এনভিডিয়ার রেকর্ড ৪,৬৭০ কোটি ডলার আয়, চীনে বিক্রি নিয়ে জটিলতা


বিশ্বের সর্বাধিক মূল্যবান কোম্পানি এনভিডিয়া চলতি ত্রৈমাসিকে আবারও ব্যাপক আয় ও মুনাফার হিসাব প্রকাশ করেছে। গতকাল বুধবার প্রকাশিত আয় বিবরণীতে দেখা গেছে, কোম্পানিটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৬ শতাংশ বেশি, অর্থাৎ ৪৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৬৭০ কোটি ডলার রাজস্ব অর্জন করেছে।
এই প্রবৃদ্ধির প্রধান উৎস ছিল এআই-ভিত্তিক ডেটা সেন্টার ব্যবসা, যেখানে এক বছরের ব্যবধানে রাজস্ব বেড়েছে ৫৬ শতাংশ।
কোম্পানিটির নিট আয়ও বেড়েছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে এনভিডিয়ার নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৬৪০ কোটি ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৫৯ শতাংশ বেশি।
এবারের প্রান্তিকে শুধু ডেটা সেন্টার থেকে এনভিডিয়া আয় করেছে ৪১ দশমিক ১ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ১১০ কোটি ডলার। এর মধ্যে ‘ব্ল্যাকওয়েল’ নামের নতুন প্রজন্মের উন্নত চিপ বিক্রি করে আয় হয়েছে ২৭ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলার।
এ প্রসঙ্গে এনভিডিয়ার সিইও জেনসেন হুয়াং বলেন, ‘ব্ল্যাকওয়েল সেই এআই প্ল্যাটফর্ম, যার জন্য বিশ্ব অপেক্ষা করছিল। এআই প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে এবং এই প্রতিযোগিতার কেন্দ্রে রয়েছে ব্ল্যাকওয়েল।’
তিনি বলেন, চলতি দশকের শেষে এআই অবকাঠামো খাতে ৩ থেকে ৪ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে বলে কোম্পানিটি প্রত্যাশা করছে। এক বিশ্লেষককে তিনি বলেন, ‘পরবর্তী পাঁচ বছরে ৩ থেকে ৪ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় খুবই যৌক্তিক পূর্বাভাস।’
এনভিডিয়া আরও জানিয়েছে, চলতি মাসের শুরুতে ওপেনএআইয়ের ওপেন সোর্স মডেল জিপিটি–ওএসএস (gpt-oss) চালুতে তারা সহায়তা করেছে। কোম্পানির দাবি, একটি এনভিডিয়া ব্ল্যাকওয়েল জিবি২০০ এনভিএল৭২ র্যাংক-স্কেল সিস্টেম ব্যবহার করে প্রতি সেকেন্ডে ১৫ লাখ টোকেন প্রসেস করা হয়েছে।
তবে আয় বিবরণীর পাশাপাশি কোম্পানির চীনে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে জটিলতার কথাও উঠে এসেছে। গত প্রান্তিকে চীনের জন্য নির্মিত এইচ২০ চিপ একটিও বিক্রি হয়নি দেশটির কোনো গ্রাহকের কাছে। তবে চীনের বাইরের একজন গ্রাহকের কাছে ৬৫০ মিলিয়ন বা ৬৫ কোটি ডলারের এইচ২০ চিপ বিক্রির কথা জানিয়েছে কোম্পানিটি।
যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই উন্নত জিপিইউ বিক্রির ওপর চীনের জন্য নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে। এখন একটি নতুন ব্যবস্থার আওতায় কোম্পানিগুলো ১৫ শতাংশ ‘রপ্তানি কর’ যুক্তরাষ্ট্রের কোষাগারে পরিশোধ করলে চীনে চিপ বিক্রির অনুমতি পাচ্ছে।
আইনজ্ঞদের মতে, এই ব্যবস্থা একধরনের সাংবিধানিক সীমা লঙ্ঘন এবং ক্ষমতার অপব্যবহার। কারণ এটি এখনো কোনো ফেডারেল আইনে পরিণত হয়নি।
এনভিডিয়ার প্রধান অর্থ কর্মকর্তা কোলেট ক্রেস বলেন, এই অনিশ্চয়তার কারণেই চীনে এইচ২০ চিপ পাঠানো হয়নি। গত কয়েক সপ্তাহে চীনা কিছু গ্রাহক লাইসেন্স পেলেও এখন পর্যন্ত ওই লাইসেন্সের আওতায় কোনো ডিভাইস পাঠানো হয়নি।
তবে কোম্পানিটি আরও জানিয়েছে, চীনা সরকার দেশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এনভিডিয়ার চিপ ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে এনভিডিয়া চলতি মাসের শুরুতেই এইচ২০ চিপের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়।
তথ্যসূত্র: টেকক্রাঞ্চ
ক্রাইম জোন ২৪