বরিশালে পুলিশের ছত্রচ্ছায়ায় রমরমা জুয়ার ব্যবসা
প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ


বরিশাল নগরীতে রাত নামতেই জমে ওঠে জুয়ার আসর। চায়ের দোকান কিংবা ক্লাবে নয়, বরং অভিজাত হোটেলগুলোতে গোপনে চলে এই অবৈধ কার্যক্রম। স্থানীয় ও বাইরের জুয়ারিরা এসব হোটেলে নিয়মিত জড়ো হন, যেখানে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার লেনদেন হয়।
কিন্তু সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এই জুয়ার আসরগুলোতে পুলিশের সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে আমানতগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির কনস্টেবল কাদের এবং কিছু কথিত সাংবাদিকের সম্পৃক্ততা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
গোপন অনুসন্ধানে জানা গেছে, বরিশালের অভিজাত হোটেলগুলোর কক্ষে প্রতিদিন নানা ধরণের জুয়ার আয়োজন হয়। গত রবিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে গির্জা মহল্লার হোটেল ইম্পেরিয়ালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশের উপস্থিতিতেই সেখানে ‘ওয়ান-টেন বোর্ড’ নামে একটি জুয়া খেলা চলছে। হোটেলের কর্মচারীরা প্রথমে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও পরে স্বীকার করেন যে, কনস্টেবল কাদের নিয়মিত এখানে আসেন এবং একাধিক কক্ষে সময় কাটান।
এই জুয়া খেলায় নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পিন গেঁথে টাকা জেতার সুযোগ থাকলেও বাস্তবে অধিকাংশ খেলোয়াড় সর্বস্বান্ত হয়েই ফিরে যান। অভিযোগ রয়েছে, নগরীর বেশ কয়েকটি অভিজাত হোটেলেও একই ধরনের অবৈধ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে কনস্টেবল কাদেরের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে আমানতগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কুদ্দুস বলেন, “কাদের যদি তার ডিউটি শেষে ব্যক্তিগত কোনো কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকেন, তবে এর দায়ভার আমরা নেব না।”
অন্যদিকে, কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, “এ বিষয়ে আগে জানতাম না, তবে একজন আমাকে জানিয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সচেতন নাগরিকরা দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। তাদের মতে, “যদি অবৈধ জুয়ার আসর বন্ধ করা না হয়, তবে যুবসমাজ আরও অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হবে। পুলিশের ছত্রচ্ছায়ায় যদি অপরাধ সংগঠিত হয়, তবে সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচার কোথায় পাবে?”
এখন প্রশ্ন উঠছে— প্রশাসন কি সত্যিই কঠোর ব্যবস্থা নেবে, নাকি বরিশালে জুয়ার এই অবৈধ সাম্রাজ্য আরও বিস্তার লাভ করবে?