দখলদারদের নিজ ভূখণ্ড উপহার দেবে না ইউক্রেনীয়রা: জেলেনস্কি


যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আলোচনার জন্য তিনি আগামী ১৫ আগস্ট আলাস্কায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। গতকাল শুক্রবার তিনি এ ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি ইঙ্গিত দেন, প্রয়োজনে ইউক্রেনকে কিছু ভূখণ্ড রাশিয়ার কাছে ছাড়তে হবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিসহ সব পক্ষই একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। এই চুক্তি হলে সাড়ে ৩ বছর ধরে চলা যুদ্ধের অবসান ঘটতে পারে। তবে এতে ইউক্রেনকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হারাতে হতে পারে।
শুক্রবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, চুক্তিতে ভূমি বিনিময়ের বিষয়ও থাকতে পারে। তাঁর ভাষায়, ‘উভয় পক্ষের স্বার্থে কিছু এলাকা অদলবদল হবে।’
তবে শনিবার প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে ইউক্রেন তাঁর সংবিধান লঙ্ঘন করতে পারবে না। তিনি স্পষ্ট করে দেন, ‘ইউক্রেনের জনগণ তাদের জমি দখলদারদের উপহার দেবে না।’
ক্রেমলিন এক বিবৃতিতে বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সহকারী ইউরি উশাকভ বলেন, বৈঠকে ‘ইউক্রেন সংকটের দীর্ঘমেয়াদি শান্তিপূর্ণ সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি অবশ্যই কঠিন প্রক্রিয়া হবে, তবে আমরা সক্রিয়ভাবে এতে অংশ নেব।’
আজ শনিবার নিজের টেলিগ্রাম চ্যানেলে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে নেওয়া যেকোনো সিদ্ধান্ত শান্তির বিপক্ষে যাবে। তিনি বলেন, ‘এগুলো ব্যর্থ সিদ্ধান্ত হবে, কার্যকর হবে না। আমাদের দরকার বাস্তব ও স্থায়ী শান্তি।’
পুতিন দাবি করছেন, ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল—লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসন—এবং ২০১৪ সালে দখল করা কৃষ্ণ সাগরের উপদ্বীপ ক্রিমিয়া রাশিয়ার অংশ। তবে এসব অঞ্চলের সব এলাকা রাশিয়ার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেই।
এর আগে, ব্লুমবার্গ নিউজের খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কর্মকর্তারা এমন এক সমঝোতার চেষ্টা করছেন, যাতে রাশিয়া দখলকৃত এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা এ খবরকে অনুমানভিত্তিক বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। ক্রেমলিন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। রয়টার্সও ব্লুমবার্গের খবরের বেশ কিছু অংশ নিশ্চিত করতে পারেনি।
ইউক্রেন আগেও জানিয়েছে, যুদ্ধ শেষ করার জন্য তারা কিছুটা নমনীয় হতে প্রস্তুত। তবে দেশের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড হারানো জেলেনস্কি ও তার সরকারের জন্য রাজনৈতিকভাবে বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কূটনীতিক টাইসন বার্কার মনে করেন, ব্লুমবার্গে বর্ণিত প্রস্তাব ইউক্রেন তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করবে। তাঁর ভাষায়, ‘ইউক্রেনের উচিত তাদের আপত্তি ও শর্তগুলো দৃঢ়ভাবে ধরে রাখা এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।’ ব্লুমবার্গের তথ্যমতে, প্রস্তাবিত চুক্তিতে রাশিয়া খেরসন ও জাপোরিঝিয়া অঞ্চলে বর্তমান ফ্রন্ট লাইন থেকে আর অগ্রসর হবে না।