বরগুনায় ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৬৬ জন, শতর্বষী বৃদ্ধার মৃত্যু


বরগুনার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। গতকাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে আজ রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ডেঙ্গুতে আরও ৬৬ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে জেলায় চিকিৎসা নিচ্ছে ২২১ জন। গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৩২৯ জন দাঁড়িয়েছে। আজ রোববার দুপুরে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে রাবেয়া (১০০) নামের এক বৃদ্ধার ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে। তাঁর বাড়ি জেলা সদরের মাইঠা গ্রামে। এ নিয়ে জেলায় ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ জন। তাদের মধ্যে জেনারেল হাসপাতালে সাতজন্য, অন্য ১৫ জন উন্নত চিকিৎসা নিতে বরগুনার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ও হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা গেছে। আজ রোববার জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় এসব তথ্য দেয়।
বরগুনায় মশকনিধনে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে না পড়লেও কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মিলিতভাবে শহরের বিভিন্ন স্থান পরিচ্ছন্ন করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় বরগুনায় গঠিত হয়েছে একটি সমন্বিত র্যাপিড রেসপন্স টিম। এই টিমের মাধ্যমে স্থানীয় ২৬টিরও বেশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এক ছাতার নিচে এসে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে গিয়ে পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে। হাসপাতালে রোগীদের সহায়তায় সক্রিয় ভূমিকা, শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতা অভিযান, মশার প্রজননস্থল ধ্বংস, জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি, আক্রান্ত এলাকায় স্প্রে কার্যক্রম এবং সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালিত হচ্ছে প্রতিদিন।
স্বেচ্ছাসেবকেরা হাসপাতালে রোগীর সেবায় সহায়তা করছেন, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে ফগিং ও ব্লিচিং কার্যক্রম চালাচ্ছেন এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতনতা বাড়াচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে ইয়াকুব, নাইম, আয়শা, রিমা, মহিউদ্দিন, আসিফসহ অনেকের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা বলেন, ‘এই সময় মানুষ মানুষের পাশে না দাঁড়ালে কবে দাঁড়াবে? আমরা নিজেরা মাস্ক পরে, গ্লাভস পরে রোগীর পাশে দাঁড়াচ্ছি। ভয় পাই, কিন্তু দায়িত্ববোধটা জিতে যাচ্ছে।’ তাঁরা আরও বলেন, ‘এটা শুধু ভলান্টিয়ার কাজ না, এটা আমাদের শহরের জন্য দায়বদ্ধতা।’
এদিকে গত কয়েক দিন ধরে বরগুনায় মশকনিধনে জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার পক্ষ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
র্যাপিড রেসপন্স টিমের একজন সমন্বয়ক শহিদুল ইসলাম স্বপ্ন বলেন, শহরে মাঝেমধ্যে দায়সারাভাবে সরকারি উদ্যোগে মশকনিধন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তারা মশকনিধন করতে এসে ছবি তোলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেন। ব্যক্তিপর্যায়ে সচেতন করতে পৌরসভা পুরোপুরি ব্যর্থ।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দুর্বারের সাধারণ সম্পাদক খান নাইম জানান, বরগুনা স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের অসচেতনার কারণে বারবার বরগুনায় ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করে।
বরগুনা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ বলেন, প্রত্যেক মানুষকেই সচেতন হতে হবে। একা স্বাস্থ্য বিভাগ ডেঙ্গু মোকাবিলায় যথেষ্ট নয়। সবাই মিলে নিজ নিজ উদ্যোগে বাড়ির আশপাশে পরিষ্কার করতে হবে। হাসপাতালে রোগীরা মশারি ব্যবহার করে না। সেখান থেকেও নতুন ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। ডেঙ্গুর চিকিৎসাই হচ্ছে মশা নিধন করা।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. শফিউল আলম বলেন, ‘আইইডিসিআর প্রতিনিধিরা এখানের প্রতিটি বাড়িতে বর্ষায় জমানো পানিতে এডিসের লার্ভা পেয়েছেন। আমাদের পৌরসভার পক্ষ থেকে মশার ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম করা হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে মশার ওষুধ ছিটানো বন্ধ রয়েছে। বৃষ্টি কমলে পুরোদমে কাজ চালু হবে।’