এসি ছাড়াই ঠান্ডা থাকে যে শহর


গরম থেকে রেহাই পেতে আমরা এসির ওপর নির্ভরশীল। পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশে এমন পরিস্থিতি। এতে ঘর শীতল হলেও পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল দিন দিন আরও উষ্ণ হয়ে উঠছে। তার ওপর বিদ্যুতের ব্যয় তো রয়েছেই। তাই বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর বেশির ভাগ বিকল্প পথে হাঁটছে।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার জোর দিয়েছে পরিবেশবান্ধব শীতলীকরণ ব্যবস্থার দিকে। দেশটিতে দ্রুত বাড়ছে আধুনিক ডিস্ট্রিক্ট কুলিং প্রযুক্তির ব্যবহার। এখন কাতারে ১২ লাখ টন রেফ্রিজারেশন ক্ষমতার ডিস্ট্রিক্ট কুলিং চালু রয়েছে। এটি মোট কুলিং ব্যবস্থার ১৯ শতাংশ। ২০৩০ সালের মধ্যে এই হার ২৪ শতাংশে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছে কাতারের বিদ্যুৎ ও পানি কর্তৃপক্ষ কাহরামা।
শহরের প্রতিটি বাড়ির চিলার লাইনে বয়ে যায় ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার ঠান্ডা পানি। এটি নিয়ন্ত্রণ করে দোহা শহরের ডিস্ট্রিক্ট কুলিং সিস্টেম বা কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার অন্যতম প্রধান সংস্থা কাতার কুল। ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠান কাতারের শীতলীকরণ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। শুরু থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় দুই দশক ধরে ‘কাতার কুল’ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষতায় শহরকে শীতল রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
ডিস্ট্রিক্ট কুলিং প্রযুক্তির বড় সুবিধা হলো, এটি প্রচলিত এয়ারকন্ডিশনের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রয়োজনও অনেক কমে যায়। ফলে কার্বন নিঃসরণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। ফলে
এ প্রযুক্তি জলবায়ু পরিবর্তন রোধ ও পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
এই প্রযুক্তির আরেকটি বড় দিক হলো, এতে সুপেয় পানির পরিবর্তে পরিশোধিত পানি ব্যবহার করা হয়। বর্জ্য পানি পরিশোধনের মাধ্যমে তা শীতলীকরণের কাজে লাগানো হয়। ফলে বিশুদ্ধ পানির ওপর চাপ পড়ে না। এতে পানির অপচয় কম হয়।
২০২২ সালে কাতারে ৩৩টি ডিস্ট্রিক্ট কুলিং প্ল্যান্টে এই পরিশোধিত পানি ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে প্রায় ১৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন ঘনমিটার সুপেয় পানি সাশ্রয় করেছে দেশটি। এর আর্থিক মূল্য প্রায় ১২৯ মিলিয়ন কাতারি রিয়াল। শুধু তা-ই নয়, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের মাধ্যমে আরও ৩২৭ মিলিয়ন রিয়াল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস সাশ্রয়ে প্রায় ১১৫ মিলিয়ন রিয়াল বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। এই সবকিছু মিলিয়ে এটি কাতারের জন্য একদিকে যেমন পরিবেশবান্ধব, অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবেও খুব লাভজনক।
কাতারে ডিস্ট্রিক্ট কুলিং প্রযুক্তি এখন দেশের বেশ কিছু প্রধান এলাকায় ব্যবহার করা হচ্ছে। লুসেইল সিটি, দ্য পার্ল কাতারসহ আধুনিক আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায় এটি ঠান্ডা করার কাজ করছে। হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
ডিস্ট্রিক্ট কুলিং কাতারে বিদ্যুৎ, পানি ও প্রাকৃতিক গ্যাস সাশ্রয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। এটি পরিবেশ রক্ষা এবং টেকসই উন্নয়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ।
সূত্র: কাতার কুল