শিরোনাম
অনলাইনে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ইরানিরাইরানে সরকার পরিবর্তন লক্ষ্য নয়, দাবি ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রীরদেশীয় জাতের গবাদিপশু বিশ্বমানের পর্যায়ে উন্নীত করা সম্ভব: প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টাপার্বতীপুরে পুকুরের পানিতে ডুবে দুই শিশু শিক্ষার্থীর মৃত্যুসাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের ৩ সহযোগীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাযে কারণে লন্ডনে আটকে আছে সঞ্জয়ের মরদেহ, অপেক্ষায় আছেন কারিশমা কাপুররংপুর ও দিনাজপুরে করোনা শনাক্তের পরীক্ষা শুরুইরান-ইসরায়েল সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হলে যেভাবে লাভবান হবে রাশিয়ামোসাদের চরদের ধরতে দেশব্যাপী অভিযান শুরু করেছে ইরানবৈশ্বিক অর্থনীতিতে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রভাব কেমন

মোসাদের চরদের ধরতে দেশব্যাপী অভিযান শুরু করেছে ইরান

মোসাদের চরদের ধরতে দেশব্যাপী অভিযান শুরু করেছে ইরান

ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের অনুপ্রবেশ এবং গুপ্তচরবৃত্তি দমনে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ইরান। দেশজুড়ে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়েছে। গত শুক্রবার, ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ২৮ জনকে আটক করা হয়েছে।

চলমান উত্তেজনার মধ্যে গতকাল সোমবার দু’বছর আগে ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেপ্তার এক ব্যক্তির ফাঁসি কার্যকর করেছে ইরান। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে ইরান একটি স্পষ্ট বার্তা দিল যে, যারাই ইসরায়েলকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করবে তাদের পরিণতি হবে ভয়াবহ। এ ছাড়া আজ ইরানের বিচার বিভাগও জানিয়েছে, এ ধরনের গুপ্তচরবৃত্তির বিচার দ্রুত করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এদিকে নেতানিয়াহু প্রশাসনের পক্ষে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করার অভিযোগেও বহু মানুষকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এ অভিযোগে শুধু ইস্পাহান থেকেই ৬০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ইরান সরকার। তাদের ভাষ্য—সামাজিক মাধ্যমে জায়নবাদী শক্তির পক্ষে পোস্ট করে তারা সমাজের মনস্তাত্ত্বিক নিরাপত্তা ব্যাহত করছে।

গত শুক্রবার ইসরায়েলের অপারেশন রাইজিং লায়নের পর ইরান এই গ্রেপ্তার অভিযান জোরদার করেছে। হামলার পর ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার ইরানি এজেন্টরা চোরাচালানের মাধ্যমে ইরানের অভ্যন্তরে অস্ত্র নিয়ে এসেছিল। ইরানের ভেতরেই গড়ে তোলা হয়েছিল অভিযান পরিচালনার ঘাঁটি।

এই ব্যাপক গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হয় মূলত শুক্রবার ভোরে ইসরায়েলি হামলায় বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানী গুপ্তহত্যার শিকার হওয়ার পর। নজিরবিহীন ওই অভিযানের পর ইসরায়েলি কর্মকর্তারা দাবি করেছিলেন, তাদের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্টরা ইরানে অস্ত্র চোরাচালান করে ঢুকিয়েছিল। দেশটির ভেতর থেকেই ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা পরিচালনার ঘাঁটি তৈরি করা হয়েছিল।

গত সপ্তাহে তেহরানের একটি শহরে গোপন সামরিক স্থাপনা থেকে ২০০ কেজি বিস্ফোরক, আত্মঘাতী ড্রোন, ড্রোন লাঞ্চার, ড্রোন তৈরির সরঞ্জামসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি উদ্ধার করে ইরান। উদ্ধার হওয়া এসব সরঞ্জামের একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ফার্স নিউজ।

এরপরই নড়েচড়ে বসে ইরান। দেশজুড়ে এখন চলছে ব্যাপক নজরদারি। রাতে টহলে নামানো হয়েছে আধা-সামরিক বাহিনী বাসিজকে। এ ছাড়া সন্দেহজনক কিছু দেখলে তাৎক্ষণিকভাবে কর্তৃপক্ষকে জানাতে জনগণকে আহ্বান জানিয়েছে ইরানি গোয়েন্দা সংস্থা। সাধারণ মানুষকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে প্রকাশ করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে—যারা নিয়ামিত মাস্ক ও চশমা (সানগ্লাস বা কালো চশমা) পরে, পিকআপ ট্রাক চালায় এবং সব সময় সঙ্গে বড় ব্যাগ বহন করে, পাশাপাশি সামরিক, আবাসিক কিংবা শিল্প এলাকার আশপাশে ভিডিও ধারণ করে, তাদের প্রতি সতর্ক থাকতে হবে।

সম্প্রতি ইরান সরকারের ঘনিষ্ঠ নূর নিউজ একটি সতর্কতামূলক পোস্টার প্রকাশ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে—যেসব ব্যক্তি ‘রাতেও মাস্ক, টুপি বা সানগ্লাস পরে’, ‘প্রায়ই কুরিয়ারের মাধ্যমে পার্সেল গ্রহণ করে’, তাদের সন্দেহের চোখে দেখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

একই পোস্টারে বলা হয়েছে, ‘বাড়ির ভেতর থেকে অস্বাভাবিক শব্দ—যেমন চিৎকার, ধাতব যন্ত্রপাতির শব্দ, টানা ঠকঠক আওয়াজ শুনতে পেলে’ সতর্ক থাকতে হবে। ‘যেসব বাড়িতে দিনের বেলায়ও পর্দা টেনে রাখা হয়’ তাদের ব্যাপারেও সচেতন হোন।

রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে পুলিশ কর্তৃক প্রকাশিত এক পোস্টারে, সম্প্রতি যারা বাড়ি ভাড়া দিয়েছেন তাঁদের ভাড়াটিয়াদের সম্পর্কে পুলিশকে তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়া, গণমাধ্যমকর্মীদেরও এখন রাস্তায় ছবি তুলতে নিষেধ করেছে সরকার।

গতকাল সোমবার এক ভিডিও বার্তায় ইরানের পুলিশপ্রধান আহমাদ-রেজা রাদান ‘বিশ্বাসঘাতকদের’ আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, যারা বুঝতে পেরেছেন যে শত্রুর দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন, তাঁরা যদি স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেন, তাহলে সম্মানজনকভাবে ক্ষমার সুযোগ পেতে পারেন। তবে যারা ধরা পড়বেন, তাঁদের এমন কঠোর শিক্ষা দেওয়া হবে, যেমন শিক্ষা বর্তমানে জায়নবাদী শত্রুদের দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে, ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান গোলাম-হোসেইন মোহসেনি হুঁশিয়ার করে বলেছেন, ‘যদি এমন কাউকে ধরা হয় যে ইসরায়েলের সঙ্গে সহযোগিতা করেছে, তাহলে যুদ্ধ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে তাকে দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শাস্তি দেওয়া হবে।’

তথ্যসূত্র: সিএনএন



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button