শিরোনাম
অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক কারাগারেঅবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক কারাগারেইকুয়েডরের প্রাকৃতিক স্বর্গ হঠাৎ অস্তিত্ব সংকটে, নেপথ্যে বিপুল সোনাশাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালে অবতরণ করল বিমানের প্রথম ফ্লাইটপাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রীর সফরে ১৯৭১ সালের বিষয় তুলবে ঢাকা: পররাষ্ট্র উপদেষ্টামিসরের ‘ভিসা অন অ্যারাইভাল’ পেতে বাংলাদেশিদের জন্য নতুন নির্দেশনাযে পুলিশ বাহিনী আমাদের সন্তানদের গুলি করে, আমি সেই বাহিনী চাই না: মৎস্য উপদেষ্টাপ্রতিবেদনের একাংশের প্রতিবাদ ও প্রতিবেদকের বক্তব্যইন্টারনেট ব্যবসার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে বোনকে গুলি করে হত্যা করেন ভাই: পুলিশসার্ফ এক্সেলের নতুন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর জামাল ভূঁইয়া

গোপন ক্যামেরায় ধরা পড়ল কেনিয়ায় শিশুদের দিয়ে যৌন বাণিজ্য

গোপন ক্যামেরায় ধরা পড়ল কেনিয়ায় শিশুদের দিয়ে যৌন বাণিজ্য

কেনিয়ার মাই-মাহিউ শহরে ১৩ বছর বয়সী শিশুরাও যৌন বাণিজ্যের শিকার—বিবিসি আফ্রিকা আই-এর গোপন অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমনই এক নির্মম বাস্তবতা। শহরটির অবস্থান একটি ব্যস্ত ট্রানজিট পয়েন্ট। এর ফলে এখানে প্রতিদিন প্রচুর ট্রাক আসা-যাওয়া করে। পণ্য ও যাত্রী নিয়ে যাওয়া হয় উগান্ডা, রুয়ান্ডা, দক্ষিণ সুদান ও কঙ্গোর দিকে। যাতায়াত নির্ভর এই অর্থনীতির ছায়ায় শহরটিতে বিকশিত হয়েছে যৌন ব্যবসা এবং তা ধীরে ধীরে গ্রাস করছে শিশুদের জীবনও।

দুজন গোপন অনুসন্ধানকারী ছদ্মবেশে যৌন ব্যবসার এই চক্রে ঢুকে পড়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা নিজেদের যৌনকর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন এবং ‘ম্যাডাম’ বা ‘সর্দারনি’ হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। এভাবেই তাঁরা চক্রের ভেতরের বিভিন্ন ঘটনা গোপনে ভিডিও করতে শুরু করেন। এসব ভিডিওতে ধরা পড়েন ন্যামবুরা ও চেপতু নামে দুই নারীর কর্মকাণ্ড। তাঁরা কীভাবে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের এই ব্যবসায় যুক্ত করেছেন সেই সব তথ্যও বের হয়ে আসে।

ন্যামবুরা স্বীকার করেন, তাঁর অধীনে ১৩ বছর বয়সী একটি মেয়ে ছয় মাস ধরে কাজ করছে। তিনি বলেন, ‘ওরা এখনো বাচ্চা, তাই মিষ্টি দিলে সহজেই রাজি করানো যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘দিনে নয়, রাতে গোপনে বাইরে বের করি। কারণ অপ্রাপ্তবয়স্ক নিয়ে কাজ বিপজ্জনক।’

ক্যামেরায় ধরা পড়া দুই ‘ম্যাডাম’ বা ‘সর্দারনি’। ছবি: বিবিসি
ক্যামেরায় ধরা পড়া দুই ‘ম্যাডাম’ বা ‘সর্দারনি’। ছবি: বিবিসি

অন্যদিকে চেপতু জানান, অল্প বয়সী মেয়ে বিক্রি করে তিনি অনেক আয় করেন এবং এই মেয়েগুলোর জন্য কিছু নিয়মিত খদ্দের তৈরি হয়। এক ক্লাবে তিনি চারজন মেয়েকে পরিচয় করিয়ে দেন, যাদের মধ্যে একজন ১৩ এবং অন্যরা ১৫ বছরের। তাদের একজন জানায়, দিনে গড়ে ৫ জন পুরুষের সঙ্গে তাকে যৌন সম্পর্ক করতে হয়। আর কনডম ছাড়া যৌনতায় রাজি না হলে তাকে বের করে দেওয়া হয়। মেয়েটি বলে, ‘আমি এতিম। কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।’

বিবিসি গত মার্চ মাসে এই সব প্রমাণ কেনিয়া পুলিশের হাতে তুলে দেয়। কিন্তু পুলিশ জানায়, ভিডিওতে থাকা নারী ও মেয়েদের তাঁরা খুঁজে পায়নি। এই অভিযোগে পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তারও করতে পারেনি। কেনিয়ায় শিশু যৌন নির্যাতনের মামলায় সাধারণত সাক্ষ্যের অভাবে বিচার বেশি দূর এগোয় না।

২০১২ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক রিপোর্টে বলা হয়েছিল, কেনিয়ায় প্রায় ৩০ হাজার শিশু যৌন বাণিজ্যে জড়িত। ২০২২ সালে এক এনজিও গবেষণায় কেনিয়ার কিলিফি ও কোয়ালে অঞ্চলে প্রায় আড়াই হাজার শিশুকে যৌন শ্রমে বাধ্য করার তথ্য উঠে আসে।

এমনই এক অন্ধকার গলি থেকে কিছু মেয়েকে উদ্ধার করে এনেছেন ‘বেবি গার্ল’ নামে পরিচিত এক সাবেক যৌনকর্মী। ৪০ বছর এই পেশায় থাকার পর ৬১ বছর বয়সী এই নারী এখন মাই-মাহিউ শহরে একটি আশ্রয়কেন্দ্র চালান। এখানে থাকা চার কিশোরী তাদের জীবনের দুঃসহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, কীভাবে তারা নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন এবং কীভাবে নতুন জীবনের জন্য চেষ্টা করছেন। ‘বেবি গার্ল’ তাদের বিউটি পারলারের কাজ এবং ফটোগ্রাফি শেখাচ্ছেন।

বেবি গার্লের এই কার্যক্রম চলে আসছিল মার্কিন সহায়তা সংস্থা ইউএস এইড-এর অর্থে। তবে সম্প্রতি এই তহবিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁর প্রকল্পও সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘এই মেয়েরা এখনো সুস্থ হয়ে ওঠেনি। কাজ বন্ধ হলে তারা কোথায় যাবে?’

তারপরও তাঁর তত্ত্বাবধানে থাকা লিলিয়ান নামে এক কিশোরী নতুন জীবন শুরু করতে আশাবাদী। সে এখন ফটোগ্রাফি শিখছে। লিলিয়ান বলে, ‘আমি এখন ভয় পাই না। কারণ বেবি গার্ল আমাদের পাশে আছেন। তিনি আমাদের অতীতকে কবর দিতে সাহায্য করছেন।’



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button