শিরোনাম

প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সংযোগ ৬০ শতাংশ কমেছে দুইশ বছরে: গবেষণা

প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সংযোগ ৬০ শতাংশ কমেছে দুইশ বছরে: গবেষণা

গত দুইশ বছরে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সংযোগ ৬০ শতাংশেরও বেশি কমে গেছে। একই সময়ে বইপত্র থেকে নদী, শ্যাওলা, ফুলের মতো প্রকৃতিসংক্রান্ত শব্দও প্রায় একই হারে হারিয়ে গেছে। যুক্তরাজ্যের ডার্বি বিশ্ববিদ্যালয়ের নেচার কানেকটেডনেসের অধ্যাপক মাইলস রিচার্ডসনের এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, নগরায়ণ, প্রতিবেশে বন্যপ্রাণী কমে যাওয়া এবং বিশেষ করে প্রকৃতির প্রতি আগ্রহ বাবা–মা থেকে সন্তানের কাছে না পৌঁছানোর কারণে ১৮০০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ে এই সংযোগ হারিয়েছে। আর বইতে প্রকৃতিসংক্রান্ত শব্দের ব্যবহার ১৯৯০ সালে সর্বোচ্চ ৬০.৬ শতাংশ কমেছে। এই হার কিছুটা কমে বর্তমানে ৫২.৪ শতাংশে দাঁড়ালেও এই দৃশ্যপটকে ‘উদ্বেগজনক’ বলছেন গবেষকেরা।

রিচার্ডসনের কম্পিউটার মডেলিং বলছে, বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যত প্রজন্ম প্রকৃতির প্রতি আগ্রহ হারাতে থাকবে, কারণ শহুরে পরিবেশে প্রকৃতির উপস্থিতি ক্রমেই কমছে এবং বাবা–মায়ের কাছ থেকেও প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রতি ঝোঁক শিখছে না শিশুরা। অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে, বাবা–মায়ের প্রকৃতিপ্রীতিই সন্তানের প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সবচেয়ে বড় পূর্বাভাসদাতা

এই গবেষক মনে করেন, প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সংযোগ কমে যাওয়া পরিবেশ সংকটের অন্যতম মূল কারণ, যা মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। তাঁর মতে, শহরে জীববৈচিত্র্যময় সবুজ স্থান ৩০ শতাংশ বাড়ানো ইতিবাচক হলেও প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ ফিরিয়ে আনতে শহরকে হয়তো ১০ গুণ সবুজায়ন করতে হবে।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য স্বল্পমেয়াদি সচেতনতামূলক কার্যক্রম (যেমন #30DaysWild) মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হলেও দীর্ঘমেয়াদে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রকৃতির প্রতি আগ্রহ বাড়াতে তেমন কার্যকর নয়। বরং শিশু ও পরিবারকে প্রাথমিক বয়স থেকেই প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত রাখা—যেমন বনভিত্তিক স্কুল বা প্রকৃতি-ভিত্তিক শিক্ষা—সবচেয়ে ফলপ্রসূ হতে পারে।

রিচার্ডসনের মতে, আগামী ২৫ বছরের মধ্যে শিক্ষা ও নগর পরিকল্পনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারলে হারানো সংযোগ ফিরিয়ে আনা সম্ভব এবং একবার ফিরলে তা টেকসই হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের শেফিল্ডের মানুষ গড়ে দিনে মাত্র সাড়ে চার মিনিট প্রাকৃতিক পরিবেশে কাটায়। এটিকে ৪০ মিনিটে বাড়ানোই হয়তো যথেষ্ট হতে পারে।

অবাক করা বিষয় হলো, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বইতে প্রকৃতিসংক্রান্ত শব্দের ব্যবহার আবার কিছুটা বেড়েছে। রিচার্ডসন ধারণা করছেন, এটি হয়তো পরিবেশ সচেতনতার নতুন ঢেউ, প্রকৃতি বিষয়ক সাহিত্য জনপ্রিয়তা কিংবা আধ্যাত্মিকতার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধির প্রভাব হতে পারে।



আরও দেখান

সম্পর্কিত খবর

Back to top button