অস্ত্রোপচারের আগে সম্মতি: যা জানতে হবে


যেকোনো অপারেশনের আগে রোগী ও তাঁর আত্মীয়স্বজনের মধ্যে ভয় বা দুশ্চিন্তা কাজ করে। এই ভয় অমূলকও নয়। কারণ, অপারেশন মানেই কাটাছেঁড়া, অজ্ঞান থেকে জ্ঞান ফিরবে কি না, সে চিন্তা মাথায় কাজ করে। তা ছাড়া অপারেশনের ক্ষেত্রে অ্যানেসথেসিয়ার বিষয়ে জানাশোনা ও সতর্কতার স্পষ্ট ধারণা থাকে না বেশির ভাগ মানুষের।
তাই একজন সার্জনের উচিত রোগীর সামগ্রিক চিকিৎসা সম্পর্কে যেকোনো অপারেশনের আগে রোগী এবং তাঁর স্বজনদের সম্যক ধারণা দেওয়া।
আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থায় রোগী ও চিকিৎসকের সম্পর্ক কেবল তথ্য দেওয়া বা প্রেসক্রিপশননির্ভর নয়; বরং এ সম্পর্ক পারস্পরিক অংশীদারত্বের। এর অন্যতম ভিত্তি হলো রোগীর সম্মতি, বিশেষ করে অপারেশনের আগে। স্বাস্থ্যসেবা দানকারী ব্যক্তিদের আইনি ও নৈতিক দায়িত্ব থাকে রোগীর সম্মতি নিশ্চিত করা।
সম্মতি নেওয়ার আগে রোগীকে অবশ্যই অপারেশনের পদ্ধতি, অপারেশনের প্রয়োজনীয়তা, অপারেশনের সময় কী কী হতে পারে, অপারেশন-পরবর্তী ঝুঁকি, এর সুবিধা, বিকল্প চিকিৎসা এবং সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে হবে। এ ছাড়া অ্যানেসথেসিয়া যিনি করাবেন, তাঁর সঙ্গে অবশ্যই পরিচয় করিয়ে দেওয়া উচিত।
অনেকে ভাবেন, সম্মতি মানে একটি ফরমে স্বাক্ষর। কিন্তু বাস্তবে এটি একটি প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে রোগী তাঁর চিকিৎসা সম্পর্কে পূর্ণ সচেতনতা অর্জন করেন এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এটি চিকিৎসকের প্রতি আস্থা, রোগীর অধিকার এবং নৈতিক দায়বদ্ধতার একধরনের সম্মিলিত প্রতিচ্ছবি।
এটি কেন গুরুত্বপূর্ণ
» রোগীর সম্মতি গ্রহণ চিকিৎসার নৈতিকতা ও পেশাগত দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ,
এটি রোগীর অধিকার রক্ষা করে।
» চিকিৎসায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।
» চিকিৎসকের প্রতি রোগীর আস্থা তৈরি করে।
» আইনি জটিলতা প্রতিরোধেসহায়ক হয়।
» মানসিক প্রস্তুতির সুযোগ দেয়, যা সুস্থ হওয়ার পথে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
সম্মতি নেওয়া না হলে কী হতে পারে
» রোগী চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে বিভ্রান্ত এবং আতঙ্কিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
» কোনো জটিলতা হলে চিকিৎসক আইনি বিপদে পড়তে পারেন।
» চিকিৎসা পদ্ধতির ওপর রোগীর আস্থা নষ্ট হতে পারে।
» নৈতিকতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শঙ্কা থাকে।
সম্মতি গ্রহণের সময় যে বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে
» চিকিৎসার উদ্দেশ্য ও ধাপগুলো সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করা।
» অ্যানেসথেসিয়া সম্পর্কে ধারণা দেওয়া।
» রোগীকে সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানানো।
» বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি উল্লেখ করা।
» রোগীকে প্রশ্ন করার সুযোগ দেওয়া।
» রোগী বিষয়গুলো বুঝেছেন কি না, সেসব নিশ্চিত হওয়া।
» লিখিত সম্মতিপত্রে রোগী (বা অভিভাবকের) স্বাক্ষর রাখা।
বিশেষ পরিস্থিতিতে কেমন সম্মতি দরকার
শিশুর ক্ষেত্রে: পিতা-মাতা ও অভিভাবকের সম্মতি গ্রহণ প্রয়োজন।
অজ্ঞান বা মানসিকভাবে অক্ষম রোগীর ক্ষেত্রে: আইনগত অভিভাবকের মাধ্যমে সম্মতি নিতে হবে।
জরুরি অবস্থায়: জীবন রক্ষায় অবিলম্বে চিকিৎসা দেওয়া যায়। তবে পরবর্তী সময় তা সঠিকভাবে নথিবদ্ধ করতে হবে।
রোগীর সম্মতি গ্রহণ করা কেবল নিয়ম রক্ষার বিষয় নয়; এটি রোগীর ওপর চিকিৎসকের সম্মানবোধ ও দায়বদ্ধতার প্রতীক। একজন সচেতন রোগী এবং আন্তরিক চিকিৎসকের যৌথ অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই চিকিৎসার সর্বোচ্চ মান অর্জন সম্ভব।
আমাদের চিকিৎসকেরা সব সময় চেষ্টা করেন রোগীদের বুঝিয়ে বলার, সময় দেওয়ার এবং তাঁদের আত্মবিশ্বাসের জায়গা তৈরি করার।
পরামর্শ দিয়েছেন: আবাসিক সার্জন (ইএনটি), সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল