শখের ভ্লগিংয়ে সুখের ছোঁয়া


কনটেন্টভিত্তিক বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর কারণে পৃথিবীর কোন প্রান্তের কোন মানুষের ভাগ্য কখন যে খুলে যায়, তা কেউ বলতে পারে না। তুষার চাকমার গল্পটাও সে রকম। একসময় যে ফেসবুক ছিল তাঁর বিনোদনের মাধ্যম, এখন সেটিই হয়ে উঠেছে আয়ের উৎস। কোথাও না গিয়ে নিজের এলাকায় থেকে, নিজের মতো কাজ করে এখন তিনি মাসে গড়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা আয় করছেন।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালার ভৈরফা নোয়াপাড়া গ্রামে তুষার চাকমার বাড়ি। সেখানে বসেই তিনি তৈরি করেন ভিডিও কনটেন্ট। খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজে স্নাতক শেষ বর্ষে পড়াশোনা করছেন তিনি। পাশাপাশি পরিচালনা করছেন নিজের ‘হিলোভিদিজ্যি’ নামের ফেসবুক পেজ। সেখানে নিয়মিত পোস্ট করেন নিজের বানানো ভিডিও কনটেন্ট। এখন সে পেজের অনুসারীর সংখ্যা ৪ লাখ ২৬ হাজার। এই পেজ থেকে আয়ের টাকায় কিনেছেন জমি, তুলেছেন ঘর। দেখছেন উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন।
পাহাড়ি সংস্কৃতি তুলে ধরার চেষ্টা
২০২২ সালের ১৪ এপ্রিল। তুষার চাকমা তাঁর হিলোভিদিজ্যি নামের ফেসবুক পেজ খোলেন নিজের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি, জীবনধারা ও খাবারের কথা তুলে ধরার জন্য। প্রথম দিকে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও দিলেও ধীরে ধীরে তিনি হয়ে উঠেছেন একজন জনপ্রিয় ফুড ভ্লগার। একটি ডিগবাজি দিয়ে ‘হ্যালো বন্ধুরা, তোমরা কেমন আছো’ এই সংলাপেই শুরু হয় তাঁর অধিকাংশ ভিডিও। সহজ ভাষা, ছোট দৈর্ঘ্যের উপস্থাপনাই তাঁর জনপ্রিয়তার চাবিকাঠি।
চরম দারিদ্র্য থেকে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ
২০২১ সালে তুষারের বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারটিতে নেমে আসে হতাশা। মা ও ছোট ভাইকে নিয়ে বাঁচার লড়াইয়ে নামেন তিনি। গার্মেন্টসে চাকরি করেও খুব একটা সুবিধা করতে পারছিলেন না। এরপর হিলোভিদিজ্যি পেজ থেকে তিনি আয়ের পথ খুঁজে পান। মাত্র তিন মাসের মাথায় প্রথম তাঁর আয় হয় ৫২ হাজার টাকা। এরপর আর থেমে থাকতে হয়নি তাঁকে। বর্তমানে পেজ এবং আইডি মিলিয়ে মাসিক আয় ৫০ হাজার টাকার বেশি। এক মাসে তিনি সর্বোচ্চ আয় করেছেন ১ লাখ ৮৭ হাজার টাকা।
প্রযুক্তির সহযাত্রী
ভিডিও তৈরি ও সম্পাদনা—সবই নিজে শিখেছেন। গুগল ও ইউটিউবের সহায়তা যেমন নিয়েছেন, তেমনি স্থানীয় কিছু ‘বড় ভাই’-এর পরামর্শও পেয়েছেন। বর্তমানে ভ্লগিংয়ে তাঁর সঙ্গী মাত্র একটি স্মার্টফোন। যেটি কিনেছেন ভ্লগিংয়ের আয় থেকেই।
পাহাড়ে নেটওয়ার্ক সমস্যা
শুরুতে পাহাড়ি এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ ছিল বড় সমস্যা। কখনো গাছে উঠে ভিডিও আপলোড করেছেন, কখনো দূরে কোথাও গেছেন নেটওয়ার্ক খুঁজতে। এখনো মাঝেমধ্যে তাঁকে এমন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। যদিও এসব তুষারকে পিছিয়ে দিতে পারেনি।
ভিডিওতে যা আছে
শতাধিক ভিডিও থাকলে তাঁর কিছু ভিডিও মিলিয়ন ভিউ হয়েছে। ‘বর্ষার সময় জঙ্গলে হারিয়ে গেলে যেসব খাদ্য উপযোগী’ এই শিরোনামের ভিডিওটি ১১ দশমিক ৪৪ মিলিয়ন বার দেখা হয়েছে। এখানে তিনি কলাগাছ কেটে তার ভেতরের অংশ খাবার উপায় দেখিয়েছেন; যা রান্না না করেও সরাসরি খাওয়া যায়। আবার জঙ্গলে একধরনের জংলি কলা হয়। সেই কলা খাওয়ার একটি ভিডিও হয়েছে ৭ দশমিক ৩ মিলিয়ন ভিউ।
তুষার চাকমার ভিডিওগুলো বেশ রঙিন। তিনি নিজের চারপাশের পরিবেশ ও প্রকৃতিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জীবন নিয়ে ভিডিও তৈরি করেন। তুষারের সাফল্য দেখে পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখন অনেকে এ পথ বেছে নিয়ে সফল হয়ে উঠছেন। তবে তুষার শুধু একজন ভিডিও ভ্লগার নন, একজন পথপ্রদর্শকও।