শিরোনাম
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারে বাস-সিএনজি সংঘর্ষে নিহত ২টঙ্গিবাড়ীতে মদপানে ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে আরও ৩নুরাল পাগলার লাশ পোড়ানোর ঘটনায় সরকারের ব্যর্থতা ফুটে উঠেছে: এনসিপিআজকের নামাজের সময়সূচি: ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫গাজীপুরে বাসচাপায় নওগাঁ ডিবির ওসি নিহত, স্ত্রী গুরুতরআমরা হয়তো চীনের কাছে ভারত-রাশিয়াকে হারিয়ে ফেলেছি: ট্রাম্পজাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিযাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা, তাঁর গল্পটি থেমে গেল হঠাৎ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও গণঅধিকারকে নিষিদ্ধ করতে হবে: শামীম পাটোয়ারীগোয়ালন্দে আস্তানায় হামলায় ১ জন নিহত, আশঙ্কাজনক ৫

এজিএমে ভোট জালিয়াতি, আইপিও ফান্ডে অনিয়ম

এজিএমে ভোট জালিয়াতি, আইপিও ফান্ডে অনিয়ম

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি একমি পেস্টিসাইডস লিমিটেড আইপিও তহবিল থেকে তোলা কোটি কোটি টাকা নির্ধারিত কাজে ব্যবহার না করে তা আত্মীয় ও পছন্দের প্রতিষ্ঠানে ঋণ হিসেবে বিতরণ করেছে। বিনিয়োগকারীদের এ বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি এবং অর্থ এখনো আদায় না হলেও কাগজে খেলাপি হিসেবেও দেখানো হয়নি। এ ছাড়া কোম্পানির মূলধন সন্দেহজনকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে, কারখানা নির্মাণেও জালিয়াতির ছোঁয়া লক্ষ করা গেছে এবং প্রসপেক্টাসে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদর্শন করা হয়েছে। এসব অনিয়ম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) পাস করানোর প্রয়োজন ছিল। সে জন্য কোম্পানি আইপিও ফান্ড ব্যবহারের মেয়াদ বাড়াতে বিনিয়োগকারীদের ভোট চুরি করে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে, যা বিএসইসি ও ডিএসইর তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে।

তদন্তে দেখা যায়, গত বছরের ১০ জুন অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) আইপিও ফান্ড ব্যবহারের মেয়াদ বাড়াতে বিনিয়োগকারীদের সম্মতি প্রয়োজন ছিল। নিয়ম অনুসারে উদ্যোক্তা ও পরিচালক বাদে অন্তত ৫১ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীর সমর্থন থাকতে হয়। কিন্তু প্রকৃত সমর্থন না পেয়ে কোম্পানি আশ্রয় নেয় জালিয়াতির। ২৮টি ভুয়া আইপি আইডি ব্যবহার করে ১ হাজার ২৪৬ বিনিয়োগকারীর নামে ভোট দেওয়া হয়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, একটি আইপি থেকেই সর্বোচ্চ ১২১ জনের ভোট দেওয়া হয়েছে। এই ভুয়া ভোট যোগ করে মোট ৪ কোটি ৭ লাখ শেয়ারের মালিকানা দেখিয়ে অ্যাজেন্ডা পাস করিয়ে নেয় কোম্পানি।

ভোট চুরির মাধ্যমে অনুমোদন পাওয়া ওই অ্যাজেন্ডা ছিল আইপিও তহবিল ব্যবহারের মেয়াদ বাড়ানো। নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে কোম্পানি টাকা ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট আকারে রেখেছিল। এরপর ২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর সেই অর্থ আমানতকে বন্ধক রেখে শান্ত অ্যাগ্রো অ্যান্ড ট্রেডিং ফার্মসকে ১৩ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। একইভাবে, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজা-উর-রহমান সিনহার ছেলের প্রতিষ্ঠানে এফডিআর ভেঙে দেওয়া হয় ৭ কোটি টাকা ঋণ। এখন পর্যন্ত এই ঋণ ফেরত আসেনি, এমনকি খেলাপি হিসেবেও দেখানো হয়নি।

অভিযোগ এখানেই শেষ নয়। তদন্তে ধরা পড়ে, ২০১৯ সালের দ্বিতীয়ার্ধে হঠাৎ ৯৭ শতাংশ বা ১০৫ কোটি টাকা মূলধন বৃদ্ধি করেছে কোম্পানিটি, যার যৌক্তিক ব্যাখ্যা নেই। একইভাবে প্রসপেক্টাসে স্বতন্ত্র পরিচালক সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দেওয়া হয়েছে। কোথাও বলা হয়েছে, তিনি অন্য কোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত নন; আবার কোথাও বলা হয়েছে, তিনি অন্য কোম্পানিরও পরিচালক।

কারখানা নির্মাণ নিয়েও জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। প্রসপেক্টাসে বলা হয়েছিল, ভবন ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ব্যয় হবে ২০ কোটি টাকার বেশি। কিন্তু তদন্তে গিয়ে দেখা যায়, কারখানা প্রাঙ্গণে রয়েছে শুধু কয়েকটি ভাঙাচোরা ভবন। কোম্পানির দাবি, কোয়ান্টাম ইন্টারন্যাশনালকে ৫ কোটি টাকা, বন্ধন এন্টারপ্রাইজকে আড়াই কোটি টাকার বেশি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর সত্যতার কোনো প্রমাণ পায়নি তদন্ত দল। নতুন কারখানা ও যন্ত্রপাতি অধিগ্রহণেও ৮ কোটি টাকার অগ্রিম দেওয়ার দাবি থাকলেও প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি নেই।

অর্থনীতিবিদ ও বাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, একমি পেস্টিসাইডসের ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। দীর্ঘদিন অনেক কোম্পানি আইপিও থেকে টাকা তুলে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। ভোট চুরি করে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণার এটা সবচেয়ে জঘন্য উদাহরণ।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে একমি পেস্টিসাইডসের কোম্পানি সচিব সবুজ কুমার ঘোষ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে আমরা বিএসইসিকে ব্যাখ্যা দিয়েছি।’

বিএসইসির মুখপাত্র ও পরিচালক আবুল কালাম জানান, ‘তদন্তে যে অনিয়ম ধরা পড়েছে, সেগুলো প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কমিশন কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত।’


ক্রাইম জোন ২৪

আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button