এভারেস্টে ভিড়, অনাবিষ্কৃত আরও ৯৭টি শৃঙ্গ ফি ছাড়াই উন্মুক্ত করল নেপাল


এভারেস্টের ভিড় কমাতে নেপাল সরকার দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের দুর্গম ও অনাবিষ্কৃত আরও ৯৭টি শৃঙ্গ পর্বতারোহীদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে—একদম বিনা মূল্যে। আশা করা হচ্ছে, নতুন উদ্যোগের ফলে এভারেস্টের ওপর চাপ কমবে এবং পর্যটন থেকে আয় দূরবর্তী দরিদ্র অঞ্চলেও পৌঁছাবে।
আজ সোমবার (১১ আগস্ট) রাতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এভারেস্ট আরোহীদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভিড়। পৃথিবীর সর্বোচ্চ এই শৃঙ্গে আরোহণের বিভিন্ন পর্যায়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে।
অথচ নেপালের পশ্চিমাঞ্চলের কারনালি ও সুদূর পশ্চিম প্রদেশে রয়েছে ৫ হাজার ৮৭০ মিটার থেকে ৭ হাজার ১৩২ মিটার উচ্চতার অসংখ্য শৃঙ্গ। এসব শৃঙ্গ পর্বতারোহীদের কাছে এখনো অনাবিষ্কৃতই রয়ে গেছে। এভারেস্টের উচ্চতা ৮ হাজার ৮৪৯ মিটার হলেও অন্য শৃঙ্গগুলোতে আরোহণ সমান রোমাঞ্চকর হবে বলে দাবি করা হচ্ছে।
অতীতে নেপালের দূরবর্তী অঞ্চলে ট্রেকিং বা অভিযানের জন্য কঠিন ও ব্যয়বহুল অনুমতির প্রয়োজন হতো। রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে সেখানে পৌঁছাতেও লেগে যেত কয়েক দিন। তারপর শুরু হতো ট্রেকিং।
এখন ওই ৯৭টি শৃঙ্গের জন্য কোনো পারমিট ফি লাগবে না। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শৃঙ্গগুলো হলো—এপি ওয়েস্ট, সাইপাল, ফির্নকফ ও বোবায়ে চুলি।
এভারেস্ট, লোৎসে ও কাঞ্চনজঙ্ঘার মতো ৮ হাজার মিটারের বেশি উচ্চতার পর্বত নেপালের পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় পর্যটনও মূলত ওই অঞ্চল দুটিতে সীমাবদ্ধ। দেশটির পশ্চিমাঞ্চল অবহেলিত থেকে গেছে মূলত খারাপ রাস্তা, দুর্বল শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং চরম দারিদ্র্যের কারণে।
নেপালের পর্যটন বিভাগের মুখপাত্র লিলাধর আওয়াস্থী বলেছেন, ‘আমরা চাই অভিযাত্রীরা কারনালি ও সুদূর পশ্চিমের অমলিন প্রকৃতি উপভোগ করুক। এতে স্থানীয় লোকদের মধ্যে কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা তৈরি হবে।’
তবে ওই অঞ্চলগুলোতে পৌঁছানোর সহজ কোনো পথ নেই। কাঠমান্ডু থেকে প্রথমে যেতে হবে বিমানে, পরে আবার কয়েক ঘণ্টার গাড়ি ভ্রমণ, এরপর কয়েক দিনের হাঁটা। অন্যদিকে এভারেস্ট যে অঞ্চলে অবস্থিত, সেখানে হেলিকপ্টারে চড়ে সহজেই পৌঁছানো যায় এবং বেজক্যাম্পে শহরের মতোই সব সুবিধা পাওয়া যায়।
সাম্প্রতিক সময়ে অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে এভারেস্টে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির হার বেড়েছে। তাই ভিড় কমাতে দেশটির সরকার ২০২৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে এভারেস্টে আরোহণের ফি ১১ হাজার ডলার থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার ডলার করছে। অর্থাৎ আগামী মাস থেকে বাংলাদেশি কেউ যদি এভারেস্টে আরোহণ করতে চান, তাহলে তাঁর শুধু অনুমতি নিতেই খরচ হবে ১৮ লাখ ২২ হাজার টাকা।
এ ছাড়া দেশটির ৭ হাজার ১ মিটার থেকে ৭ হাজার ৫০০ মিটার উচ্চতার কোনো শৃঙ্গে আরোহণের অনুমতি নিতে খরচ হবে ৮০০ ডলার (প্রায় ১ লাখ) এবং ৫ হাজার ৪০০ মিটার থেকে ৭ হাজার মিটারের শৃঙ্গে আরোহণের অনুমতি মিলবে ৫০০ ডলারে (৬০ হাজার টাকা)। তবে নতুন উন্মুক্ত ৯৭টি শৃঙ্গের জন্য কোনো ফি লাগবে না।
আরও একটি বিষয় হলো—কেউ যদি এভারেস্টে আরোহণ করতে চান, তবে প্রস্তাব রয়েছে, ওই ব্যক্তিকে অবশ্যই আগে কমপক্ষে একটি ৭ হাজার মিটারের শৃঙ্গ জয় করতে হবে।
নেপালে মোট ৩ হাজার ৩১০টি শৃঙ্গ রয়েছে, যেগুলোর প্রতিটির উচ্চতা ৫ হাজার ৫০০ মিটারের বেশি। এর মধ্যে ৮ হাজারের বেশি উচ্চতার আটটি শৃঙ্গও রয়েছে সেখানে।
নতুন উন্মুক্ত শৃঙ্গগুলো আরোহণে পর্বতারোহীদের কোনো ফি না লাগলেও ওই অঞ্চলগুলোতে ট্রান্সপোর্ট, অবকাঠামো ও সঠিক তথ্যের অভাব তাঁদের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
ক্রাইম জোন ২৪