জামায়াত আজেবাজে থিওরি দিয়ে নির্বাচন বিলম্বের চেষ্টা করছে: মেজর হাফিজ


জামায়াত ইসলামী আজেবাজে থিওরি দিয়ে নির্বাচন বিলম্বের চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দল বলছে, ১৯৭১ সালে জাতি নাকি পথভ্রষ্ট ছিল। সেদিনের স্বাধীনতা আন্দোলনের সংগ্রাম নাকি ভুল ছিল। এই ধরনের কথা বাংলাদেশের রাজনৈতিক কোনো দল বলবে আমরা আশা করি না।’
জুলাই ২৪ গণ-অভ্যুত্থানের ‘বর্ষপূর্তিতে দ্রুত বিচার সম্পন্ন, মৌলিক সংস্কার ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আজ শুক্রবার (৮ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবে সকালে জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অগ্নিসেনা সোশ্যাল ফাউন্ডেশন ও আমাদের নতুন বাংলাদেশ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এই সরকারের দু-একজন উপদেষ্টা ও দু-একটি রাজনৈতিক দলের কথায় আমরা বেদনার সাথে লক্ষ্য করেছি যে,৭১’ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকে একটু পেছনে ঠেলে দিতে চায় তারা। ৭১’ সালে জিয়াউর রহমানের ভূমিকা ছিল, বিশেষ করে সৈনিক, ছাত্র-জনতা, নানান পেশার মানুষ যে গৌরবময় অবদান, সংগ্রাম, আত্মদান সেটিকে ভুলিয়ে দেওয়ার জন্য তারা নানান ধরনের কথা বলে।
তিনি বলেন, ‘একটা রাজনৈতিক দল বলেছে ১৯৭১ সালে জাতি নাকি পথভ্রষ্ট ছিল। সেদিনের স্বাধীনতা আন্দোলনের সংগ্রাম নাকি ভুল ছিল। এই ধরনের কথা বাংলাদেশের রাজনৈতিক কোনো দল বলবে আমরা আশা করি না। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে সারা জাতি অংশগ্রহণ করেছে, এটি কোনো রাজনৈতিক দলের সংগ্রাম ছিল না।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘জামায়াত ইসলামী বলেছে জাতীয় ঘোষণাপত্রে জুলাই সনদে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠাকে অত্যন্ত গৌরবের সাথে উপস্থাপন করা হয়নি। তারা ভেবেছে দেশের মানুষের স্মরণশক্তি খুবই দুর্বল। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছে। ৭১’ এর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধিতা করেছে জামায়াত। এখন তারা নতুন নতুন বাণী নিয়ে আবির্ভূত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বিচারের ভাগ জনগণের কাছে। গণতন্ত্রে তাদের (জামায়াতে ইসলামী) নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অধিকার আছে। জনগণের রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। গণতন্ত্রে রাষ্ট্রে তারা তাদের ম্যানুফেস্ট দিয়ে নির্বাচনের যাবতীয় কর্মকাণ্ড প্রচার করতে পারে। জনগণ তাদের যদি মেনে নেয় তাহলে নির্বাচিত করুক আমরা মেনে নিব, সমস্যা নাই। কিন্তু নির্বাচন বিলম্বিত করার জন্য তারা আজেবাজে থিওরি দিচ্ছে, তা মোটেও কাম্য নয়। আমরা আশা করব, জনগণের রায়ের ওপর সবাই আস্থা রাখবেন। গণতন্ত্রের মূল শক্তি হচ্ছে জনগণ।’
আওয়ামী লীগের দুঃশাসন নিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধার চেতনাকে ধারণ করেনি। তারা নিজেদের গ্রোরিফাই করার জন্য লুটপাটে ব্যস্ত ছিল। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যে মূল চেতনা ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, সেটা ছুড়ে ফেলে দিয়েছে এবং একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে। সবশেষে তাদের দৃশ্যপট থেকে অপসারণ করেছে সংগ্রামী ছাত্র-জনতা। গত ১৫ বছরে যে কয়টি নির্বাচন হয়েছে তা জনগণের সাথে প্রতারণা ছিল। আওয়ামী লীগ নির্বাচনের নামে প্রহসন ও মাফিয়া নেতৃত্ব গড়ে তুলেছিল।’
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘গণতন্ত্র অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চেষ্টা করছেন। কিন্তু উপদেষ্টার কিছু কিছু সদস্য গদি নরম পেয়ে ছাড়তে চায় না। কেউ কেউ পাঁচ বছর বা আরও বেশি ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছেন, যা আমরা আশা করি না। সংস্কার করতে চেয়েছেন ভালো কথা কিন্তু এমন সংস্কার চাই যা জনকল্যাণে ভূমিকা রাখবে। সংবিধান সংশোধন বা সংস্কার করা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাজ। সংস্কারের রূপরেখা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দিতেই পারেন কিন্তু সংবিধান সংস্কার কার্যকরী ভূমিকা রাখবেন যারা আগামী নির্বাচনে সংসদে নির্বাচিত হয়ে আসবেন।’
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন—গণসংহতি আন্দোলন প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সহসভাপতি এ্যাড. গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী আলাল, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অগ্নিসেনা সোশ্যাল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান তালুকদার জহিরুল হক তুহিন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অগ্নিসেনা সোশ্যাল ফাউন্ডেশনের মো. নুরে আলম বাবুল, মো. নাজমুল ইসলাম চৌধুরী, কাজল মজুমদার, মো. জামাল হোসেন, জাকির হোসেন শুভ, একেএম ফারুক নূর ও আরিফ হাসান।