অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে যৌথ ঘোষণাপত্র, সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার


দেশের ক্রমবর্ধমান অসংক্রামক রোগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে এক অনুষ্ঠানে ৩৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্মিলিতভাবে একটি ‘যৌথ ঘোষণাপত্র’ স্বাক্ষর করেছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য অসংক্রামক রোগ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবগণের হাতে যৌথ ঘোষণাপত্র তুলে দেন। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো ডায়াবেটিস, ক্যানসার, হৃদ্রোগ ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগের মতো অসংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদি একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা।
চিকিৎসা ব্যয় ও জাতীয় উন্নয়নে প্রভাব
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে অসংক্রামক রোগের কারণে দেশের বিপুল অঙ্কের অর্থ বিদেশে চলে যাওয়ার বিষয়টির ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘যদি একজন ব্যক্তির ক্যানসার হয়, তার পরিবারকে আর্থিক সামর্থ্যের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করতে হয় এবং প্রায় ক্ষেত্রেই তারা নিঃস্ব হয়ে পড়ে। কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হয়, যা দেশের সম্পদ বিদেশে চলে যাওয়ার অন্যতম কারণ।’
ড. ইউনূস আরও বলেন, স্বাস্থ্যসেবা শুধু একটি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের কাজ নয়। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং একটি দক্ষ ও কর্মক্ষম জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য সুস্থ প্রজন্ম অপরিহার্য। তাই সকল মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই এই সমস্যার টেকসই সমাধান সম্ভব।
যৌথ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রের কথা উল্লেখ করেন, যার মধ্যে রয়েছে:
খাদ্য ও পুষ্টি: স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস এবং চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বৃদ্ধি।
তামাক নিয়ন্ত্রণ: তরুণ প্রজন্মকে তামাকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন করা।
শারীরিক কর্মকাণ্ড: নিয়মিত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাকে উৎসাহিত করা।
শিক্ষা ও জনসচেতনতা: স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতা কার্যক্রম চালু করা।
ড. ইউনূস বলেন, এই ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি খাত এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেল প্রয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা দেবে।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. নুরজাহান বেগম এবং স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান সহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা বলেন, এই যৌথ উদ্যোগ জাতীয় স্বাস্থ্য নিরাপত্তা শক্তিশালী করতে একটি নতুন মাইলফলক হবে।
ক্রাইম জোন ২৪