গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে প্রাণ গেল আরও ৬২ ফিলিস্তিনির


গাজাজুড়ে, আরও অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। গতকাল শনিবার, ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে আরও অন্তত ৬২ জন। কাতারি সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিহতদের ৩৮ জন বিতর্কিত মানবিক সংগঠন গাজা হিউম্যানিটিরিয়ান ফাউন্ডেশনের ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার তথ্যমতে, গত শুক্রবার পর্যন্ত ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছে ১ হাজার ৩৭৩ ফিলিস্তিনি। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার, শুধু দুই দিনেই ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ গেছে ১০৫ ফিলিস্তিনির। অথচ, গত সপ্তাহেই ত্রাণ প্রবেশ ও সংগ্রহের জন্য কিছু এলাকায় ‘কৌশলগত বিরতি’র ঘোষণা দিয়েছিল ইসরায়েল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব বলছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলের অভিযান শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত অনাহারে প্রাণ হারিয়েছেন ১৬৯ জন, যার মধ্যে ৯৩জনই শিশু।
স্থানীয়দের অভিযোগ, জিএইচএফের ত্রাণ কেন্দ্রগুলোর আশপাশে অকারণে গুলি চালায় ইসরায়েলি সেনা ও মার্কিন ঠিকাদাররা। এদিকে শনিবার খান ইউনিসে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সদর দপ্তরেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায় সেখানে। এ হামলায় নিহত হয়েছেন সংস্থাটির এক কর্মী, আহত হয়েছেন আরও তিনজন।
জাতিসংঘের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ফিলিপ লাজ্জারিনি শনিবার বলেন, গাজায় যে দুর্ভিক্ষ চলছে, তা মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন সহায়তা ব্যবস্থাকে হটিয়ে জিএইচএফকে জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার ফল। তিনি বলেন, ‘ইউএনআরডব্লিউকে পেছনে ফেলা বা দুর্বল করে ফেলার বিষয়টি সহায়তার গন্তব্য নিয়ে উদ্বেগের কারণে নয়। এটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, গাজাবাসীকে সম্মিলিতভাবে শাস্তি দেওয়ার একটি কৌশল।’
এ ছাড়া, উপত্যকায় ত্রাণ সরবরাহও সীমিত। গত কয়েকমাস ধরে গাজার দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি নিয়ে কঠোর সমালোচনা ও অনাহারে থাকা হাড় জিরজিরে ফিলিস্তিনিদের ছবি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত হতে শুরু করার পর থেকে বিভিন্ন মহলের চাপে কিছু ত্রাণ ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে উপত্যকায়। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে জর্ডান, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, স্পেন, জার্মানি ও ফ্রান্সসহ কয়েকটি দেশের পক্ষ থেকে গাজায় বিমানযোগে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে নেতানিয়াহু প্রশাসন।
তবে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, এই ত্রাণ পর্যাপ্ত নয়। ত্রাণ প্রবেশের জন্য স্থলপথ উন্মুক্ত রাখতে হবে বলে বলছে তারা। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানায়, শনিবার গাজায় মাত্র ৩৬ ট্রাক ত্রাণ প্রবেশ করেছে, যা প্রয়োজনীয় সংখ্যার তুলনায় অনেক কম। তাদের মতে, গাজাবাসীর ন্যূনতম চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন অন্তত ৬০০ ট্রাক ত্রাণ প্রয়োজন।
জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ সতর্ক করে বলেছে, গাজায় অপুষ্টির হার এখন দুর্ভিক্ষের সীমানা ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে ৩ লক্ষাধিক শিশু তীব্র অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে।