সর্বোচ্চ জনশক্তি রপ্তানির আশা নিয়ে মালয়েশিয়া সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা


প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের আমন্ত্রণে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে মালয়েশিয়ায় যাচ্ছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই সফরে জনশক্তি রপ্তানিসহ বিভিন্ন বিষয়ে মালয়েশিয়ার সঙ্গে ৫টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হবে। দেশটির শ্রম বাজারের বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চ জনশক্তি পাঠানোর বিষয়ে চুক্তি হতে পারে বলে আশা করছে সরকার।
আজ রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই সফরের বিস্তারিত জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তাঁর সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (জনকূটনীতি) শাহ আসিফ রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘এই সফরের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মালয়েশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীরতর করা। বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দেশটি যাতে সর্বোচ্চ সংখ্যক জনশক্তি বাংলাদেশ থেকে নেয় এই সফরের মাধ্যমে সে চেষ্টা করা হবে। এ বিষয়ে অনেক আলাপ ও চুক্তি হবে।’
পাশাপাশি বাংলাদেশের জ্বালানি ও গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণসহ বিভিন্ন খাতে দেশটির বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ টানার চেষ্টা করা হবে বলেও তিনি জানান।
১১ আগস্ট থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত সফরে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন দুই দেশের সরকারপ্রধান। মালয়েশিয়ার বিনিয়োগকারীদের সম্মেলনে যোগ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা। সফরকালে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন তিনি। কেবাংসাং বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে সম্মানসূচক ডিগ্রি দেওয়া হবে।
১২ আগস্ট মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রেস সচিব বলেন, এর মাধ্যমে দুই দেশের সুসম্পর্ক নতুন উচ্চতায় অধিষ্ঠিত হবে। সেখানে অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশি ও তাঁদের পাসপোর্টের সমস্যা নিয়েও আলোচনা হবে।
১৩ আগস্ট মালয়েশিয়ার বহুজাতিক কোম্পানির প্রধান নির্বাহীদের নিয়ে বিজনেস কনফারেন্সে প্রধান উপদেষ্টা বক্তব্য রাখবেন। সেদিনই কেবাংসাং বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে সম্মানসূচক ডিগ্রি দেওয়া হবে। ওই অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ও সুলতান উপস্থিত থাকবেন।

অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের বৈধতা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে কিনা—এই প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘অনেক আলাপ-আলোচনাই হবে। কিছুতো সমঝোতা হবে। তার বাইরেও অনেক বিষয়ে আলোচনা হবে। আমাদের প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা যাবেন, উনি কথা বলবেন। পরবর্তী আপডেট এসে জানাতে পারব। গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণে সহযোগিতার জন্য দেশটিকে অনুরোধ জানানো হবে।’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আপডেট জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওখানে গৃহযুদ্ধ চলছে, তাই রোহিঙ্গাদের যাওয়ার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত নয়। এ অবস্থায় তাদের ওখানে পাঠানো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নিরাপদ মনে করবে না। এ বিষয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বড় সম্মেলন হবে। ১৭০ টির মত দেশ সেখানে যুক্ত হবে। ২৫ আগস্ট কক্সবাজারে একটি সম্মেলন হবে। রোহিঙ্গা নিয়ে আমাদের যথেষ্ট ফোকাস আছে। আমরা চাই, তারা যেন নিজ বাসস্থানে শান্তিপূর্ণভাবে ফিরতে পারেন।’
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে কী কী বিষয়ে এমওইও স্বাক্ষরিত হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (জনকূটনীতি) শাহ আসিফ রহমান।
তিনি জানান, সফরকালে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, জ্বালানি বিষয়ক সহযোগিতা, এফবিসিসিআই এবং এমসিসিআইয়ের মধ্যে ব্যবসায়িক কাউন্সিল গঠন, বিএমসিসিআই ও এমআইএমওএস’র মধ্যে সহযোগিতা স্মারক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ এবং মালয়েশিয়ার ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের মধ্যে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে।
এছাড়া দুই দেশের মধ্যে হালাল ইকো সিস্টেম, উচ্চ শিক্ষা এবং কূটনীতিক প্রশিক্ষণ একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা বিষয় তিনটি নোট বিনিময় হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এসব অনুষ্ঠানে দুই দেশের প্রধান উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
শাহ আসিফ রহমান বলেন, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন সেক্টরে নতুন কর্মী নিয়োগ, অধিক সংখ্যক পেশাদার নিয়োগ, শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
রিজিওনাল কম্প্রিহেন্সিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) এগ্রিমেন্টে এবং আসিয়ান সেক্টরাল ডায়ালগে পার্টনার হিসেবে বাংলাদেশের যোগদানের আবেদন জোরালোভাবে তুলে ধরা হবে বলে জানান তিনি।
ক্রাইম জোন ২৪