শিরোনাম
পাহাড়ের মাটিতে এখন মরুভূমির ফলের স্বাদএতিম নেই, ভুয়া নথিতে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ৪৫০ টন গয়না ‘অঙ্গপ্রত্যঙ্গ’ দেখিয়ে এনবিআরকে ধোঁকা, শীর্ষ কর্মকর্তার জড়িত থাকার প্রমাণবেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিসিএসের আদলে শিক্ষক নিয়োগপাহাড়ি চাষ, প্রক্রিয়াজাত শিল্প ও বাজার সম্ভাবনাছয়টি যুদ্ধ থামিয়েছি, কিন্তু এটা সবচেয়ে কঠিন—জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্পনেছারাবাদ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কের সব পদ স্থগিতদলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে এনসিপির মাহিন সরকারকে বহিষ্কারবিএনপির চাঁদাবাজি নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট, যুবকের বাবাকে কুপিয়ে জখমসাবেক পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হকের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান

৪৫০ টন গয়না ‘অঙ্গপ্রত্যঙ্গ’ দেখিয়ে এনবিআরকে ধোঁকা, শীর্ষ কর্মকর্তার জড়িত থাকার প্রমাণ

৪৫০ টন গয়না 'অঙ্গপ্রত্যঙ্গ' দেখিয়ে এনবিআরকে ধোঁকা, শীর্ষ কর্মকর্তার জড়িত থাকার প্রমাণ

কমবেশি ৪৫০ টন জুয়েলারি (গয়না) পণ্য আমদানি করা হয়েছে। পণ্যটি আমদানি করলে নিয়ম অনুযায়ী প্রতি টনের জন্য সরকারকে কর দিতে হয় ৩ লাখ টাকা। রাজস্বের অঙ্ক দাঁড়ায় বেশ কয়েক কোটি। কর ফাঁকি দিতে অসাধু আমদানিকারক তাই জুয়েলারি আমদানি করলেও ঘোষণা দিয়েছেন কৃত্রিম মানব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের। এতে কর নেমে আসে প্রতি টন মাত্র ৩ হাজার টাকায়। কর্মকর্তা আর অসাধু ব্যবসায়ী হাত মেলানোয় সরকার হারিয়েছে কমপক্ষে ১৩ কোটি টাকার রাজস্ব।

মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে কর ফাঁকির ওই ঘটনায় জড়িত বলে অভিযুক্ত প্রভাবশালী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে তদন্ত হয়েছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ে প্রতিবেদনও জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ সময়ে এই বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) ঘটা আন্দোলন ও দ্বন্দ্বের জেরে তা আবার সামনে এসেছে। রাজস্ব ফাঁকির এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা হলেন মো. মাহমুদুল হাসান। তিনি বর্তমানে বৃহৎ করদাতা ইউনিটে (এলটিইউ) কমিশনার পদে কর্মরত।

গত ১২ মে এনবিআর পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে সরকার রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগ গঠনের অধ্যাদেশ জারি করলে এনবিআর কর্মকর্তারা তা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। দেশব্যাপী কর্মবিরতির ফলে রাজস্ব আদায়ে চরম অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। সরকারের কঠোর অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে একপর্যায়ে আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়। আন্দোলনে জড়িতদের চিহ্নিত করতে সম্প্রতি সরকারের একাধিক সংস্থা মাঠে নামে। কমিশনার মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যুক্ত থাকার প্রমাণ মেলে। অনুসন্ধানকারীরা এই কর্মকর্তা সম্পর্কে বলেছেন, কাস্টমসের কমিশনারদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিলেন। তিনি সব মেম্বারকে অফিসে আটকে রাখার জন্য তারেক রিকাবদারকে নির্দেশনা দেন। এর কারণ হলো, মেম্বাররা আটকে থাকলে সচিবালয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারবেন না।

কর্মকর্তারা বলেন, আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা নানা ধরনের শাস্তির আওতায় এসেছেন। এর অংশ হিসেবে ২০১৬ সালে ১৩ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়া হলেও আবার তা সামনে এসেছে। সে সময় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মাহমুদুল হাসান সোনামসজিদ স্থলবন্দরে যুগ্ম কমিশনার থাকার সময় মিথ্যা ঘোষণায় আমদানির ঘটনাটি ঘটে। তিনি কৃত্রিম মানব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আমদানির নামে অনেক কম শুল্কে বিপুল পরিমাণ সোনা ও গয়না দেশে আনার সুযোগ করে দেন। মাহমুদুল হাসান বিল অব এন্ট্রিতে সই করেন, যা সচরাচর সহকারী কমিশনাররা করে থাকেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে প্রায় ৪৫০ টন কৃত্রিম অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকৃতপক্ষে পণ্যটি এত পরিমাণে আমদানির প্রয়োজন বাংলাদেশে নেই। তবে চালানে ছিল জুয়েলারি পণ্য। বিপুল অঙ্কের কর ফাঁকি দিতে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ঘোষণা দেওয়া হয়।

নথি ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৬ সালের ২১ জানুয়ারি ১৪ টন (বিল নম্বর ১২৩৭), ১৯ জানুয়ারি ২০ দশমিক ১৪ টন (বিল নম্বর ১০২২), ১০ ফেব্রুয়ারি ১১ দশমিক ৫ টন (বিল নম্বর ১৫০০) এবং ৮ ফেব্রুয়ারি ১১ টন (বিল নম্বর ১৪৮৫) কৃত্রিম অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আমদানি দেখানো হয়। এর আগে ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর ৮ টন, ১৩ ডিসেম্বর ১৩ দশমিক ৫ টন এবং ৫ ডিসেম্বর ৬ দশমিক ৫ টন আমদানি দেখানো হয়। প্রকৃতপক্ষে সবই ছিল জুয়েলারি পণ্য। এই অনিয়মের মাধ্যমে লাভবান করা হয় একাধিক প্রতিষ্ঠানকে। এর মধ্যে রয়েছে মেসার্স দিয়া এন্টারপ্রাইজ (বালুবাড়ী, দিনাজপুর), মেসার্স শুভ এজেন্সি (সোনামসজিদ, শিবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ), মেসার্স মায়ের দোয়া হার্ডওয়্যার স্টোর (গোদাগাড়ী, রাজশাহী) এবং মেসার্স আইডিয়া ইমপ্যাক্ট (বিজয়নগর, ঢাকা)।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সোনামসজিদ স্থলবন্দরে দায়িত্বে থাকার সময় মাহমুদুল হাসান একক সিদ্ধান্তে লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের সদস্যসচিব তপন চন্দ্র দেকে না জানিয়ে ছয়জন সি অ্যান্ড এফ এজেন্টকে লাইসেন্স দেন। কর্মকর্তারা বলছেন, এনবিআরের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে এভাবে লাইসেন্স দেওয়া সোনামসজিদ বন্দরের বাইরে আর কোথাও ঘটেনি। এই বড় অনিয়মের বিনিময়ে মাহমুদুল হাসান অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। তৎকালীন যুগ্ম কমিশনার মাহমুদুল হাসানের মতো ব্যক্তি রাজস্ব সংস্থার দায়িত্বে থাকা শুধু সংস্থার জন্য নয়, জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও হুমকি বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের কমিশনার মো. মাহমুদুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি বিস্তারিত আপনার কাছ থেকে শুনলাম। এ বিষয়ে এখন কোনো মন্তব্য করব না।’

এনবিআর কর্মচারীদের আন্দোলনের জেরে এতে সক্রিয় ভূমিকা রাখা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে সরকার। এখন পর্যন্ত কমিশনারসহ একাধিক কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।


ক্রাইম জোন ২৪

আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button