ঘোষণা না আসায় হতাশ কর্মকর্তারা


সদ্য অনুষ্ঠিত বিচার বিভাগীয় জাতীয় সেমিনারে প্রধান উপদেষ্টা পৃথক সচিবালয়ের ঘোষণা দেবেন বলেই আশা করেছিলেন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা। তবে সে ঘোষণা না আসায় হতাশ তাঁরা। বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা বলছেন, পৃথক সচিবালয় না হলে তাঁদের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার দীর্ঘদিনের সংস্কৃতি বহাল থেকে যাবে। নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এলে পৃথক সচিবালয়ের উদ্যোগে ভাটা পড়তে পারে। এখনই বিচার বিভাগ সচিবালয় বাস্তবায়ন করার উপযুক্ত সময় ছিল।
একাধিক বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাঁরা আশা করেছিলেন জাতীয় সেমিনারে প্রধান অতিথি হয়ে আসা প্রধান উপদেষ্টা পৃথক সচিবালয় কবে প্রতিষ্ঠা করা হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা দেবেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে স্বাধীন বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেন। কিন্তু সময়সীমার ঘোষণা না আশায় অনেক বিচারক হতাশ। কারণ তাঁদের আশঙ্কা, রাজনৈতিক সরকার এলেই বিষয়টি আবার ঝুলে যাবে।
গত রোববার সুপ্রিম কোর্ট আয়োজিত জুডিশিয়াল ইনডিপেনডেন্স অ্যান্ড এফিসিয়েন্সি শীর্ষক সেমিনারে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, পৃথক সচিবালয় হলে বিচার বিভাগ হস্তক্ষেপমুক্ত হবে। স্বাধীন ও দক্ষ বিচার বিভাগ গড়ে তুলতে বর্তমান সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সেমিনারে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদও বলেন, ‘বিচার বিভাগ প্রকৃত স্বাধীনতা দাবি করতে পারে না, যদি না তার সর্বোচ্চ সদস্যদের নিয়োগ এবং জবাবদিহি কাঠামোগতভাবে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে রক্ষা করা হয়। অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার কথা পুনর্ব্যক্ত করছি।’
তবে পৃথক সচিবালয় কবে নাগাদ হচ্ছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট আভাস পাওয়া যায়নি সেমিনারের সভাপতি প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বা অন্যতম বক্তা আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের কথা থেকেও।
এ বিষয়ে অভিমত জানতে চাইলে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘বিচারকেরা আশা করেছিলেন প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে পৃথক সচিবালয়ের বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা আসবে। অন্তর্বর্তী সরকারের এত দিনেও পৃথক সচিবালয় না হওয়ায় তাঁরা কিছুটা হতাশ। তবে আমরা আশা করি, সরকার দ্রুত বিচার বিভাগ সচিবালয় বাস্তবায়ন করবে।’
গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর সারা দেশের অধস্তন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশে অভিভাষণে নতুন নিযুক্ত প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছিলেন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের মতো বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব শিগগির আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সুপ্রিম কোর্ট থেকে গত বছরের ২৭ অক্টোবর এ বিষয়ে ধারণাপত্র ও প্রস্তাব পাঠানো হয় আইন মন্ত্রণালয়ে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের প্রস্তাবের পর আইন মন্ত্রণালয় প্রায় সব কাজ শেষ করে রেখেছে। এখন অর্ন্তবর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নিলেই অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে পৃথক সচিবালয় করতে পারে। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ আবু তাহের কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। আর সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার মোয়াজ্জেম হোসাইন বলেন, ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতে দ্রুতই পৃথক সচিবালয় হবে বলে আমরা আশা করছি।’
হস্তক্ষেপ বন্ধ চায় সংস্কার কমিশন: বিচারকদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে আইন মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ বন্ধ করার সুপারিশ করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। কমিশনের মতে, মন্ত্রণালয়ের হাতে ক্ষমতা থাকার অর্থ দ্বৈত নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা বজায় থাকা।
জানতে চাইলে সংস্কার কমিশনের সদস্য তানিম হোসেইন শাওন বলেন, ‘এখন বিচার বিভাগ নামমাত্র স্বাধীন। সবকিছু আসে মন্ত্রণালয় থেকে। তবে সংবিধানে ১১৬ ধারা রেখে পৃথক সচিবালয় অর্থপূর্ণ হবে না। তাই দ্রুত রুল নিষ্পত্তি করে পৃথক সচিবালয় বাস্তবায়ন করা দরকার। কেননা কোনো রাজনৈতিক সরকার এলে আর এটা বাস্তবায়ন করবে বলে মনে হয় না।’