শিরোনাম

দুর্বল পাঁচ শরিয়াহ ব্যাংকের একীভূতকরণ প্রক্রিয়া আটকে, আর্থিক সংকট বেড়েই চলেছে

দুর্বল পাঁচ শরিয়াহ ব্যাংকের একীভূতকরণ প্রক্রিয়া আটকে, আর্থিক সংকট বেড়েই চলেছে

দুর্বল অবস্থার মুখে থাকা পাঁচটি শরিয়াহ ব্যাংকের একীভূতকরণপ্রক্রিয়া এখন কার্যত ঝুলে গেছে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক একীভূতে সম্মতি জানিয়েছে; কিন্তু সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) ও এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড সম্মতি দেয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তড়িঘড়ি বৈঠকের পরও দুই ব্যাংক নিজেদের অবস্থান প্রমাণ করতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। ফলে পাঁচ ব্যাংকের একীভূতকরণপ্রক্রিয়া এখন স্থগিত হয়ে আছে। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের আগে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয় বলে সংশ্লিষ্টরা শঙ্কা প্রকাশ করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘শরিয়াহ পাঁচ ব্যাংকের প্রকৃত আর্থিক চিত্রের ভিত্তিতে একীভূতের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক নিজস্ব অবস্থান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে চাচ্ছে। ফলে একীভূতকরণ বিলম্বিত হবে। এটি স্পষ্ট।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগ এবং দুই ব্যাংকের প্রতিক্রিয়া

গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর পূর্বঘোষিত একীভূত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে পাঁচ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কিন্তু সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক একীভূত না করার জন্য যুক্তি তুলে ধরে বৈঠকে নিজেদের অবস্থান প্রকাশ করেছে।

এ বিষয়ে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মেজর (অব.) ড. মো. রেজাউল হক বলেন, ‘আমরা আমাদের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য সময় চাই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বারবার চাপ দিচ্ছে; কিন্তু আমরা গায়ের জোরে একীভূত হতে পারি না। আদালতের মাধ্যমে আমাদের অবস্থান রক্ষা করা হয়েছে।’

এক্সিম ব্যাংকও একই পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিয়েছে। ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম স্বপন জানিয়েছেন, ‘বর্তমানে ব্যাংক পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলছে। একীভূত না করে ঘুরে দাঁড়াতে সময় চেয়েছি। গভর্নর আমাদের সমর্থনে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’

পাঁচ ব্যাংকের আর্থিক চিত্র

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মে মাসে পাঁচটি শরিয়াহ ব্যাংকের মোট আমানত দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকায়। তবে ব্যাংকগুলোর ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৯৫ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা, যার মধ্যে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা। এ পরিস্থিতি ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্বাস্থ্য নিয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

ব্যাংকভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ইউনিয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার সর্বোচ্চ ৯৮ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৯৬ শতাংশ এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৯৫ শতাংশ। অন্যদিকে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৬২ শতাংশ এবং এক্সিম ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪৮ শতাংশ রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ তথ্য প্রমাণ করে, দুটি ব্যাংক এখনো নিজেদের আর্থিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

পুনর্গঠন ও একীভূতের রাজনৈতিক প্রভাব

দুটি ব্যাংক একীভূত না হওয়ায় পুরো প্রক্রিয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। একাধিক সূত্র জানায়, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংকের পদক্ষেপ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে যুক্ত। এটি কেবল অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলছে না; বরং আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমাতে পারে।

ব্যাংকগুলোর মতামত

ইউনিয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান এম ফরিদ উদ্দীন বলেন, ‘আমানতকারীরা টাকার জন্য ব্যাংকে আসছেন; কিন্তু তুলতে পারছেন না। যত দ্রুত সিদ্ধান্ত হবে, তত ভালো। ব্যাংকগুলো একীভূত, পুনর্গঠন বা অন্য যেকোনো পদ্ধতিতে স্থিতিশীল হতে পারে।’

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত নেই।’

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূরুল আমিন জানিয়েছেন, ‘গতকাল বৈঠকে একীভূত হওয়ার সম্মতি জানিয়েছি।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দৃষ্টিকোণ

বাংলাদেশ ব্যাংকের নথিপত্রে দেখা গেছে, পাঁচ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি, তারল্যসংকট, খেলাপি ঋণ, সিআরআর ও প্রভিশন শর্টফলের সর্বশেষ তথ্য নিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে, একীভূতকরণ কার্যক্রম এগোলে ব্যাংকগুলো আবার পুনরুদ্ধার হবে। কিন্তু ওই শুনানিতে দুই ব্যাংকের সম্মতি না থাকায় এখন পুরো প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘যদি ব্যাংকগুলো নিজেই ঘুরে দাঁড়াতে পারে, তবে সেটা ভালো। কিন্তু এখন আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। এ অবস্থায় একীভূতপ্রক্রিয়া থেমে যেতে পারে কি না, সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না।’


ক্রাইম জোন ২৪

আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button