গৃহবধূকে ধর্ষণচেষ্টার মামলা নেয়নি পুলিশ, ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়ার অভিযোগ


লালমনিরহাটের আদিতমারীতে এক গৃহবধূকে (২৩) ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় থানায় করা একটি অভিযোগ টালবাহানা করে এক মাস পর মামলা হিসেবে নেবে না বলে পুলিশ জানায়। তখন ঘুষের ২ হাজার টাকাও পুলিশ ফেরত দেয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) দুপুরে লালমনিরহাটের আদিতমারী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আতাউর রহমান ঘুষের ২ হাজার ৯০০ টাকা বাদীপক্ষকে ফেরত দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
অভিযোগে জানা গেছে, আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের মরিচবাড়ী গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের ছেলে আশরাফুল ইসলাম (৩৫) এক গৃহবধূকে (২৩) মোবাইল ফোনে কুপ্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন। যা নিয়ে ওই গৃহবধূ বারবার নিষেধ করলেও আচরণ সংশোধন করেননি আশরাফুল।
গত ৫ মে সবাই বাইরে কাজে থাকায় বাড়িতে একা ছিলেন ওই গৃহবধূ। এ সুযোগে গৃহবধূর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করেন আশরাফুল। একপর্যায়ে গৃহবধূ ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে চিৎকার করে বাড়ির বাইরে আসেন। পরে আশরাফুল সটকে পড়েন।
পরিবারের লোকজন বাড়ি ফিরলে বিষয়টি তাঁদেরকে জানান ওই গৃহবধূ। ওই নারী আত্মসম্মানের কথা চিন্তা করে প্রথমে আশরাফুলের পরিবারকে জানিয়ে বিচার দাবি করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আশরাফুল ও তাঁর স্ত্রী ওই গৃহবধূ এবং তাঁর পরিবারের ওপর হামলা চালান। অবশেষে নিরুপায় হয়ে ঘটনার বিচার চেয়ে আদিতমারী থানায় লিখিত অভিযোগ করেন ওই গৃহবধূ।
অভিযোগটি আমলে নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তদন্তে যান আদিতমারী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আতাউর রহমান। অভিযুক্ত আশরাফুলকে গ্রেপ্তার করে মামলা দ্রুত নথিভুক্ত করার আশ্বাসে ২ হাজার ৯০০ টাকা নেন এসআই আতাউর।
এভাবে আজ-কাল বলে এক মাস বিলম্ব করেও আইনগত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ। অবশেষে আজ মঙ্গলবার বাদীকে ওসির সামনে হাজির করেন এসআই। সেখানে গেলে ওসি সাফ জানিয়ে দেন, এক মাস পর এ মামলা নিলে তাঁর চাকরি থাকবে না। মামলা নেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে কোর্টে যাওয়ার পরামর্শ দেন ওসি।
এ খবর শুনে এসআই আতাউর রহমান মামলা নথিভুক্তের জন্য নেওয়া ঘুষের ২ হাজার ৯০০ টাকা বাদীর শ্বশুরকে জোর করে ফেরত দেন।
গৃহবধূ বলেন, ‘ফোনে কুপ্রস্তাব দেওয়ার একপর্যায়ে ৫ মে বাড়িতে একা থাকায় জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করেন আশরাফুল। এটা কাউকে বললে স্বামীসহ আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেন এবং এখনো দিচ্ছেন। আমরা থানায় অভিযোগ দিলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ। তারা আজ-কাল বলে বিলম্ব করে। এখন বলছে দেরিতে এ মামলা নিলে আমাদের চাকরি থাকবে না। আমরা গরিব মানুষ। টাকা দিয়েও বিচার পেলাম না। তাহলে আর কত টাকা দিলে মামলা নেবে পুলিশ?’
বাদীর শ্বশুর বলেন, ‘বাবা আমরা গরিব মানুষ। কষ্ট করে ২ হাজার ৯০০ টাকা আতাউর দারোগাকে দিয়েছি। আজ-কাল বলে এক মাস পার করে এখন টাকা ফেরত দিয়ে বলছে, মামলা নিলে তাদের চাকরি থাকবে না। তাহলে তারা আগে কেন মামলাটা নিল না? কেনই বা আমাদেরকে এক মাস ধরে শুধু ঘুরাইল? এমন হলে গরিব মানুষ বিচার কীভাবে পাবে?’
আদিতমারী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আতাউর রহমান ঘুষ গ্রহণ ও ফেরত দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘মামলাটি নেওয়ার মতো। কিন্তু ওসি স্যার এখন নিচ্ছেন না। আপনি একটু স্যারকে বলে মামলাটি নথিভুক্ত করে দেন ভাই। ওসি স্যারের সঙ্গে আপনি (প্রতিবেদক) বসলে মামলাটা নেবেন হয়তো। আমি কোনো টাকাপয়সা নেইনি, তাই ফেরতও দেইনি।’
বিলম্বের বিষয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় বিএনপির নেতাদের বলেছিলাম আপস করে দিতে। কিন্তু তাঁরা পারেননি। সে জন্য বিলম্ব হয়েছে।
আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আকবর বলেন, ‘বাদী আপস করতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। আজ এক মাস পর এসে মামলা নথিভুক্ত করতে বলছে। এত বিলম্বে এসব মামলা থানায় নেওয়া যায় না। আর আমার অফিসার কোনো ধরনের লেনদেন করে থাকলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’