শিরোনাম

গারো পাহাড়ে হাতির সংকটময় জীবন

গারো পাহাড়ে হাতির সংকটময় জীবন

শেরপুরের গারো পাহাড়ে মানুষের বিচরণ বাড়ার পাশাপাশি কমতে শুরু করেছে বন-জঙ্গল। এতে সেখানে বন্য হাতির জীবন সংকটে পড়েছে। প্রায়ই নানা ঘটনায় প্রাণ হারিয়ে গারো পাহাড় থেকে বিলুপ্তের পথে বিশালাকৃতির এই প্রাণী। এদিকে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্বে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষও। গত ৩০ বছরে শেরপুরে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্বে জেলায় হাতি মারা গেছে ৪৭টি; একই সময়ে মানুষ মারা গেছে ৬৭ জন। এমতাবস্থায় আজ (১২ আগস্ট) বিশ্ব হাতি দিবস উপলক্ষে হাতি-মানুষের চলমান দ্বন্দ্ব নিরসনে বন বিভাগের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ চান স্থানীয়রা।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শেরপুরের নালিতাবাড়ী, শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার গারো পাহাড়ে বন্য হাতির বিচরণ। ১৯৯৫ সালে ২০-২৫টি বন্য হাতির দল ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পিক পাহাড় থেকে দলছুট হয়ে এই পাহাড়ে চলে আসে। পরে হাতির দলটি ভারতের কাঁটাতারের বেড়া এবং ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বাধার কারণে আবাসস্থলে ফিরে যেতে পারেনি। ধান ও কাঁঠালের মৌসুম ছাড়াও খাদ্যের সন্ধানে প্রতি রাতেই হাতি দল জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে চলে আসে। সারা বছর দলটি শেরপুরের শ্রীবরদী থেকে শুরু করে ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী হয়ে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলা পর্যন্ত প্রায় ৬০ কিলোমিটার সীমান্ত চষে বেড়ায়।

বন বিভাগের তথ্যমতে, মানুষ-হাতির দ্বন্দ্বের কারণে প্রতিবছর মারা যাচ্ছে মানুষ ও হাতি। শুধু শেরপুর জেলায় ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত হাতি মরেছে ৩৯টি আর মানুষ ৩৬ জন। ১৯৯৫ থেকে এ পর্যন্ত হাতিরমৃত্যু হয়েছে ৪৭টি আর মানুষ মারা গেছে ৬৭ জন।

হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব কমাতে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও কোনোটাই তেমন কার্যকরী হচ্ছে না বলে দাবি এলাকাবাসীর। ২০১৪ সালে হাতি প্রতিরোধে পরীক্ষামূলকভাবে সীমান্ত এলাকায় ১৩ কিলোমিটার সৌরবিদ্যুৎ-সংযোগের মাধ্যমে বেড়া দেওয়ার প্রকল্প নেয় বন বিভাগ। ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় হাতির বিচরণক্ষেত্র এবং আক্রমণের সম্ভাব্য গতিপথে বেড়া নির্মাণ করা হয়।

২০১৫ সালে ঝিনাইগাতীর তাওয়াকুচি ও কর্নঝুড়া গ্রামে ১০০ হেক্টর বনভূমিতে হাতির খাদ্য উপযোগী বাগান তৈরি করে দেওয়া হয়। হাতি প্রতিরোধে জেলার তাওয়াকুচি, ছোট গজনী, বড় গজনী, হালচাটি ও মায়াঘাসি এলাকায় ১৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে লেবু ও বেতবাগান করা হয়। হাতির অবস্থা দেখতে সীমান্তে ১৬টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া হাতি তাড়াতে বিভিন্ন সময় পাহাড়ি গ্রামগুলোতে চার্জার লাইট, টর্চলাইট ও জেনারেটর বিতরণ করা হয়েছে। বন্য হাতির ক্ষুধার কাছে সবকিছুই ভেস্তে গেছে।

নালিতাবাড়ী উপজেলার পানিহাতা এলাকার কৃষক জোসেফ সাংমা বলেন, ‘প্রায় ১৫ বছর ধরে হাতির সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছি। প্রতিবছর কষ্টের ফসল খেয়ে সাবাড় করে হাতির দল। তাণ্ডব চালায় বাড়িঘরেও।’

গারো পাহাড়, বন্য প্রাণী ও নদী রক্ষা পরিষদের উপদেষ্টা বিপ্লব দে কেটু বলেন, ‘হাতি হচ্ছে প্রকৃতির পাহারাদার। আমরা চাই হাতি ও মানুষের সহাবস্থান সৃষ্টি হোক। এ নিয়ে সরকারের কার্যকর উদ্যোগ জরুরি।’

বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. আলী রেজা খান বলেন, ‘হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে সরকারের বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। বিভিন্ন উন্নত দেশের মতো আমরাও সৌরশক্তির অধিক ব্যবহার করতে পারি। বন ও পাহাড়ে জনবসতি গড়ে ওঠা সংঘাতের একটি বড় কারণ। এতে বন লুট হচ্ছে আর সৃষ্টি হচ্ছে হাতির খাদ্যসংকট। গারো পাহাড়ে কতগুলো হাতি বসবাসের উপযোগী এবং কতসংখ্যক হাতি বেশি রয়েছে, সেসব জানা জরুরি। যদি ভূমির ধারণক্ষমতার বেশি হাতি থাকে, তাহলে সরকারকে এ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম বলেন, ‘শেরপুরের গারো পাহাড়টি ৫৪ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। শতাধিক হাতির বিচরণ এখানে। এই হাতিগুলো বাঁচিয়ে রাখতে হবে, মানুষদেরও বাঁচাতে হবে ৷ তাই হাতি মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কাজ করা হবে। হাতি দ্বারা কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমরা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকি। তাই হাতিকে কোনো অবস্থাতেই বিরক্ত করা যাবে না।’


ক্রাইম জোন ২৪

আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button