বিএম কলেজের শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগের সত্যতা মিলেছে


বরিশাল বিএম কলেজের দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিতর্কিত এম মওদুদ আহমেদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি, উত্ত্যক্ত, প্রাইভেট পড়াতে বাধ্য করাসহ নানা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। গত মঙ্গলবার বিকেলে তদন্ত কমিটি অধ্যক্ষের কাছে ছয়-সাত পৃষ্ঠার প্রতিবেদন পেশ করেছে। প্রতিবেদনে কমিটি যে সুপারিশ করেছে, তা দায়সারা বলে কমিটির দায়িত্বশীল এক সদস্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে শোনা যাচ্ছে, অভিযুক্ত শিক্ষক মওদুদকে টানা ৩০ দিনের প্রশিক্ষণে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. শেখ মো. তাজুল ইসলাম। এ ধরনের পদক্ষেপে ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, অধ্যক্ষ তাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত গত ২৮ জুলাইয়ের এক চিঠিতে ৪৫তম শিক্ষা পরিকল্পনা ও উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কোর্সে প্রশিক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণার্থী মনোনয়নের বিষয়ে জানানো হয়। অধ্যক্ষের স্বাক্ষর করা ওই প্রশিক্ষণে মনোনীত শিক্ষক হচ্ছেন দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এম মওদুদ আহমেদ। তিনি আগামী ৪ আগস্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩০ দিন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বরিশাল অঞ্চলের অধীনে এই প্রশিক্ষণে থাকবেন। মাউশির দায়িত্বশীল একটি সূত্র গতকাল বুধবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এদিকে তদন্ত কমিটির প্রধান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মো. মামুন উর রশিদ খান বুধবার বেলা ৩টার দিকে ছয় থেকে সাত পৃষ্ঠার প্রতিবেদন অধ্যক্ষের কাছে পাঠিয়েছেন। কমিটির দায়িত্বশীল এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, তদন্তে ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষক মওদুদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনেছেন, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের খাতা দেখানো, শরীরে স্পর্শ করা, ফোনে আপত্তিকর কথা বলা, প্রাইভেট পড়াতে বাধ্য করা, ইনকোর্স পরীক্ষায় নম্বরের ভয়ভীতি, পারিবারিক গল্পগুজব এবং ক্লাসে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলা। ৫০-৬০ জন শিক্ষার্থী এ বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
আরও জানা গেছে, কমিটি এই প্রতিবেদনে জোরালোভাবে কোনো সুপারিশ না করে উল্লেখ করেছে যে, শিক্ষার্থীরা যেসব অভিযোগ করছে, সে বিষয়ে নজরদারির প্রয়োজন। এ ছাড়া এই মুহূর্তে যাতে এই ইস্যুতে কলেজের পরিস্থিতি খারাপ না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
অভিযুক্ত শিক্ষককে রহস্যজনক কারণে ৩০ দিনের প্রশিক্ষণে পাঠানোয় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। দর্শন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র বিধু ভূষণ দাস গতকাল বুধবার বলেন, ‘আমরা শিক্ষক মওদুদের বদলির জন্য ক্লাসে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছি। অধ্যক্ষ আজ বিভাগে এসে পরীক্ষার জন্য ক্লাস খুলে দিতে বলেছেন। কিন্তু যার বিরুদ্ধে এতে অভিযোগ, তাকে প্রশিক্ষণে পাঠিয়ে সুযোগ করে দেওয়া হলো। আমরা এটা জানতে চাইব।’
কলেজের একজন সহযোগী অধ্যাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘শিক্ষক মওদুদকে রক্ষায় রাজনৈতিকভাবে তীব্র চাপ আছে। তাই বলে তাঁকে প্রশিক্ষণে পাঠানো এবং তদন্ত কমিটির জোরালো সুপারিশ না থাকার অর্থ হচ্ছে অপরাধীকে পার করে দেওয়া হচ্ছে।’
এ বিষয়ে মন্তব্য চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান প্রফেসর মো. মামুন উর রশিদ খান কোনো কথা বলতে চাননি। তিনি প্রতিবেদনের বিষয়ে অধ্যক্ষের কাছ থেকে জেনে নিতে বলেন।
দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এম মওদুদ আহমেদকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
বিএম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. শেখ মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে, কিন্তু অনেক কাগজপত্র হওয়ায় এখনো দেখতে পারিনি।’ যৌন হয়রানির অভিযোগের মধ্যে শিক্ষক মওদুদকে প্রশিক্ষণে পাঠানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আপনি এটা জানলেন কী করে? না, তাকে (মওদুদ) কোনো ট্রেনিংয়ে পাঠানো হয়নি। যে কাগজই দেখাক না কেন, ট্রেনিংয়ে যাননি শিক্ষক মওদুদ আহমেদ।’