শিরোনাম

বিমান ভ্রমণে যেসব জিনিস বহন করা যাবে না

বিমান ভ্রমণে যেসব জিনিস বহন করা যাবে না

বিশ্বের যেকোনো আন্তর্জাতিক বিমানযাত্রার ক্ষেত্রে যাত্রীদের নিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক নিয়মাবলি এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের নির্দিষ্ট নির্দেশনা অনুযায়ী কিছু জিনিস কেবিন ব্যাগে বহন করা যায় না। যা আহত করতে পারে, নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বা যাত্রাপথে ঝুঁকির কারণ হতে পারে, তা শুধু চেক-ইন ব্যাগে নেওয়া সম্ভব এবং সে ক্ষেত্রেও যথাযথভাবে প্যাক করা বাধ্যতামূলক।

কেবিন ব্যাগে সীমিত ও নিষিদ্ধ জিনিসপত্র

যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেবিন ব্যাগে কিছু জিনিস বহন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। এর মধ্যে রয়েছে–

  • ১০০ মিলিলিটারের বেশি তরল, ক্রিম, জেল, পেস্ট বা অ্যারোসোল। ছোট বোতল ও প্যাকেটেও যাত্রাপথের নিয়ম অনুযায়ী অনুমোদিত সীমার বেশি হলে তা কেবিনে নেওয়া যাবে না।
  • আসল বা খেলনা অস্ত্র, শস্ত্র ও গোলাবারুদ। এর মধ্যে রয়েছে খেলনা গুলি, যা আসল অস্ত্রের মতো দেখতে, যা নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।
  • বিস্ফোরক পদার্থ, আতশবাজি বা ফায়ারওয়ার্ক।
  • যে কোনো ধরনের ছুরি, লেটার ওপেনার, ধাতব কাটলার, স্লিংশট, কাঁচি, নখের কাটার মেশিন, সেলাইয়ের সুঁই বা সুতির সুতা।
  • হাইপোডারমিক সুঁই ও সিরিঞ্জ (চিকিৎসা সনদ থাকলে ব্যতিক্রম)।
  • লেজার পয়েন্টার, লাইটার এবং কিছু ধরনের নোটবুক বা ব্যাগের ভেতরে থাকা সরঞ্জাম।

চেক-ইন ব্যাগে সীমিত জিনিসপত্র

চেক-ইন ব্যাগে কিছু জিনিস বহন করা সম্ভব হলেও তা বিশেষ নিয়ম মেনে করতে হবে। এতে রয়েছে–

  • বিস্ফোরক ও অগ্নিসংবেদনশীল পদার্থ, যেমন—ফ্লেয়ার গান, হ্যান্ড গ্রেনেড, ডায়নামাইট, প্লাস্টিক এক্সপ্লোসিভ, আতশবাজি।
  • কম্প্রেসড গ্যাস, যেমন—অক্সিজেন, বাটেন, লিকুইড নাইট্রোজেন, এস্কেলেটেড ডাইভিং সিলিন্ডার।
  • জ্বালানি ও দাহ্য পদার্থ, যেমন গ্যাস, টর্চ, লাইটার ফ্লুইড, কুকিং ফুয়েল।
  • বিষাক্ত ও সংক্রমণ সৃষ্টিকারী পদার্থ, যেমন—কীটনাশক, জীবাণু বা ভাইরাসযুক্ত উপকরণ।
  • ক্ষার, অ্যাসিড, মর্কারি, ওয়েট সেল ব্যাটারি, ওভেন বা ড্রেন ক্লিনার।
  • অন্যান্য বিপজ্জনক জিনিস, যেমন—ম্যাগনেটিক বা এলার্মযুক্ত ব্যাগ।

অস্ত্র ও গোলাবারুদ

বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদন ছাড়া যাত্রী কেবিনে কোনো ধরনের অস্ত্র বহন করতে পারবেন না। যদি অনুমোদন থাকে, চেক-ইন ব্যাগে কেবল নির্দিষ্টভাবে প্যাক করা অস্ত্র বহন করা যাবে। এর মধ্যে রয়েছে ছুরি, তলোয়ার, মার্শিয়াল আর্টের অস্ত্র, বক্স কাটার, স্পিয়ার গান, লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্র।

ব্যতিক্রম ও বিশেষ অনুমোদন

যাত্রাপথে প্রয়োজনীয় সীমিত পরিমাণ ওষুধ, পারফিউম, হেয়ার স্প্রে এবং কিছু ব্যক্তিগত যত্নের দ্রব্য অনুমোদিত। এগুলো অবশ্যই যাত্রীকে নিজ হাতে বহন করতে হবে এবং নির্ধারিত সীমার মধ্যে থাকতে হবে। এ ছাড়া, এসব জিনিস যথাযথভাবে প্যাক করলে এয়ার কার্গোতেও পাঠানো সম্ভব।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিয়মাবলি

ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্দেশনা অনুযায়ী কেবিন ব্যাগ ও যাত্রী বহনে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ জিনিসের মধ্যে রয়েছে–

  • সব ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র, খেলনা বা নকল অস্ত্র, যেগুলো প্রকৃত অস্ত্রের মতো দেখায়।
  • ধারালো বা তেজধারী জিনিস, যেমন—তলোয়ার, ছুরি, আয়স পিক্স, কাঁচি।
  • শ্রমিকদের সরঞ্জাম, যা আঘাত করতে বা বিমানের নিরাপত্তা বিপন্ন করতে পারে, যেমন—করোবার, ড্রিল, সি সড্রিল, স্যান্ডিং সরঞ্জাম।
  • হঠাৎ আঘাত করতে পারা শক্ত বস্তু, যেমন—ক্রিকেট বা বেসবল ব্যাট, ক্রীড়া ব্যাটন।
  • বিস্ফোরক ও অগ্নিসংবেদনশীল পদার্থ, যেমন—গোলাবারুদ, ব্লাস্টিং ক্যাপ, ডায়নামাইট, আতশবাজি।

নিরাপত্তা সতর্কতা

বিমানে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বিমান কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। কেবিনে নিষিদ্ধ জিনিসপত্র বহন করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং জরিমানা ও দায়িত্বমূলক পদক্ষেপের সম্মুখীন হতে হবে। নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত ভ্রমণের জন্য যাত্রীদের এই নিয়মাবলি কঠোরভাবে মানা জরুরি।

বিমানভ্রমণ নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত রাখতে যাত্রীদের উচিত এই নিয়মাবলি মেনে চলা, যাতে তাদের নিজের সুরক্ষা এবং অন্য যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকে। মনে রাখবেন, ছোটখাটো অসাবধানতাও বড় ঝুঁকির কারণ হতে পারে। তাই, যাত্রা শুরু করার আগে ব্যাগ পরীক্ষা করে নিশ্চিত হোন যে কোন নিষিদ্ধ জিনিস আপনার কেবিন বা চেক-ইন ব্যাগে নেই।

সূত্র: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস


ক্রাইম জোন ২৪

আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button