শিরোনাম
উপজেলা আনসারকে ঢেলে সাজানো হয়েছে: মহাপরিচালকমুস্তাফা মনোয়ারের জন্মদিনে নাটক ‘বন্যথেরিয়াম’ ও পাপেট শোপ্রান্তিক মানুষের ব্যাংক হিসাব এনএফএ (NFA) নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন তথ্য প্রকাশবাংলাদেশের ‘লোক’ লড়বে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যান্টাসটিক ফেস্টেবিদেশি এয়ারলাইন্সের GSA নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত আসছেঢাকাসহ সারাদেশে নির্বাচনী নিরাপত্তা কৌশল চূড়ান্তের পথে, ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র ও প্রার্থীদের তথ্য বিশ্লেষণে পুলিশ সদর দপ্তর সক্রিয়নির্বাচন ঘিরে কড়া নজরদারি শুরুকরতোয়া ও সাঁও নদীতে অবৈধ ড্রেজার মেশিনের হুমকি ও নদী ভাঙননির্মাণ শেষে আটকে আছে ‘নেটওয়ার্ক’ভাইরাল টিকটকার মাহি এবার থানায়!

করতোয়া ও সাঁও নদীতে অবৈধ ড্রেজার মেশিনের হুমকি ও নদী ভাঙন

করতোয়া ও সাঁও নদীতে অবৈধ ড্রেজার মেশিনের হুমকি ও নদী ভাঙন

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দিন-রাত চলছে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর ও বালু তোলার কাজ। বিশেষ করে উপজেলার সাঁও, চাওয়াই ও করতোয়া নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে নির্বিচারে। এতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ নষ্ট হচ্ছে এবং আশঙ্কা দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙনের। নদীর দুই তীর, ফসলি জমি ও বসতভিটার মাটি ঝুঁকির মুখে পড়ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নদী ও ফসলি জমিতে দিন-রাত এসব মেশিনের গর্জন চলছে। প্রশাসন নিয়মিত অভিযান চালিয়ে মামলা করছে, মেশিন জব্দ ও ধ্বংস করছে; কিন্তু প্রভাবশালী চক্রকে থামানো যাচ্ছে না। একটি ড্রেজার মেশিন ধ্বংস হলে পরদিনই সেখানে নতুন মেশিন বসিয়ে অবাধে বালু তোলা শুরু হয়।

ড্রেজারের দাপটে একরের পর একর সমতল তিন ফসলি জমি গর্তে পরিণত হয়েছে। আগে এসব জমিতে ধান, আলু, ভুট্টা এবং বিভিন্ন সবজি ফলানো হতো। অনেকেই অর্থের লোভে নিজের জমি ভাড়া দিয়েছেন ড্রেজারমালিকদের কাছে। এতে অল্প কিছু লাভ হলেও জমি স্থায়ীভাবে নষ্ট হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে চাষাবাদ করা সম্ভব হবে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক কৃষক বলেন, ‘আমি নিজের জমি ড্রেজার দিয়ে কাটতে দিয়েছি। প্রথমে কিছু টাকা পেয়েছিলাম, কিন্তু এখন জমি একেবারে গর্ত হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে আর কিছুই ফলানো যাবে না। আমরা নিজেই আমাদের ক্ষতি ডেকে এনেছি।’

আইন অনুযায়ী সীমান্ত থেকে ১৫০ গজের মধ্যে বালু-পাথর উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, বিজিবি ও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে সীমান্তঘেঁষে প্রতিদিন ড্রেজার মেশিন বসানো হচ্ছে। গত ছয় মাসে খনিজ সম্পদ আইনে অন্তত ১৭টি মামলা হয়েছে। প্রায় ১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে এসব মামলায়। এ সময়ে ২৫-৩০টি ড্রেজার জব্দ এবং ৩০টির বেশি ধ্বংস করা হলেও পরিস্থিতি আগের মতোই অনিয়ন্ত্রিত। প্রশাসনের অভিযান শেষ হওয়ার পরপরই নতুন ড্রেজার বসিয়ে পুনরায় পাথর-বালু উত্তোলন শুরু হয়।

স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, সাঁও ও করতোয়া নদীতে ড্রেজার বসিয়ে তলদেশ কেটে ফেলা হচ্ছে। এতে নদীর স্বাভাবিক গতি নষ্ট হচ্ছে, জমির মাটিও দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। ফলে সামনের দিনে ভয়াবহ নদীভাঙন দেখা দিতে পারে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) পঞ্চগড় জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম জুয়েল বলেন, ‘তেঁতুলিয়ার নদী ও সমতলজুড়ে এখন গর্ত আর গর্ত।

ড্রেজার দিয়ে প্রতিদিন পাথর-বালু তোলায় ভূগর্ভ ফাঁপা হয়ে যাচ্ছে। এতে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।’

এদিকে মেশিনমালিকদের অভিযোগ, পাথর-বালু তোলার প্রতিটি সাইট থেকে প্রতিদিন ৭-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয় চাঁদা হিসেবে। এ থেকে প্রতিদিন যে বিপুল অর্থ আদায় হয় তার ভাগ পান প্রভাবশালীরা।

অন্যদিকে শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, তাঁরা সনাতন পদ্ধতিতে পাথর-বালু তুলছেন। তবে বাস্তবে দেখা যায়, সোর্সদের মাধ্যমে প্রশাসনের অভিযানের খবর আগে থেকে পৌঁছে যায় কোয়ারিগুলোতে। ফলে অনেক সময় অভিযান চালালেও ঘটনাস্থলে কাউকে পাওয়া যায় না।

তেঁতুলিয়া মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নজির হোসেন আজকের পত্রিকা‘কে বলেন, ‘ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে পাথর-বালু তোলার বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। যাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে। আইন ভঙ্গকারীরা কেউ ছাড় পাবে না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, ‘অভিযান চালিয়ে গত ৪৮ ঘণ্টায় কয়েকটি ড্রেজার মেশিন ধ্বংস করেছি। নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। খবর পেলেই দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর চেষ্টা করি। অবৈধ পাথর-বালু উত্তোলন বন্ধ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’


ক্রাইম জোন ২৪

আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button