ট্রাম্পের হুংকার অগ্রাহ্য ইরানের


ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে কোনো পক্ষই নতি স্বীকার না করে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’ করার যে হুমকি দিয়েছিলেন, তা উড়িয়ে দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। তিনি উল্টো হুমকি দিয়েছেন, যুদ্ধ মাত্র শুরু হলো। এদিকে ইসরায়েলকে লড়াই চালিয়ে যেতে বলেছেন ট্রাম্প।
এই পরিস্থিতিতে গতকাল বুধবার ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। পাল্টা হামলায় জবাব দিয়েছে ইরান। এমন সময়ে এসব ঘটনা ঘটছে, যখন মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলে কাছে রণতরি মোতায়েন করছে যুক্তরাষ্ট্র।
১২ জুন রাতে হঠাৎ ইরানে হামলা চালায় ইসরায়েল। সেই রাতে ২০০ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাসহ বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ। এর জেরে ১৩ জুন প্রথমে ড্রোন ও পরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এর পর থেকে প্রতিদিনই পাল্টাপাল্টি হামলা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ইসরায়েলের দিকে ১ হাজার ড্রোন ও ৪০০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। এর মধ্যে ২০টির মতো ব্যালিস্টিক বেসামরিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। ছয় দিন ধরে চলা এই সংঘাতে অন্তত ৫৮৫ জন নিহত এবং প্রায় দেড় হাজার মানুষ আহত হয়েছে ইরানে। আর ইরানের হামলায় এ পর্যন্ত ২৪ ইসরায়েলি নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছে।
পাল্টাপাল্টি হামলা
গতকাল আবারও ইরানে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ গতকাল জানান, ইরানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সদর দপ্তরসহ তেহরানের আশপাশের এলাকায় সামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালাচ্ছে বিমানবাহিনী। আল জাজিরাও জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী তেহরানে সামরিক স্থাপনায় হামলা চালাচ্ছে।
কেউ জানে না, আমি কী করতে যাচ্ছি। ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট
ইসরায়েলের এমন হামলার জবাবে গতকাল পাল্টা হামলা চালায় ইরান। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম গতকাল রাতে জানায়, তাদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফাঁকি দিয়ে লক্ষ্য আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে। এ ছাড়া গতকাল ভোরের দিকে ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে মেরন বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে তারা।
একই সঙ্গে গত মঙ্গলবার রাতে ইসরায়েলে ‘হাইপারসনিক’ ক্ষেপণাস্ত্র ফাত্তাহ-১ নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে জানায় ইরান। তবে এই হামলা কোথায় চালানো হয়েছে, তা জানানো হয়নি। এর বাইরে গতকাল ইসরায়েলে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইরান।
খামেনির হুমকি
গত মঙ্গলবার রাতে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথে একটি পোস্ট দেন ট্রাম্প। এতে ইরানকে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করার হুমকি দেন তিনি। এরপর এ নিয়ে গতকাল কথা বলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। গতকাল এক্সে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ইরান কখনোই ইসরায়েলের সঙ্গে আপস করবে না। আরেক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘যুদ্ধ শুরু হলো।’ এ ছাড়া গতকাল টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরায়েলকে সাহায্য করে, তাহলে তারা ‘অপূরণীয় ক্ষতির মুখে’ পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্র জড়ালে অপূরণীয় ক্ষতি হবে। আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা
লড়াই চালিয়ে যেতে বললেন ট্রাম্প
বাংলাদেশ সময় গত মঙ্গলবার রাত থেকে ইরান পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে শঙ্কা সৃষ্ট হয়। ওই রাতে ট্রাম্প জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক করেন। ঠিক সেই সময় বিবিসির খবরে বলা হয়, মার্কিন যুদ্ধবিমান সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে। এরপর বলা হয়, ইরানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের সংঘাতে জড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল ট্রাম্প বলেন, ‘আমি সেটা বলতে পারি না। আমি করতেও পারি, না-ও করতে পারি। কেউ জানে না, আমি কী করতে চাই।’ এ ছাড়া খামেনির আত্মসমর্পণ করতে না চাওয়ার বক্তব্য প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি বলতে চাই, শুভকামনা রইল।’
গত মঙ্গলবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেছেন ট্রাম্প। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, তিনি নেতানিয়াহুকে লড়াই চালিয়ে যেতে বলেছেন।
কূটনীতি ও নতুন শঙ্কা
গতকাল মধ্যরাতে আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, তেহরান থেকে তিনটি উড়োজাহাজ ওমানে গেছে। এর মধ্যে ইরান সরকারের ব্যবহৃত দুটি এবং একটি বেসরকারি উড়োজাহাজ রয়েছে। তবে ইরানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের কোনো ফ্লাইট ওমানে যায়নি। যদিও ধারণা করা হচ্ছে, সংঘাত থামাতে ইরানের পক্ষ থেকে আলোচনার জন্য প্রতিনিধিদল ওমানে গেছে।
এদিকে শঙ্কা দেখা দিয়েছে মার্কিন বহরের নড়াচড়ায়। সিএনএন জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর বিমানবাহীর রণতরি ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড আগামী সপ্তাহে ইউরোপে মধ্যপ্রাচ্যের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। এটি পূর্ব ভূমধ্যসাগরে মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছে সূত্র। এ নিয়ে তিনটি ইরানের কাছাকাছি নেওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। শঙ্কা করা হচ্ছে, যুদ্ধবিমান এবং এসব রণতরি নেওয়ার মাধ্যমে ইরানে আক্রমণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে জেরুজালেম থেকে মার্কিনদের সরিয়ে নিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন।