শিরোনাম
ইউরোপ পাঠানোর নামে মিশরে নিয়ে জিম্মি করতেন তাঁরা, দেড় কোটি টাকাসহ পাঁচজন ধরাডিগ্রি শেষ, তবুও ছাত্রনেতা! শিক্ষার্থীদের ক্ষোভে সরগরম হাতেম আলী কলেজরাজধানীর খিলক্ষেতে মাইক্রোবাস থেকে আগ্নেয়াস্ত্র-গুলি উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৪শহীদ মিনারে বদরুদ্দীন উমরকে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধাডাকসু নির্বাচনে প্রার্থিতা ফিরে পেতে জুলিয়াস সিজারের করা রিট খারিজনারায়ণগঞ্জে আজমেরী ওসমানের সহকারী ইভনকে কুপিয়ে হত্যাছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের ভিপি-জিএস প্রার্থীর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিজেবলড, অভিযোগ শিবিরেরওগাজীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের দেড় ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ‘পাকিস্তান ম্যাচ বয়কট করলে ভারতকে শাস্তি দিত আইসিসি’১৫ বছরে অর্থনীতি ও রাজনীতিকে ধ্বংস করেছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ: মির্জা ফখরুল

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার বাস্তবায়নে এল গতি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারকাজ দ্রুত শেষ করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। এ জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ৩৬৭টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে দৈনন্দিন কাজের অংশ হিসেবে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কোনগুলো বাস্তবায়ন করতে পারবে, সেই তালিকা জানাতে তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সংবিধান সংস্কার কমিশন বাদে অন্য ১০টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ থেকে প্রথম ধাপে আশু সংস্কারের জন্য ১২১টি সুপারিশ চিহ্নিত করে সরকার। দ্বিতীয় ধাপে বাস্তবায়নের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে ২৪৬টি সংস্কার প্রস্তাব।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সূত্র জানায়, সরকার-নির্ধারিত ওই ৩৬৭টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে যেগুলো আইন, বিধি, নীতিমালা সংশোধন না করেই মন্ত্রণালয় ও বিভাগ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব, সেগুলো শিগগির বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য ৩১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ৩৬৭টি প্রস্তাবের মধ্যে দৈনন্দিন কাজের অংশ হিসেবে কোনগুলো বাস্তবায়ন করতে পারবে, তাদের সেই তালিকা জরুরি ভিত্তিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে। গতকাল রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের শুদ্ধাচার শাখা থেকে ৩১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের এ বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, যেসব সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক ঐকমত্যের প্রয়োজন নেই, সরকার চিহ্নিত এমন সংস্কার প্রস্তাবগুলো মন্ত্রণালয় ও বিভাগ- গুলোকে দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সংস্কারের অগ্রগতি প্রতিবেদন নিয়মিত উপস্থাপন করা হবে।

সূত্র জানায়, প্রথম দফায় চিহ্নিত ১২১টি সুপারিশের মধ্যে ১৬টি পুরোপুরি এবং ২১টি আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে। এ ছাড়া প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় চিহ্নিত প্রস্তাবগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি বাস্তবায়নাধীন আছে।

জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংস্কার অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব মোসা. সুরাইয়া বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া সংস্কার প্রস্তাবগুলো কোন মন্ত্রণালয় বা বিভাগকে বাস্তবায়ন করতে হবে, সেই তালিকা করে তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কাজ শুরু করেছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সংস্কার প্রস্তাবগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।

সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ শেষ করেছে। এরপর সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছে ঐকমত্য কমিশন। কিছু রাজনৈতিক দল এ বিষয়ে লিখিত প্রস্তাব দিয়েছে। এখন সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মতবিনিময় করছে ঐকমত্য কমিশন।

অতি গুরুত্বপূর্ণ তালিকায় যেসব প্রস্তাব

দ্বিতীয় ধাপে চিহ্নিত ২৪৬টি সুপারিশের মধ্যে ৮২টি শ্রম সংস্কার বিষয়ে। এ ছাড়া নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের ৭১টি, স্থানীয় সরকার বিষয়ে ৩৭টি, স্বাস্থ্য বিষয়ে ৩৩টি এবং তথ্য মন্ত্রণালয় বিষয়ে ২৩টি সুপারিশ রয়েছে।

সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে অর্থ বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগসহ ৩১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের চিঠি পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

ওই চিঠিতে দেখা যায়, কোনো কোনো সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের দায়িত্ব একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে দেওয়া হয়েছে। ফলে অনেক প্রস্তাব একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্যতালিকায় রাখা হয়েছে। একাধিক দপ্তরের সিদ্ধান্তে যেসব সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে হবে, সেগুলোকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে সমন্বয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

