ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্পে ডিএমটিসিএল ও ডিটিসিএর দ্বন্দ্ব: প্রকল্প জটিলতার শঙ্কা


রাজধানীতে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। ডিটিসিএর অভিযোগ, আইন অনুযায়ী ডিটিসিএর অধীন কোম্পানি হয়েও ডিএমটিসিএল সরাসরি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। এতে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিভ্রান্তি ও জটিলতা তৈরি হচ্ছে।
ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার ১১ আগস্ট সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর পাঠানো চিঠিতে এসব বিষয় মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন। এ চিঠি থেকেই দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।
চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে নীলিমা আখতার আজকের পত্রিকা‘কে বলেন, ‘চিঠি দেখে মন্তব্য করতে হবে। এখনই বলতে পারছি না। চিঠি দেখে আপনাকে জানাব।’
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ডিটিসিএর ওই চিঠিতে বলা হয়, ২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারি সরকারের অনুমোদনে মাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ডিএমটিসিএল গঠিত হয়। কোম্পানিটি প্রাথমিক পর্যায় থেকেই ডিটিসিএর অনুমোদন নিয়ে কার্যক্রম শুরু করলেও বর্তমানে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করছে। এতে করে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে এবং নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ হিসেবে ডিটিসিএ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। মেট্রোরেল আইন অনুযায়ী ডিএমটিসিএল ডিটিসিএর অধীন একটি কোম্পানি। তাই মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাদের সব যোগাযোগ ডিটিসিএর মাধ্যমে হওয়া উচিত। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এ ধরনের প্রকল্পভিত্তিক কোম্পানিগুলো নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের অধীনে থেকে পরিচালিত হয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের কারণে মেট্রোরেলের যাত্রী ও তৃতীয় পক্ষের বিমা না করা, লাইসেন্স গ্রহণে বিলম্ব, সম্পদ ব্যবস্থাপনায় অনিয়মসহ একাধিক জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এ জন্য ভবিষ্যতে সব ধরনের সিদ্ধান্ত, নির্দেশনা ও কার্যক্রম ডিটিসিএর মাধ্যমে সম্পন্ন করার জন্য মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে। এ ছাড়া চিঠিতে ডিএমটিসিএলকে অফিশিয়াল ব্যানার, সাইনবোর্ড ও প্রকাশনায় ‘ডিটিসিএর অধীন কোম্পানি’ উল্লেখ করার নির্দেশনা দিতে মন্ত্রণালয়ের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।
চিঠির অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানতে চাইলে ডিএমটিসিএলের পরিচালক (প্রশাসন) এ কে এম খায়রুল আলম আজকের পত্রিকাকে জানান, ডিএমটিসিএলের লাইসেন্সিং-সংক্রান্ত টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন অনুযায়ী যেসব কাগজপত্র রয়েছে, সেগুলো অবশ্যই ডিটিসিএর মাধ্যমেই পাঠানো হয়। তবে যেসব বিষয় তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, সেগুলো তাঁরা সরাসরি মন্ত্রণালয়ে পাঠান। সবকিছুই ডিটিসিএকে জানাতে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। কর্তৃপক্ষ হিসেবে ডিটিসিএর যে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, তা তাঁরা মানছেন। তাঁরা কোনো নিয়ম ভঙ্গ করছেন বলে মনে করেন না।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের মেট্রোরেল আইন এবং ২০১৬ সালের বিধিমালা অনুযায়ী, মেট্রোরেল নির্মাণ ও রুট পরিবর্তনের জন্য ডিটিসিএ থেকে অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক। তবে এমআরটি-৬-এর মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত রুট সম্প্রসারণের জন্য ডিএমটিসিএল ডিটিসিএর অনুমোদন নেয়নি।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেট্রোরেল রাজধানীর গণপরিবহনে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারে। তবে ডিএমটিসিএল এবং ডিটিসিএর দ্বন্দ্ব দ্রুত নিরসন না হলে প্রকল্পের কার্যকারিতা, যাত্রীসেবা ও ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ পরিকল্পনা সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শুরু থেকে ডিটিসিএ-কে ক্ষমতাহীনভাবে তৈরি করা হয়েছে। পজিশনাল বা কারিগরি ক্ষমতা না থাকার কারণে ডিটিসিএ কার্যত একটি পঙ্গু প্রতিষ্ঠান। মূলত কিছু লোকের সুবিধার জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এই প্রতিষ্ঠান গঠন করেছে। বিশ্বে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের যে কাজ, তা আমাদের দেশে হয় না।’
ক্রাইম জোন ২৪