শিরোনাম
আজই তাহলে সিরিজ বাংলাদেশের, খেলা দেখবেন কোথায়মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য শিখরের ভাই হিসাম গ্রেপ্তার৪ ঘণ্টা ধরে অপারেশন, লাইফ সাপোর্টে শিক্ষার্থী মামুননয়া বিশ্ব ব্যবস্থার ভিশন উন্মোচন করলেন সি চিনপিংমৃত্যুর গুজব ভাইরাল, ট্রাম্প বললেন— জীবনে কখনো এত ভালো বোধ করিনি‘আমেরিকানরা ভারতীয় দলকে ভাগাড় মনে করে’, ডেটা সায়েন্টিস্টের টুইট নিয়ে আলোচনার ঝড়সাকিবের তাণ্ডবের রাতে ঝোড়ো সেঞ্চুরিতে রেকর্ড গড়লেন নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটাররাহুল গান্ধীর এক বছর আগের মন্তব্য ঘিরে নতুন রাজনৈতিক বিতর্কঢাকার বাতাস শিশু ও বয়স্কদের জন্য অস্বাস্থ্যকরসিলেট থেকেই আজ আসতে পারে নির্বাচনী রোডম্যাপ

রাহুল গান্ধীর এক বছর আগের মন্তব্য ঘিরে নতুন রাজনৈতিক বিতর্ক

রাহুল গান্ধীর এক বছর আগের মন্তব্য ঘিরে নতুন রাজনৈতিক বিতর্ক

ভারতের কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ফের আইনি জটিলতায় পড়লেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে শিখ সম্প্রদায় নিয়ে তাঁর এক বক্তব্যকে ঘিরে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, সেই ইস্যুতেই এবার সরাসরি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে হলো তাঁকে। খবর অনুযায়ী, উত্তর প্রদেশের বারাণসীর এমপি-এমএলএ বিশেষ আদালতের নির্দেশের বিরুদ্ধে রাহুল গান্ধী একটি পুনর্বিবেচনা পিটিশন দায়ের করেছেন। আগামী আজ সোমবার এই মামলাটি বিচারপতি সমীর জৈনের একক বেঞ্চে শোনানি হবে।

ঘটনার সূত্রপাত প্রায় এক বছর আগে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি অনুষ্ঠানে রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেছিলেন, ভারতে শিখদের জন্য পরিবেশ অনুকূল নয়। তাঁর এই বক্তব্যকে ‘উস্কানিমূলক ও বিভাজন সৃষ্টিকারী’ বলে আখ্যা দিয়ে দেশীয় রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল। প্রতিবাদে সরব হয় বিভিন্ন সংগঠন। উত্তর প্রদেশের বারাণসীর বাসিন্দা নাগেশ্বর মিশ্র এ নিয়ে সরণাথ থানায় এফআইআর করার চেষ্টা করেন, কিন্তু তা গৃহীত হয়নি। এরপর তিনি আদালতের দ্বারস্থ হন।

২০২৪ সালের ২৮ নভেম্বর বারাণসীর অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট (এসিজেএম) মামলাটি খারিজ করে দেন এই যুক্তিতে যে, বক্তব্যটি মার্কিন মাটিতে দেওয়া হয়েছিল, তাই এ বিষয়ে আদালতের এখতিয়ার নেই। কিন্তু সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে মিশ্র উচ্চতর আদালতে যান। অবশেষে ২০২৫ সালের ২১ জুলাই এমপি-এমএলএ বিশেষ আদালত নির্দেশ দেয়, এসিজেএমকে আবার নতুন করে আবেদনটি শুনতে হবে। আর সেই নির্দেশের বিরুদ্ধেই রাহুল গান্ধী সরাসরি আলাহাবাদ হাইকোর্টে গিয়ে পুনর্বিবেচনা চাইলেন।

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এখানে মূল প্রশ্ন হচ্ছে—ভারতের বাইরে কোনো মাটিতে দেওয়া বক্তব্য নিয়ে দেশের আদালতের এখতিয়ার কেমন হবে। রাহুল গান্ধীর আইনজীবীরা দাবি করেছেন, বিশেষ আদালতের নির্দেশ ‘ভুল, বেআইনি এবং এখতিয়ারবিহীন’। অন্যদিকে অভিযোগকারী পক্ষ বলছে, বক্তব্যে ভারতের অভ্যন্তরে বিভাজনমূলক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাই বিষয়টি এড়ানো সম্ভব নয়।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার দিক থেকেও ঘটনাটি গুরুত্বপূর্ণ। বিজেপি শিবির দীর্ঘদিন ধরেই রাহুল গান্ধীর বিদেশ সফরের বক্তব্যগুলোকে হাতিয়ার করছে। বিজেপির অভিযোগ, কংগ্রেস নেতা বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছেন এবং বিভাজনমূলক মন্তব্য করেছেন।

এবার শিখ প্রসঙ্গটি নতুন করে রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্ককে উসকে দিতে পারে। পাঞ্জাবে যেখানে শিখ ভোটের বড় ভূমিকা রয়েছে, সেখানে এই ইস্যু ভবিষ্যতের নির্বাচনী সমীকরণেও প্রভাব ফেলতে পারে।

অন্যদিকে কংগ্রেসের অবস্থান স্পষ্ট—তাদের দাবি, রাহুল গান্ধীর বক্তব্য ছিল বাস্তব পরিস্থিতির প্রতিফলন, যা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিকৃত করা হচ্ছে। কংগ্রেস নেতারা অভিযোগ তুলেছেন, বিজেপি বারবার আদালত ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়াকে ব্যবহার করে বিরোধী নেতাদের চাপে রাখছে।

ভারতের রাজনীতিতে এই ঘটনাটির গুরুত্ব আরও বাড়ছে কারণ, বেশ কয়েকটি রাজ্য নির্বাচন সামনে। পাঞ্জাব ও উত্তর প্রদেশের মতো বড় রাজ্যে এই বিতর্ক রাজনৈতিক তর্কের অন্যতম কেন্দ্রে চলে আসতে পারে। বিশেষ করে শিখ ভোটকে ঘিরে কংগ্রেস এবং আঞ্চলিক দলগুলির অবস্থান এখানে নজর কাড়বে।

আইন বিশেষজ্ঞরা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, বিদেশে প্রদত্ত বক্তব্য নিয়ে ভারতীয় আদালতে মামলা চলা আদৌ কতটা বাস্তবসম্মত, সেটাই বড় প্রশ্ন। তবে এই বিতর্ক ইতিমধ্যেই নতুন রাজনৈতিক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া ব্লক’ হয়তো এটিকে বিজেপির ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ হিসেবে তুলে ধরবে। অন্যদিকে বিজেপি এই ইস্যুতে কংগ্রেসকে আক্রমণের সুযোগ পেয়ে গেছে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, রাহুল গান্ধীর শিখ মন্তব্য ঘিরে তৈরি হওয়া আইনি ও রাজনৈতিক জটিলতা ভারতের রাজনীতির অঙ্গনে নতুন করে উত্তাপ বাড়াচ্ছে। আদালতের সিদ্ধান্ত আগামী দিনে শুধু রাহুল গান্ধীর নয়, বিরোধী রাজনীতিরও এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।


ক্রাইম জোন ২৪

আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button