মাইলস্টোন স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়ম, গাফিলতি ও কোচিং-বাণিজ্যের অভিযোগ


রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়ম, গাফিলতি ও কোচিং-বাণিজ্যের অভিযোগ এনেছে দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবার। একই সঙ্গে তাঁরা স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ, রানওয়ে এলাকা থেকে স্কুলটি সরানো, ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ ৯ দফা দাবি জানিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবার সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ ও দাবি তুলে ধরে।
গত ২১ জুলাই দুপুরে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে স্কুলটির শিক্ষক, শিক্ষার্থী, আয়া, অভিভাবকসহ ৩৬ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন শতাধিক মানুষ।
আজ সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, সেদিন যদি ক্লাসের পর কোচিং না করানো হতো, তাহলে এত প্রাণহানি হতো না। ক্লাস শেষ হওয়ার পর এসব কোচিংই শিক্ষার্থীদের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোচিং করতে শিশুদের বাধ্য করা হয়। মাইলস্টোন স্কুলে কোচিং বন্ধ করার জন্য এর আগে বহুবার আন্দোলন হয়েছে। স্কুলে এমন এক সিস্টেম দাঁড় করানো হয়েছে যে, কোচিং করলে বাচ্চাদের শিক্ষকেরা আদর করেন, পরীক্ষায় ভালো নম্বর দেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দুর্ঘটনায় নিহত তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তারের মামা লিয়ন মীর, তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মরিয়ম উম্মে আফিয়ার মা উম্মে তামিমা এবং অষ্টম শ্রেণির তানভীর আহমেদের বাবা রুবেল মিয়া। তাঁরা নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবারের পক্ষ থেকে ৯টি দাবি পেশ করেন।
বিমান দুর্ঘটনার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও অনিয়মকে দায়ী করেন নিহত ফাতেমা আক্তারের মামা লিয়ন মীর। তিনি বলেন, ‘মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও অনিয়মই এই বড় রকমের প্রাণহানির জন্য দায়ী। স্কুলে ছিল না কোনো অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, ছিল না সতর্কীকরণ ব্যবস্থা। আমরা চাই না, ভবিষ্যতে আমাদের মতো আর কেউ সন্তানহারা হোক।’
সংবাদ সম্মেলনে প্রথম তিনটি দাবি পাঠ করেন লিয়ন মীর। সেগুলো হলো আইন অমান্য ও নিয়ম ভঙ্গ করে কোচিং-বাণিজ্যের মাধ্যমে শিশুদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। মাইলস্টোনসহ সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষকে নিহতের স্বজনদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
এরপরের তিনটি দাবি পড়ে শোনান নিহত মরিয়ম উম্মে আফিয়ার মা উম্মে তামিমা। তিনি বলেন, রানওয়ে এলাকা থেকে মাইলস্টোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নামক কোচিং সেন্টার স্থানান্তর করতে হবে। মাইলস্টোনে কোচিং-বাণিজ্যের মূল হোতাদের দ্রুত অপসারণ করে তাঁদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রদানকারী শিক্ষকদের অপসারণ এবং আইনের আওতায় আনতে হবে।’
বাকি তিনটি দাবি পাঠ করেন নিহত তানভীর আহমেদের বাবা রুবেল মিয়া। তিন বলেন, ঘটনার প্রকৃত চিত্র জানতে মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষকে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ প্রকাশ করতে হবে। জনস্বার্থে রিটকারী আইনজীবীর রিট অনুযায়ী সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণের রিট বাস্তবায়ন করতে হবে। বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জনহীন এলাকায় স্থানান্তর করতে হবে।
ক্রাইম জোন ২৪