রামপুরায় হত্যাযজ্ঞ শেষে ওসি-এসআইদের লাখ টাকা পুরস্কার দেন ডিএমপি কমিশনার হাবিব, ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই রাজধানীর রামপুরা ও বনশ্রীতে ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানের নির্দেশে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। পিস্তল, চায়নিজ রাইফেল ও শটগান দিয়ে ১ হাজার ৭০২টি গুলি করে তারা। এতে ৫৩ জন নিহত হয়; আহত হয় আরও শতাধিক।
এই হত্যাযজ্ঞের পর রামপুরা থানায় গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ দেন হাবিবুর রহমান। খিলগাঁও অঞ্চলের এডিসি মো. রাশেদুল ইসলাম, রামপুরা থানার ওসি মশিউর রহমান, এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকার ও এসআই তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়াকে নগদ এক লাখ টাকা করে পুরস্কারও দেন তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রামপুরা ও বনশ্রীতে চালানো হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার অভিযোগে এসব কথা বলা হয়েছে।
আজ রোববার এই মামলায় দেওয়া আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। একই সঙ্গে হাবিবুর রহমানসহ পলাতক চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ১৭ আগস্টের মধ্যে তাঁদের গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়া অন্য তিন পুলিশ কর্মকর্তা হলেন ডিএমপির খিলগাঁও অঞ্চলের সাবেক এডিসি মো. রাশেদুল ইসলাম, রামপুরা থানার সাবেক ওসি মশিউর রহমান ও রামপুরা থানার সাবেক এসআই তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া।
গত ৩১ জুলাই এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। যাচাই-বাছাই শেষে গত বৃহস্পতিবার তা আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে প্রসিকিউশন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রামপুরায় একটি নির্মাণাধীন ভবনের কার্নিশে ঝুলে থাকা একজনকে গুলি, আরেকজনকে গুলি করে হত্যা এবং একটি শিশুকে গুলি করলে তা তার মাথার এক পাশে লেগে অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে তার দাদির মৃত্যু—মামলার প্রতিবেদনে আসামিদের বিরুদ্ধে এই তিন ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়।
একটি অভিযোগে বলা হয়, আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই ডিএমপির তৎকালীন কমিশনার হাবিবুর রহমানের নির্দেশ অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমনে খিলগাঁও জোনের এডিসি মো. রাশেদুল ইসলামের নেতৃত্বে রামপুরা থানার ওসি মশিউর রহমান, এসআই তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া, এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকার ও অন্যরা চায়নিজ রাইফেল, শটগান, পিস্তলসহ বনশ্রী-রামপুরা এলাকায় নিয়োজিত ছিলেন। তাঁরা সশস্ত্র অবস্থায় কোনো কারণ ছাড়াই নিরীহ ছাত্র-জনতাকে চায়নিজ রাইফেল, শটগান দিয়ে গুলি করেন। এ সময় রামপুরা থানার পাশে জুমার নামাজ শেষে মসজিদের সামনে অবস্থানরত মো. নাদিম (৩৮) নিহত হন।
অপর অভিযোগে বলা হয়, ১৯ জুলাই আমির হোসেন (১৮) তাঁর কর্মস্থল আফতাবনগর থেকে বাসায় ফেরার পথে রামপুরা থানার পাশে এলোপাতাড়ি গুলি দেখে একটি নির্মাণাধীন ভবনে আশ্রয় নেন। পুলিশ তাঁকে ধাওয়া করলে তিনি তিনতলায় ছাদ ঢালাইয়ের সেন্টারিংয়ের পাইপ ধরে ঝুলে থেকে নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করেন। পুলিশ সেখানে দিয়ে তাঁকে নিচে লাফ দিতে বলে। লাফ না দেওয়ায় তাঁকে পিস্তল দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে পরপর ছয়টি গুলি করে পায়ে। এতে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন।
আরেকটি অভিযোগে বলা হয়, ১৯ জুলাই রামপুরা থানার পাশে একটি ভবনের গেটের ভেতরে অবস্থান করছিলেন ছয় বছরের শিশু বাসিত খান মুসা ও তার দাদি মায়া ইসলাম। পুলিশের বেপরোয়া গুলি শিশু মুসার মাথা ভেদ করে দাদি মায়া ইসলামের পেটে লাগে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন মায়া ইসলাম মারা যান। শিশু মুসা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিএমএইচ এবং সিংগাপুরে চিকিৎসার পর এখনো সিএমএইচে চিকিৎসাধীন।
ক্রাইম জোন ২৪