সুদের টাকা না দেওয়ায় ঘরে তালা, ৮ দিন ধরে বাইরে রিকশাচালকের পরিবার


সুদের টাকার জন্য একরাম নামের এক রিকশাচালকের বসতঘরে তালা লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে গত আট দিন ধরে ঘরের বাইরে সন্তানদের নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে পরিবারটি।
ঘটনাটি ঘটেছে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চরবগুলা গ্রামে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, একরাম হোসেন উপজেলার চরবগুলা গ্রামে সরকারি প্রকল্পের একটি ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছেন। নিজের প্রয়োজনে একই এলাকার তোফায়েল আহম্মদ নামের এক ব্যক্তি থেকে মাসিক লাভের টাকা দেওয়ার চুক্তিতে কিছু টাকা নেন।
একরাম দারিদ্র্যের কারণে দীর্ঘদিন চুক্তি অনুযায়ী লাভের টাকা দিতে না পারায় তোফায়েল তাঁর ঘরে তালা লাগিয়ে দেন। এতে তাঁর পরিবার ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে খোলা বারান্দায় মানবেতর জীবন যাপন করছে।
জানতে চাইলে একরাম হোসেন বলেন, ‘২০১৫ সালে আমার রিকশার সঙ্গে দুর্ঘটনায় দুজন লোক আহত হয়। তাদের চিকিৎসা করতে গিয়ে আমি তোফায়েল থেকে লাভের ওপর ৬০ হাজার টাকা নিই। ২০১৯ সালে আরও ১১ হাজার নিই। ২০২৩ সাল পর্যন্ত আমি সর্বমোট ১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা পরিশোধ করি।’
একরাম আরও বলেন, ‘ওই টাকা দিতে গিয়ে আমাকে কয়েকটি এনজিও থেকে ঋণ নিতে হয়েছে। সেই ঋণের টাকা পরিশোধ করতে আমার জীবন শেষ। ২০২৩ সাল থেকে আমি আর সুদের টাকা টানতে পারছিলাম না।
‘একপর্যায়ে আমি রাতের আঁধারে পালিয়ে যাই। কিছুদিন পর আমি বাড়িতে আসলে তিনি লোক নিয়ে আমাকে তুলে নিয়ে মারধর করেন এবং জোরপূর্বক ৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন। পরে আমি চট্টগ্রামে গিয়ে রিকশা চালিয়ে সামান্য যা কিছু উপার্জন করি, বাড়িতে পাঠালে কোনো রকম আমার সংসার চলে।
‘গত কয়েক দিন আগে আমার মা অসুস্থ হয়ে পড়ায় স্ত্রী–সন্তানদের নিয়ে হাতিয়ার বাইরে যাই। এই সুযোগে তোফায়েল আমার ঘরের সব মালামাল বের করে নিয়ে তালা মেরে দেন। আমার স্ত্রী ফিরে আসলে তাঁর কাছে চাবির জন্য গেলে তিনি দেননি।’
একরাম হোসেনের স্ত্রী বলেন, ‘আমি ঘরে ঢুকতে না পেরে খোলা বারান্দায় বাচ্চাদের নিয়ে রাত্রি যাপন করছি। বৃষ্টির কারণে বাচ্চাদের ঠান্ডা লেগে গেছে। আট দিন পর আজকে পাশের ঘর থেকে পাতিল নিয়ে ভাত রান্না হয়েছে। এলাকার অনেকের কাছে গিয়েছি। কেউ আমাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেনি।’
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হালিম বলেন, গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ঘরের বাইরে অবস্থান করে একরামের বাচ্চাদের ঠান্ডাজনিত সমস্যা দেখা দিয়েছে। টাকাপয়সা নেই যে ওষুধ কিনে খাওয়াবে। এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা হওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। টাকার জন্য ঘরে তালা মেরে লোকজনকে বাইর করে দেওয়া এক অমানবিক কাজ।
অভিযোগের বিষয়ে তোফায়েল আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সে আমার কাছ থেকে লাভের ওপরে টাকা নিয়েছে। টাকা না দিয়ে সে অনেক দিন থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বাড়িতে গিয়ে কাউকে না পেয়ে আমি ঘরে তালা দিয়েছি। আমার টাকা পরিশোধ করলে আমি তালা খুলে দিব।’
স্থানীয় চরকিং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নাঈম উদ্দিন বলেন, ‘সুদের পাওনা টাকার জন্য কারও বসতঘরে তালা দেওয়া আইনত অপরাধ। আমি চৌকিদার পাঠিয়ে এখনই তালা খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।’
ক্রাইম জোন ২৪