৭ বছরেও চালু করা যায়নি নতুন ভবন


গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতাল ২৫০ শয্যায় উন্নীত হয় ২০১৪ সালে। এরপর কেটে গেছে প্রায় ১১ বছর। তবে রয়ে গেছে নানান সংকট। ২০১৮ সালে হাসপাতালটির নতুন ভবন উদ্বোধন করা হলেও জনবলসংকট ও অবকাঠামোর অভাবে সেটি আজও চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বারবার চিঠি দিয়েও কাজ হচ্ছে না। ফলে পুরোনো ভবনে শয্যাসংকটের মধ্যেই চলছে চিকিৎসাসেবা।
গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গাইবান্ধার মানুষের চিকিৎসাব্যবস্থার বেহাল অবস্থা দেখে ২০১৪ সালে হাসপাতালটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ২০১৮ সালে গণপূর্ত বিভাগ ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে দ্য ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড আর্কিটেক্টস লিমিটেড নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নতুন হাসপাতাল ভবন নির্মাণকাজের কার্যাদেশ দেয়। এরপর একটি ছয়তলা ভবন নির্মাণ করা হয়। ২০২২ সালের এপ্রিলের শুরুর দিকে গণপূর্ত বিভাগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ভবনটি বুঝিয়ে দেয়। ভবন বুঝে পাওয়ার পর দুই বছর ১০ মাস গেলেও এখনো হাসপাতালের নবনির্মিত ভবন চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২৫০ শয্যার এই হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাসেবা চালুর জন্য দরকার ৫৫ জন চিকিৎসক, ১০১ জন নার্সসহ মোট ২৩৩ জন। তবে আছেন মাত্র ৪৩ জন।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের অন্তর্বিভাগ ও বহির্বিভাগে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। পা ফেলার মতো জায়গা নেই। পুরুষ-মহিলা ওয়ার্ডেও রয়েছে শয্যাসংকট। শয্যা না থাকায় হাসপাতালের মেঝেতে জায়গা করে নিয়েছেন রোগীরা।
পৌর শহরের গোবিন্দপুর থেকে আয়নাল হোসেন তাঁর বৃদ্ধ মাকে নিয়ে এসেছেন হাসপাতালে। তিনি জরুরি বিভাগে ডাক্তার দেখান। ডাক্তার তাঁর মাকে রংপুরে রেফার্ড করেন। আয়নাল আক্ষেপ করে বলেন, ‘এই হাসপাতালের নাম রেফার হাসপাতাল হওয়া উচিত। এখানে রোগী এলেই বিভিন্ন জায়গায় রেফার করা হয়। তাহলে এই হাসপাতাল থেকে লাভ কী?’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালটিতে নিয়মিত রোগী ভর্তি থাকে তিন শর ওপরে। মেঝে আর বারান্দায় বিছানা পেতে সেবা নিতে হয় অনেককে। এ ছাড়া বহির্বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসে এক থেকে দেড় হাজার রোগী। বহির্বিভাগে আসা রোগীদের বসার ব্যবস্থা নেই হাসপাতালটিতে। নতুন ভবনে পর্যাপ্ত কেবিন, ১৫০ শয্যার ওয়ার্ড, বহির্বিভাগে রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা, আইসিইউ, ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা, আধুনিক অপারেশন থিয়েটারসহ আধুনিক সব চিকিৎসা-সুবিধা রয়েছে। কিন্তু নতুন ভবন চালু না করায় এর সুফল থেকে বঞ্চিত জেলাবাসী।
পেটের ব্যথা নিয়ে ভর্তি হয়েছে পাঁচ বছরের হিমেল। সঙ্গে মা-বাবা। তার ভাগ্যে শয্যা জোটেনি। মা-বাবা বারান্দায় শয্যা পেতে ছেলের চিকিৎসা নিচ্ছেন। হিমেলের বাবা রেজাউল করিম বলেন, ‘গরিব মানুষের কোথাও শান্তি নেই। সরকারি হাসপাতালে ছেলেকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসছি। কোনো চিকিৎসাই পাচ্ছি না। মনে হয় জীবনে কোনো খারাপ কাজ করেছিলাম। সেইটার শাস্তি হচ্ছে। সকালের দিকে একবার ডাক্তার এসে দেখে যান। আর সারা দিনে কেউ ফিরে ভুলকিও দেয় না।’
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রফিকুজ্জামান বলেন, ‘২০১৮ সালে নতুন ভবন উদ্বোধন হওয়ার পর দুই বছর ১০ মাস আগে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত অধিদপ্তর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ভবন হস্তান্তর করে। জনবলসংকটের বিষয়ে বারবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছি, তবু কোনো কাজই হচ্ছে না। আমি নিজেও সিভিল সার্জনের পাশাপাশি এই হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করছি। একজন পোস্টিং হয়েছিল, কিন্তু তিনি এখানে যোগদান করেননি। এই হাসপাতালের এমন অবস্থা হয়েছে যে, রোগীদের চিকিৎসা দেওয়াই মুশকিল হয়ে পড়ছে।’