সমিতির নামে অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, গ্রাহকদের বিরুদ্ধে উল্টো মামলা


পিরোজপুরের নেছারাবাদে কথিত সমিতির পরিচালক নৃপেন মন্ডলের বিরুদ্ধে অর্ধকোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করে তা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। টাকা ফেরত চাইতে গেলে তিনি গ্রাহকদের বিরুদ্ধে উল্টো লুটপাটের মিথ্যা মামলা দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। উপজেলার গুয়ারেখা ইউনিয়নের গাজিয়া গ্রামের বহু মানুষ তাদের সঞ্চিত অর্থ হারিয়ে এখন আইনি হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, গাজিয়া গ্রামের মৃত নগেন্দ্রনাথ মন্ডলের ছেলে নৃপেন মন্ডল একসময় পোশাকশ্রমিকের কাজ করতেন। গ্রামে ফিরে এসে মাথায় তিলক লাগিয়ে নিজেকে ‘সাধু’ হিসেবে পরিচয় দিতে থাকেন। এভাবে সবার আস্থা অর্জন করে তিনি ‘আরামকাঠি সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি’র পরিচালক পরিচয়ে গ্রামের মানুষের কাছ থেকে এককালীন ও মাসিক কিস্তিতে প্রায় অর্ধকোটি টাকা সংগ্রহ করেন।
কিছুদিন আগে ওই সমিতি হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলে গ্রাহকদের মামলার জেরে নৃপেন মন্ডল জেল খাটেন। এই সময় গ্রাহকদের ভয়ে তাঁর স্ত্রী বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। জামিনে মুক্তি পেয়ে নৃপেন মন্ডল গ্রামে ফিরলে গ্রাহকেরা তাঁদের আমানত ফেরত চান। অভিযোগ রয়েছে, এই দেনা থেকে বাঁচতে নৃপেন মন্ডল এলাকার ইউপি সদস্য সুজিত বৈরাগীসহ কয়েকজন ভুক্তভোগী গ্রাহকের বিরুদ্ধে তাঁর বাড়িতে লুটপাট করার সাজানো মামলা দায়ের করেন।
ভুক্তভোগী সবিতা মজুমদার (৬৫) বলেন, ‘আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। হাঁস-মুরগি পালন ও কৃষিকাজ করে আমি ও আমার ছেলে নৃপেন মন্ডলের কাছে সাড়ে চার লাখ টাকা জমা করেছিলাম। সে বলেছিল, মেয়াদ শেষে টাকা ফেরত দেবে। এখন টাকা না দিয়ে উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।’
একই গ্রামের যুবক অর্ণব ঠাকুর বলেন, ‘নৃপেন মন্ডল সহজ-সরল মানুষকে ঠকিয়ে আনুমানিক অর্ধকোটি টাকা নিয়েছে। এখন সে টাকা ফেরত দিচ্ছে না। গ্রামের ইউপি সদস্য সুজিত বৈরাগী তাঁকে টাকা ফেরত দিতে বলায় নৃপেন মেম্বারসহ আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এর সঠিক বিচার হওয়া দরকার।’
ইউপি সদস্য সুজিত কুমার বৈরাগী বলেন, ‘নৃপেন সমবায় সমিতির পরিচালক পরিচয়ে গ্রামের মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে এখন ফেরত দিচ্ছে না। আমি তাকে টাকা ফেরত দিতে অনুরোধ করায় সে আমাকেসহ পাওনাদারদের বিরুদ্ধে কোর্টে ঘর লুটপাটের মিথ্যা মামলা দিয়েছে।’
এ বিষয়ে নৃপেন মন্ডল বলেন, ‘মেম্বারসহ কয়েকজন আমার ঘরবাড়ি লুট করেছে, তাই আমি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। আমি কোনো সমিতির পরিচালক নই, আমি সেখানে বেতনভুক্ত কর্মচারী ছিলাম। সমিতির মালিক জেলে, আমি কী করব?’
নেছারাবাদ উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. হাসান রকি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে আমার কিছু করার নেই। ভুক্তভোগীরা যদি নৃপেন মন্ডলের বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা করেন, তাহলে বিষয়টি দেখা হবে।’
ক্রাইম জোন ২৪