান বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে চীনকে আকসাই চীন সংলগ্ন এলাকায় বিশাল ভূখণ্ড উপহার দিয়েছে। ফলে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক চীন কীভাবে নেবে—সেটিও ভাবনার বিষয়।
এই অবস্থায়—যুক্তরাষ্ট্র যদি পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয় তাহলে কি ভারত চীনের দিকে ঝুঁকে পড়বে? এই প্রশ্ন জাগাটাই স্বাভাবিক। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে এক সময় বন্ধুত্বের সম্পর্ক দেখা গেলেও, সম্প্রতি ভারত যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিছুটা কঠোর অবস্থান নিচ্ছে। একাধিক ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তা ও শিল্পগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা ধীর গতিতে চলছে।
চলতি বছরের জুনে কানাডায় জি-৭ সম্মেলনের পর ট্রাম্প মোদিকে যুক্তরাষ্ট্র সফরের আমন্ত্রণ জানালেও, মোদি তা প্রত্যাখ্যান করেন। এ মাসের শুরুতেই ভারত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা শুল্ক আরোপের অভিযোগ দিয়েছে। এতে স্পষ্ট, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনা মসৃণভাবে চলছে না, বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনার পর।
ভারত এখন ট্রাম্পের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্ক রাখবে, তা বুঝে ওঠার চেষ্টা করছে এবং বিকল্প হিসেবে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাইয়ের কথা বিবেচনা করছে—এমন মন্তব্য করেছেন ভারতের থিংক ট্যাংক ‘অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের’ বৈদেশিক নীতিবিষয়ক প্রধান হর্ষ পন্ত। তিনি বলেন, ‘নিঃসন্দেহে চীনের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ বাড়ছে। এবং এটি দ্বিপক্ষীয়—চীনও ভারতের দিকে হাত বাড়াচ্ছে।’
কিছুদিন আগে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ২০২০ সালে ভারত-চীন সীমান্তে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর প্রথমবারের মতো বেইজিং সফর করেন। ২০২০ সালের সংঘর্ষের পর চীনা বিনিয়োগে যে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিল, ভারত এখন তা কিছুটা শিথিল করার পদক্ষেপ নিচ্ছে।
যদিও চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বরাবরই টানাপোড়েনের এবং চীন পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও সামরিক সহায়তাকারী, তবুও ভারতের পক্ষ থেকে কিছুটা নমনীয়তা দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প চীনের সঙ্গে কখনো কঠোর, আবার কখনো নরম অবস্থান নেওয়ায় ভারত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালবানি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক ক্রিস্টোফার ক্লারি বলেন, ‘হোয়াইট হাউসে এমন একজন খেয়ালি নেতার অবস্থান থাকায় ভারত মনে করছে, চীন-যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠতেই পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভারত চিন্তিত যে, চীন শুধু পাকিস্তানকেই সহায়তা করছে না, বরং বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোতেও তার প্রভাব বাড়ছে। তবে ভারত এখন চীনের ওপর সরাসরি চাপ না দিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতেই কৌশলগত চাপ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
লেখক: আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, আরব নিউজ ও এনডিটিভি