দেড় দশক পর হকারমুক্ত সড়ক

প্রায় দেড় দশক পর হকারমুক্ত হয়েছে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের জুরাইনের সড়ক। একসময় অপ্রশস্ত সড়কটি পদ্মা সেতু নির্মাণের কারণে হয়ে ওঠে দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকায় প্রবেশের পথ। যানবাহনের চাপ বাড়ায় সড়কটি বেশ প্রশস্ত করা হলেও অর্ধেক চলে যায় হকারদের দখলে। এতে জুরাইন রেলগেট এলাকায় দিনরাতে যানজট লেগেই থাকত।
সেই সড়ক হকারমুক্ত হয়েছে গত ২৪ আগস্ট। বিশেষ মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট মো. শরিফুল ইসলাম ওই হকার উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেন। এলাকাবাসী জানান, কিছু চাঁদাবাজের সহায়তায় প্রায় ১৫ বছর ওই হকাররা সড়ক দখল করে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করছিলেন। এর আগে কয়েক দফা উচ্ছেদ করা হলেও হকাররা আবার সড়কে বসেছিলেন।
সরেজমিন দেখা যায়, জুরাইনে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের উড়ালসড়কের নিচেই এই সড়কের বিক্রমপুর প্লাজার সামনে থেকে আলম সুপার মার্কেট পর্যন্ত অংশে তেমন হকার নেই। ফলে প্রশস্ত সড়কে যানবাহন ও পথচারীদের চলাচল অনেকটা নির্বিঘ্ন। কমেছে যানজট। তবে বিক্রমপুর প্লাজার এক পাশ থেকে মেডিকেল রোড ছাড়িয়ে সড়কের ওপর এখনো হকারদের বসতে দেখা যায়।
জুরাইনের বাসিন্দা সোহেল বলেন, অনেক বছর পর এবার হয়তো প্রধান সড়ক থেকে স্থায়ীভাবে হকার উচ্ছেদ হলো। এ জন্য প্রশাসনকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাগুলোর দাঁড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট লেন করে দিলে যানজট আরও কমবে।
আব্বাস নামের এক পথচারী বলেন, এটি ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হলেও উভয় পাশে হকাররা প্রায় অর্ধেক দখল করে দোকান বসানোয় যানজট হতো। ঠিকমতো হাঁটাও যেত না। এখন অনেকটা স্বস্তি এসেছে। তিনি এখনো সড়কে যেসব হকার বসছে, তাদের উচ্ছেদের দাবি জানান। তাঁর আশঙ্কা, হকার না তুলতে ধীরে ধীরে অন্যরাও বসা শুরু করবে।
সেখানে উপস্থিত হেলালসহ কয়েকজন হকার বলেন, সড়কে বসা অন্যায়, এটা তাঁরাও জানেন। পেটের দায়ে তাঁরা সড়কে বসতেন। উচ্ছেদের পর পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। অন্য কোথাও বসার ব্যবস্থা করে দিতে প্রশাসনের প্রতি তাঁরা অনুরোধ জানান।
পুলিশ জানায়, ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (ক্রাইম) মাসুদ রানার নির্দেশে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে কদমতলী ও শ্যামপুর থানার পুলিশের যৌথ অভিযানে জুরাইনের সড়ক থেকে হকার উচ্ছেদ করা হয়। শ্যামপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, হকাররা যেন আবার সড়কে বসতে না পারে, সে ব্যাপারে তাঁরা তদারক করছেন।
এসব সড়ক যানজটমুক্ত রাখতে এবং হকাররা যেন আর বসতে না পারে, সে ব্যাপারে তৎপর রয়েছেন বলে জানান জুরাইনে দায়িত্বরত ওয়ারী জোনের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, কিছু ভাসমান হকারের ব্যাপারেও তাঁরা সজাগ আছেন। সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ডের জন্য নির্দিষ্ট লেন করে দেওয়া হবে।
সার্বিক বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ আজাদ রহমান বলেন, ‘রাস্তা যানজটমুক্ত ও জনগণের ভোগান্তি কমাতে আমরা নজর রাখছি। প্রধান রাস্তায় যেন কোনো হকার বসতে না পারে, সে জন্য আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
ক্রাইম জোন ২৪