শিরোনাম
ইউরোপ পাঠানোর নামে মিশরে নিয়ে জিম্মি করতেন তাঁরা, দেড় কোটি টাকাসহ পাঁচজন ধরাডিগ্রি শেষ, তবুও ছাত্রনেতা! শিক্ষার্থীদের ক্ষোভে সরগরম হাতেম আলী কলেজরাজধানীর খিলক্ষেতে মাইক্রোবাস থেকে আগ্নেয়াস্ত্র-গুলি উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৪শহীদ মিনারে বদরুদ্দীন উমরকে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধাডাকসু নির্বাচনে প্রার্থিতা ফিরে পেতে জুলিয়াস সিজারের করা রিট খারিজনারায়ণগঞ্জে আজমেরী ওসমানের সহকারী ইভনকে কুপিয়ে হত্যাছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের ভিপি-জিএস প্রার্থীর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিজেবলড, অভিযোগ শিবিরেরওগাজীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের দেড় ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ‘পাকিস্তান ম্যাচ বয়কট করলে ভারতকে শাস্তি দিত আইসিসি’১৫ বছরে অর্থনীতি ও রাজনীতিকে ধ্বংস করেছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ: মির্জা ফখরুল

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা সংকট ও প্রশাসনিক বিতর্ক

শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষের পর থেকেই উত্তাল রয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাস। এ ঘটনায় ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবিতে গতকাল রোববার বিক্ষোভ মিছিল ও স্মারকলিপি কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল ও গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। এদিন দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থীরাও ভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক ও সহকারী প্রক্টরকে লাঞ্ছিতের প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়েছে।

এদিকে গত শনিবার বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সমালোচনা থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নামফলক মুছে ‘নিয়োগ-বাণিজ্যের জমিদার ভবন’ লিখে দিয়েছেন কয়েক শিক্ষার্থী। এ ছাড়া ‘আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকার মালিক। আমরা জমিদার, জমিদারের ওপর কেউ হস্তক্ষেপ করবে, এটা আমরা মেনে নেব না।’ বলা সেই জামায়াত নেতা সিরাজুল ইসলামকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ দাবি

সম্প্রতি চবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জোবরা গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর থেকেই ছাত্রদল, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবিতে গতকাল বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভ মিছিল থেকে দাবি করা হয়, বারবার স্থানীয়দের হাতে শিক্ষার্থীরা হামলার শিকার হলেও প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। বরং আহতদের চিকিৎসা না দিয়ে প্রশাসনিক ভবনে নিয়োগ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, প্রশাসন পদত্যাগ না করলে আন্দোলন আরও তীব্র হবে।

এদিকে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ‘আমাদের বিভাগের শিক্ষক নুরুল হামিদকে গত শনিবার বামপন্থী শিক্ষার্থীরা অযথা লাঞ্ছিত ও হেনস্তা করেছেন। এর প্রতিবাদেই তাঁরা মানববন্ধন করেছেন। গত ৩১ আগস্ট সংঘর্ষের ঘটনায় স্যারের ভূমিকাকে ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠেছিল, কিন্তু তিনি ইতিমধ্যেই নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন। তারপরও তাঁকে উদ্দেশ্য করে অপমানজনক আচরণ ও মব করার চেষ্টা করা হয়েছে, যা আমাদের গভীরভাবে দুঃখিত করেছে। আমরা ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

এদিকে বিক্ষোভ করেছেন দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তাঁদের অভিযোগ, বিভাগের এক শিক্ষার্থীর ওপর হামলাকারী ব্যক্তিরা এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো কোনো সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারেনি। এই ঘটনায় যারা দোষী, তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

প্রশাসনিক ভবনের নাম বদল

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নামফলক মুছে ‘নিয়োগ-বাণিজ্যের জমিদার ভবন’ লিখে দিয়েছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। নামফলক পরিবর্তনের পর ছবি তোলায় দুই ছাত্রীর মা-বাবাকে ডাকার হুমকির অভিযোগ উঠেছে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াহইয়া আক্তারের বিরুদ্ধে।

