দুই বছরে তৃতীয়, এবার বিলিয়নিয়ার প্রধানমন্ত্রী পেল থাইল্যান্ড


থাইল্যান্ডের পার্লামেন্ট দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আনুতিন চার্নভিরাকুলকে নির্বাচিত করেছে। থাই নির্মাণ খাতের বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী আনুতিন বিরোধী দলের যথেষ্ট সমর্থন আদায় করে এই পদে বসছেন। গত দুই বছরের মধ্যে তিনি দেশটির তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী। এর আগে একাধিক নেতা বিভিন্ন কারণে পদচ্যুত হয়েছেন।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত সপ্তাহে দেশটির সাংবিধানিক আদালত নৈতিকতা ভঙ্গের অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে পদ থেকে সরিয়ে দেন। কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ ব্যবস্থাপনায় তাঁর ভূমিকা ঘিরে এ সিদ্ধান্ত আসে। এরপর আনুতিনের ভূমজাইথাই পার্টি সিনাওয়াত্রা পরিবারের নেতৃত্বাধীন ফেউ থাই জোট থেকে সরে এসে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন নিশ্চিত করে প্রধানমন্ত্রী পদে জয়লাভ করে।
তবে থাইল্যান্ডের জন্য অনিশ্চয়তা এখানেই শেষ হচ্ছে না। দেশটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বারবার আদালতের হস্তক্ষেপ ও সামরিক অভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়েছে।
আনুতিনের ক্ষমতায় আসা সিনাওয়াত্রা পরিবারের জন্য বড় আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে। ২০০১ সালে পেতংতার্নের বাবা থাকসিন সিনাওয়াত্রা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে দেশটির রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে আসছিল পরিবারটি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে থাইল্যান্ডজুড়ে নজর ছিল একটি প্রাইভেট জেটে, যাতে চড়ে থাকসিন দেশ ছেড়েছেন। আজ শুক্রবার ভোরে তিনি সামাজিক মাধ্যমে জানান, চিকিৎসার জন্য দুবাই গেছেন এবং ৯ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজিরার জন্য সময়মতো দেশে ফেরার পরিকল্পনা রয়েছে। ওই মামলায় তাঁর কারাদণ্ডও হতে পারে।
২০২৩ সালের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা ফেউ থাই এখন কার্যত মাঠের বাইরে চলে গেছে। তাদের শেষ প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী ছিলেন চাইকাশেম নিতিসিরি। তবে তিনি খুব একটা পরিচিত নন এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ।
অতীতে সিনাওয়াত্রা পরিবারের জনবান্ধব নীতিগুলো নিম্ন আয়ের থাই জনগণের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন এনে দিয়েছিল। তবে এতে তারা ব্যাংককের রক্ষণশীল রাজতান্ত্রিক অভিজাত গোষ্ঠীর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে।
পেতংতার্ন প্রধানমন্ত্রী হলে অনেকে মনে করেছিলেন, পরিবারটির জন্য এটি ছিল একটি প্রত্যাবর্তন। তবে তাঁর বরখাস্ত হওয়া আবারও প্রমাণ করছে যে, তাঁরা রক্ষণশীল রাজতান্ত্রিক অভিজাতদের অনুকম্পা হারিয়েছে। এর আগে পেতংতার্নের বাবা থাকসিন ও তাঁর বোন ইংলাক—দুজনকেই যথাক্রমে ২০০৬ ও ২০১৪ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল।
পেতংতার্ন ছিলেন সাংবিধানিক আদালতের রায়ে বরখাস্ত হওয়া পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী। তাঁদের সবাই ছিলেন থাকসিন-সমর্থিত প্রশাসনের সদস্য। তিনি নিজেও দায়িত্ব নেন পূর্বসূরির বরখাস্ত হওয়ার পর, যিনি একই আদালতের রায়ে নৈতিকতা ভঙ্গের অভিযোগে পদ হারিয়েছিলেন।
এমনকি ফেউ থাই নেতৃত্বাধীন জোট সরকার গঠন করেছিল তখনই, যখন নির্বাচনে বিজয়ী সংস্কারবাদী দলকে সরকার গঠনে বাধা দেওয়া হয়। পরে সে দলকে সাংবিধানিক আদালত ভেঙে দেন এবং কয়েকজন নেতাকে ১০ বছরের জন্য রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করেন।
ক্রাইম জোন ২৪