শিরোনাম

পৃথক হচ্ছেন দেওয়ানি আর ফৌজদারি মামলার বিচারক

পৃথক হচ্ছেন দেওয়ানি আর ফৌজদারি মামলার বিচারক

দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার বিচার্য বিষয়, এজলাসের ধরন ও সাক্ষীর প্রকৃতি ভিন্ন রকমের। দুই ধরনের আদালতের বিচারকদের পদও পৃথক আইনের মাধ্যমে পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তারপরও অধস্তন আদালতের বিচারকদের একসঙ্গে উভয় ধরনের আদালতে দায়িত্ব পালন করার কারণে মামলাজট সৃষ্টি হয়। এ কারণে মামলার নিষ্পত্তি বাড়াতে পৃথক আদালত স্থাপন ও পদ সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।

ব্যক্তির অধিকার ও সম্পত্তির অধিকারবিষয়ক ছাড়া অন্য যেকোনো অপরাধ (খুন, অপহরণ, জালিয়াতি ইত্যাদি) ফৌজদারি মামলার অন্তর্ভুক্ত। বিচারকেরা সাধারণত ফৌজদারি মামলা নিষ্পত্তিতে বেশি মনোযোগ দেন। এতে করে দেওয়ানি মামলা ঝুলে থাকে বছরের পর বছর। ভোগান্তিতে পড়তে হয় বিচারপ্রার্থীদের। এ কারণেই সুপ্রিম কোর্ট এমন উদ্যোগ নিয়েছেন। আইনজ্ঞরা বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন।

আদালত পৃথক করার বিষয়ে গত ২১ এপ্রিল আইন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। চিঠিতে বলা হয়, সিভিল কোর্টস অ্যাক্ট (দেওয়ানি আদালত আইন) ১৮৮৭-এর ১৩ ও ১৪ ধারার ক্ষমতাবলে জেলা জজশিপের স্থানীয় অধিক্ষেত্র ও বিচারকার্য অনুষ্ঠানের স্থান এবং কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর (ফৌজদারি কার্যবিধি) ১৮৯৮-এর ৭ ও ৯ ধারার ক্ষমতাবলে সেশনস ডিভিশনের স্থানীয় অধিক্ষেত্র ও বিচারকার্য অনুষ্ঠানের স্থান নির্ধারণ করা হয়। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী জেলা জজশিপ এবং সেশনস ডিভিশন পৃথকভাবে রয়েছে। এটি স্পষ্ট যে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত এবং ওই আদালতের বিচারকের পদ পৃথক আইনের মাধ্যমে পৃথকভাবে উল্লেখ রয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার মোয়াজ্জেম হোসাইন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বর্তমানে একজন বিচারককে একসঙ্গে অনেক ধরনের মামলা নিষ্পত্তি করতে হয়। এতে সময়স্বল্পতার কারণে মামলায় যথাযথভাবে মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না। তাই প্রধান বিচারপতি আদালত পৃথক করার নির্দেশ দিয়েছেন। এতে বিচারকের সংখ্যা যেমন বাড়বে, তেমনি মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। আমরা সুপ্রিম কোর্ট থেকে চিঠি দিয়েছি। এ বিষয়ে এখন মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নেবে।’

এ নিয়ে জানতে চাইলে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ আবু তাহের বিষয়টিকে ‘সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়’ উল্লেখ করে জানান, তাঁর কিছু বলার নেই।

সুপ্রিম কোর্টের চিঠিতে বলা হয়, অধস্তন আদালতসমূহে বর্তমানে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং জেলা ও দায়রা জজ দেওয়ানি আপিল, দেওয়ানি রিভিশন, ফৌজদারি আপিল, ফৌজদারি রিভিশনের পাশাপাশি বিভিন্ন বিশেষ আদালত ও ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসেবে মামলা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এর ফলে বিচারকদের সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও প্রত্যাশিত সংখ্যক মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে মামলার জট দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষত দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হচ্ছে।

আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে আরও বলা হয়, পৃথক এখতিয়ার প্রয়োগের সুবিধার্থে এবং মামলাজট নিরসনের জন্য বিচার বিভাগের সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তন করে পৃথক আদালত স্থাপন ও দরকারিসংখ্যক পদ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। মামলার দ্রুত ও সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে দেওয়ানি ও ফৌজদারি এখতিয়ার অনুসারে জেলা জজশিপ ও সেশনস ডিভিশন পৃথক্‌করণ এবং সংশ্লিষ্ট জজশিপ ও সেশনস ডিভিশনের সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তন করে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পদ সৃষ্টির জন্য প্রধান বিচারপতি নির্দেশনা দিয়েছেন। তাই এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ‘নির্দেশক্রমে অনুরোধ’ করা হলো।

মামলাজট কমাতে আদালত পৃথক করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন আইনজ্ঞরা। আইনজীবীরা বলছেন, আদালত পৃথক করতে পারলে তা হবে যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এতে মামলা নিষ্পত্তি বাড়বে এবং বিচারপ্রার্থীরা হয়রানি থেকে বাঁচবেন।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আদালত পৃথক করার উদ্যোগ খুবই ভালো। এটি বাস্তবায়িত হলে বিচারকেরা মামলার প্রতি আরও মনোযোগ দিতে পারবেন, গবেষণা করতে পারবেন। চিন্তাভাবনা করে ভালোভাবে রায় দিতে পারবেন। এতে মামলা নিষ্পত্তিও বাড়বে।’

অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ড. শাহজাহান সাজু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটি ভালো উদ্যোগ। এই দাবি বিচারকদের দীর্ঘদিনের। উদ্যোগটি বাস্তবায়ন হলে বিচারকাজে গতি আসবে। এটি হবে বড় ধরনের মাইলফলক।’

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর দেওয়া তাঁর অভিভাষণে বলেছিলেন, একজন বিচারক একই সঙ্গে একাধিক কোর্ট এবং ট্রাইব্যুনালের দায়িত্বে থাকেন। এটি বিলুপ্ত করে একজন বিচারককে একটি কোর্টের দায়িত্ব দিতে হবে। এ জন্য আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে হবে। এ ছাড়া দেওয়ানি ও ফৌজদারি এখতিয়ার অনুসারে পৃথক আদালত স্থাপন করা প্রয়োজন। এসবের জন্য সিভিল কোর্টস অ্যাক্ট, ১৮৮৭–এ পরিবর্তন আনতে হবে। সংস্কার প্রক্রিয়ার শুরুতে এখন অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমেও এটা করা সম্ভব।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button