গত শনিবার বিকেলে প্রশাসনিক ভবনের নাম লাল রঙে কেটে ‘নিয়োগ-বাণিজ্যের জমিদার ভবন’ লিখে দেন অধিকার সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দের ব্যানারে কয়েকজন শিক্ষার্থী। উপাচার্যের হুমকির বিষয়ে এক নারী শিক্ষার্থীর বক্তব্য, ‘আমি শুধু লেখা দেখে ছবি তুলছিলাম। উপাচার্য স্যার আমার আইডি কার্ড নিয়ে বলেন, “তোমাদের পরিবারকে ডাকব।” অথচ আমি কিছুই লিখিনি। তিনি বলেন, “দাঁড়িয়ে দেখা মানেই সমান অপরাধী। তোমার পরিবারকে ডেকে এমনভাবে আপ্যায়ন করব, চা খাওয়াব, যাতে তাঁরা খুশি হয়ে যাবেন।” কিন্তু স্যারের এই কথা আমার কাছে হুমকি মনে হয়েছে।’

এ বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘আইডি কার্ড শিক্ষার্থীর পরিচয়, সেটি নেওয়ার অধিকার আমার রয়েছে। কোথায় নিয়োগ-বাণিজ্য হয়েছে, যদি প্রমাণ দিতে না পারে, তবে অভিভাবককে ডাকব। এখানে হুমকি দেওয়ার কী আছে?’

ভবনের নাম পরিবর্তনের সময় উপস্থিত ছিলেন শাখা বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি জশদ জাকির। তিনি বলেন, ‘আমরা জেনেছি, প্রশাসনিক ভবনে নিয়োগ-বাণিজ্য হয়েছে। তাই এটি করেছি।’

জামায়াত নেতা সিরাজুলকে অব্যাহতি

‘আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকার মালিক। আমরা জমিদার’ বলে মন্তব্য করা হাটহাজারী উপজেলা জামায়াত আমির সিরাজুল ইসলামকে গতকাল পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা জামায়াত। উত্তর জেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক ফজলুল করিম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘কেন্দ্রের নির্দেশনা ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আমির মো. আলাউদ্দিন সিকদারের সভাপতিত্বে জরুরি জেলা কর্মপরিষদ বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সিরাজুলকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আমরা তাঁর আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য শুনেছি। এ বিষয়টি তদন্তে একটি কমিটি করা হয়েছে।’

গত বৃহস্পতিবার জোবরা গ্রামবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সিরাজুল বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের পৈতৃক সম্পত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকার মালিক। আমরা জমিদার, জমিদারের ওপর কেউ হস্তক্ষেপ করবে, এটা আমরা মেনে নেব না। এই বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের বুকের ওপর। আমরা এই জায়গার মালিক, তাই অন্যায় কিছু মেনে নেব না। আমাদের সম্মান করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় যথাযথ সম্মান না করলে আমরা জনগণ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

সিরাজুলের বিতর্কিত ওই বক্তব্যের পরে শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে তাঁর কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। বক্তব্যের জেরে ক্ষমা চেয়ে শনিবার রাতেই পোস্ট দেন সিরাজুল।

সায়েমের অবস্থার উন্নতি

সংঘর্ষে গুরুতর আহত বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েমের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। সাত দিন ধরে লাইফ সাপোর্টে থাকার পর শনিবার মা-বাবা বলে ডাক দিয়েছেন তিনি।

নগরীর পার্কভিউ হাসপাতালের উপমহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘শনিবার বেলা সোয়া ১১টা থেকে দুপুর ১২টা ৪৫ পর্যন্ত দেড় ঘণ্টা ধরে স্যাররা রিসার্চ করেছেন। রোগী আগের চেয়ে ইমপ্রুভ করেছেন। তাঁর সিটি স্ক্যান করা হয়েছে। এটাও আগের চেয়ে ভালো আছে। সিদ্ধান্ত নিয়ে স্যাররা উপস্থিত থেকে লাইফ সাপোর্ট খুলে দিয়েছেন। এটি খোলার পর তিনি ভালোই রেসপন্স করছেন, নিজে নিজে শ্বাসপ্রশ্বাস নিচ্ছেন। লাইফ সাপোর্ট খোলার আগে জ্ঞানের লেভেল ছিল ৮। এখন এটা আরও বাড়বে।’


ক্রাইম জোন ২৪

আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button