পশ্চিম তীর দখলের কথা ভাবছে ইসরায়েল


ফ্রান্সসহ পশ্চিমা বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিম তীর দখল করে ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত করার কথা ভাবছে দেশটির নেতারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিন ইসরায়েলি কর্মকর্তার বরাতে এ তথ্য জানা গেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গতকাল রোববার রাতে ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় দখল করা পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সার্বভৌমত্বের সম্প্রসারণ, অর্থাৎ কার্যত সংযুক্তিকরণের বিষয়টি দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে ছিল। তবে এই বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানা যায়নি।
তবে এ ধরনের পদক্ষেপ—অর্থাৎ, সংযুক্তিকরণ কখন এবং কোথায় কার্যকর হতে পারে তা স্পষ্ট নয়। কেবল ইসরায়েলিরা যেসব এলাকায় বসতি স্থাপন করেছে, নাকি তার কিছু অংশে, কিংবা পশ্চিম তীরের নির্দিষ্ট কোনো অঞ্চলে—যেমন জর্ডান ভ্যালিতে—এ পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত।
এ ছাড়া, এ বিষয়ে আলোচনা হলেও আইনগত প্রক্রিয়া দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ হওয়ায় কোনো বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা আছে। পশ্চিম তীরে সংযুক্তিকরণের যেকোনো পদক্ষেপ ফিলিস্তিনিদের প্রবল নিন্দার মুখে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফিলিস্তিনিরা ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের জন্য এ অঞ্চল দাবি করে আসছে। একই সঙ্গে আরব দেশ ও পশ্চিমা বিশ্বের বিরোধিতার মুখে পড়বে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সা’র ওয়াশিংটনে সফরের সময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা করেছিলেন কি না—সে বিষয়ে সা’রের মুখপাত্র মন্তব্য করতে রাজি হননি। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের দপ্তরও কোনো মন্তব্য করেনি।
এর আগে, ২০২০ সালে নেতানিয়াহু পশ্চিম তীরের ইহুদি বসতি ও জর্ডান ভ্যালি সংযুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তবে সেটি শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়। গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র জানায়, জাতিসংঘের বৈঠকে যোগ দিতে মাহমুদ আব্বাসকে নিউইয়র্ক ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হবে না। ওই বৈঠকেই ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
গাজায় চলমান যুদ্ধ নিয়ে আন্তর্জাতিক সমালোচনা বাড়তে থাকলেও ফ্রান্স, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার এই ঘোষণা ইসরায়েলকে আরও ক্ষুব্ধ করেছে। ২০২৪ সালে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত রায় দিয়েছে যে, পশ্চিম তীরসহ অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ও সেখানকার ইসরায়েলি বসতি অবৈধ এবং যত দ্রুত সম্ভব তা প্রত্যাহার করতে হবে।
তবে ইসরায়েল বলছে, এ ভূখণ্ডগুলো আইনি দিক থেকে অধিকৃত নয়, বরং ‘বিতর্কিত ভূমি’। কিন্তু জাতিসংঘ ও বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এগুলোকে অধিকৃত অঞ্চল হিসেবেই বিবেচনা করে। পূর্ব জেরুজালেম ও গোলান মালভূমি সংযুক্ত করার ঘোষণা ইসরায়েল আগে দিয়েছে, তবে এর কোনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি।
নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিম তীরের অংশ সংযুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছেন। ইসরায়েল এ ভূখণ্ডকে নিজেদের ‘বাইবেল ও ঐতিহাসিক সম্পর্কিত ভূমি’ বলে দাবি করে।
ক্রাইম জোন ২৪