যে পুলিশ বাহিনী আমাদের সন্তানদের গুলি করে, আমি সেই বাহিনী চাই না: মৎস্য উপদেষ্টা


জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে উত্তরার রবীন্দ্র সরোবরে ‘মুগ্ধ মঞ্চ’ নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উদ্যোগে নির্মিত মঞ্চটি সোমবার উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেছেন, ‘ফ্যাসিবাদের বীজ যেখানে রয়ে গেছে, সেখান থেকেই উপড়ে ফেলতে হবে। না হলে শহীদদের তালিকা শুধু দীর্ঘই হবে।’
আজ সোমবার বেলা ১২টার পরে মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধের সঞ্চালনায় ও ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, শহীদ নাঈমা সুলতানার মা আইনুন নাহার, শহিদ জাবির ইব্রাহিমের পিতা কবির হোসেন, জুলাই যোদ্ধা আবদুল আজিজ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান।
ফরিদা আখতার বলেন, ‘মুগ্ধ মঞ্চ আমাদের মনে করিয়ে দেবে— কোনো স্বৈরাচারী ব্যবস্থা এ দেশে টিকতে পারবে না। সরকার পরিবর্তন হলেও রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কার চালিয়ে যেতে হবে এবং দেশের সর্বস্তর থেকে ফ্যাসিবাদের বীজ উপড়ে ফেলতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের যে গোড়ার দিক থেকে সমস্যা, সেটা বুঝে আমাদের সেই গোড়াকেই বদলাতে হবে। আমি অন্তর্বর্তী উপদেষ্টা হিসেবে আজকে আছি, কাল থাকব না। কিন্তু রাষ্ট্র যদি না বদলায়, তাহলে সরকার পরিবর্তনে কিছুই বদলাবে না।’
স্বজনদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা যেসব অভিযোগ তুলেছেন, যেসব দাবি করেছেন, আমি সব শুনেছি। আমি শুধু আজ না, ভবিষ্যতেও এই কথাগুলো শুনতে প্রস্তুত। রাষ্ট্র পরিবর্তনের জন্য আমরা যতটুকু পারি করব।’
পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করে ফরিদা আখতার বলেন, ‘যে পুলিশ বাহিনী আমাদের সন্তানদের গুলি করে, আমি সেই বাহিনী চাই না। আমরা এমন রাষ্ট্র চাই না, যেখানে প্রতিবাদ করলেই গুলি চালানো হয়। যেন আর কোনো মায়ের বুক খালি না হয়, কোনো বাবাকে সন্তানের লাশ কাঁধে নিতে না হয়।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নিহত ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে না পারলে জুলাই আবেগ হারিয়ে যাবে বলে মনে করেন জামায়াতের এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদে আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন কতটুকু হবে জানি না। তবে আইনি ভিত্তি না থাকলে সনদের দরকার নেই। শুধু মুখের কথা দিয়ে হলে হবে না, এত বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন তাও শুনতে চায় না। এটা এখনই বাস্তবায়ন করতে হবে।’
রাষ্ট্রের সংস্কার হতেই হবে উল্লেখ করে এনসিপির তাসনিম জারা। তিনি বলেন, ‘যেই সংবিধান নিজের নাগরিককে গুম-খুনের অধিকার দেয়, সেই সংবিধান আমাদের দরকার নেই। যেই পুলিশ নাগরিকের ওপর গুলি চালায়, সেই পুলিশ নতুন বাংলাদেশে থাকতে পারে না। কিন্তু প্রশ্ন হলো—পুলিশ সংস্কারের অগ্রগতি কত দূর?’
তাসনিম জারা বলেন, ‘যেই উদ্দেশ্য নিয়ে অভ্যুত্থান হয়েছিল, সেই উদ্দেশ্য এক বছর পরও আমরা অর্জন করতে পারলাম না। তবে লড়াই এখনো চলছে।’
ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘মুগ্ধ মঞ্চ হবে এমন এক গণতান্ত্রিক প্ল্যাটফর্ম, যেখানে রাজনৈতিক গবেষণা, মুক্ত বিতর্ক এবং সাংস্কৃতিক চেতনার বিকাশ ঘটবে। গণতন্ত্র চর্চার সবচেয়ে বড় স্থান হলো গণপরিসর বা পাবলিক স্পেস, যেখানে বিভিন্ন মতের মানুষের মিলন ঘটে। এ কারণেই নাগরিক ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে, সকল অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে গণপরিসর উন্মুক্ত করে দিতে হবে।’
খুনিদের বিচারের দাবি জানিয়ে আইনুন নাহার বলেন, এখনো খুনিদের বিচার হচ্ছে না কেন? ড. ইউনূস স্যারতো বলেছিলেন প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে। এখন পর্যন্ত বিচারের কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। সন্তানের হত্যাকারীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে, তারা মুক্ত। আমরা এখনো শোকে বিধ্বস্ত। আমি চোখ বন্ধ করলেই সে দিনকার ঘটনা চোখে ভাসে। সন্তান হত্যার বিচার চাই।
জুলাই সনদকে চ্যাটজিপিটি মার্কা সনদ আখ্যা দিয়ে জুলাই আন্দোলনের আহত আবদুল আজিজ বলেন, সনদের মধ্যে মধ্যে রাজনৈতিক দলের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। কিন্তু শহীদ পরিবার ও আহতদের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে? এ অভ্যুত্থানে কি শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলের কর্মীরা ছিল? শহীদ পরিবারের কি কোন মর্যাদা, অভিব্যক্তি নেই? তাদের কি প্রত্যাশা থাকতে পারে না? জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র কি শুধু রাজনৈতিক দলের জন্য? এটা কি ক্ষমতায় আসার সিঁড়ি? আমরা মুক্তির জন্য আন্দোলন করেছি। এ আচরণ হাসিনাকে ফিরে আনার নামান্তর। যদি জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রে শহীদ পরিবার ও আহতদের মতামত না থাকলে তা দেশের মানুষ মেনে নেবে না।
মুগ্ধ মঞ্চের উদ্বোধন শেষে অতিথিরা রিকশা শোভাযাত্রায় অংশ নেন।