যৌন হয়রানি প্রতিরোধসংক্রান্ত নির্দেশনার আলোকে সরকারি কর্মচারীদের শৃঙ্খলাসংক্রান্ত আইন সংশোধন, কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্যসংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তির জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি পৃথক অভিযোগ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, নারী ও পুরুষের জন্য নমনীয় কর্মঘণ্টা এবং পেশাগত কাজ ও পারিবারিক দায়িত্বের মধ্যে সমন্বয় করতে বাড়ি থেকে কাজের সুযোগ চালু, সরকারি দপ্তর-সংস্থায় স্থায়ী কাজের জন্য আউটসোর্সিংভিত্তিক নিয়োগ সম্পূর্ণ বন্ধের ব্যবস্থা করে আইন করা এবং যাঁরা ইতিমধ্যে স্থায়ী ধরনের কাজে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিযুক্ত আছেন, তাঁদের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী কর্মচারী হিসেবে নিয়োগের পদক্ষেপ নেওয়া, পিতৃত্বকালীন ছুটির জন্য আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ছুটির পরিমাণ নির্ধারণ, স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে থানা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে একত্র করে জনপ্রকৌশল সেবা নামে একটি অভিন্ন ক্যাডার সৃষ্টি, পদোন্নতির সর্বোচ্চ ধাপে পৌঁছে যাওয়ার পরে কারও ইনক্রিমেন্ট বন্ধ হলে এবং বিভাগীয় মামলায় গুরুদণ্ড না হলে দুই বছর পর পরবর্তী বেতন স্কেল দেওয়ার বিষয়গুলো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নের তালিকায় রাখা হয়েছে।

একই কোম্পানি, গোষ্ঠী, ব্যক্তি, পরিবার বা উদ্যোক্তা যাতে একই সঙ্গে একাধিক গণমাধ্যমের মালিক হতে না পারেন, সে জন্য ক্রস-ওনারশিপ নিষিদ্ধ করে অধ্যাদেশ জারি; সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার লক্ষ্যে একই ব্যক্তি, কোম্পানি বা গোষ্ঠীর মালিকানায় থাকা একই ভাষায় দুটি দৈনিক পত্রিকা বা দুটি টেলিভিশন চ্যানেল থাকতে পারবে না–এমন অধ্যাদেশ বা নীতিমালা জারি; ইউনিয়ন ছাড়া অন্যান্য সংগঠনকে সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্ব প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়া এবং রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধার তালিকা থেকে এসব সংঘকে বাতিল করা; টেলিভিশনের গ্রহণযোগ্য ও যৌক্তিক টিআরপি নির্ণয়ের ব্যবস্থা করা, সরকারি কোনো ঘোষণা বা বিজ্ঞাপন টেলিভিশন ও এফএম রেডিওতে প্রচারের ক্ষেত্রে ফি দেওয়া, এফএম রেডিওতে বার্ষিক নবায়ন পদ্ধতি তুলে দেওয়া; বিটিভি, বেতার ও বাসসের সমন্বয়ে বাংলাদেশ সম্প্রচার ব্যবস্থা গড়ে তোলা; সংবাদপত্রের প্রচারসংখ্যা নিরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কার, পত্রিকার বিজ্ঞাপন দর সামঞ্জস্যপূর্ণকরণ এবং সরকারি ও বেসরকারি দরের মধ্যে ব্যবধান কমানো, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ এবং জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটকে একক পরিচালনা পর্ষদের অধীন পরিচালনা করার বিষয়গুলো অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সব আদালত ও থানায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য হেল্প ডেস্ক চালু এবং ইশারা ভাষা জানা ব্যক্তির ব্যবস্থা করা; সাক্ষী সুরক্ষা ও অপরাধের শিকার ব্যক্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আইনি কাঠামো চালু; পুলিশ, আইনজীবী, বিচারকসহ সংশ্লিষ্ট সব সেবাদানকারীর জন্য জেন্ডার সংবেদনশীলতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ আয়োজন; যৌন হয়রানি প্রতিরোধে উচ্চ আদালতের ২০০৯ সালের নির্দেশনার আলোকে সুস্পষ্ট ও শক্তিশালী অধ্যাদেশ প্রণয়ন; উপজেলা পর্যায়ে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একজন সিনিয়র সহকারী জজের পদায়ন; নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে বিদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশি নারীদের বিয়ের ক্ষেত্রে ওই বিদেশি নাগরিকের নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যবস্থার বিষয় ছাড়াও বেশ কিছু সংস্কার প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়কে বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।


ক্রাইম জোন ২৪

আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button