৭ সুপারিশের ৩টি আংশিক বাস্তবায়ন


শুধু সুপারিশে অর্থনীতি পাল্টায় না; প্রয়োজন হয় সাহস, পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতা। গণ-আন্দোলনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য যে সাতটি বড় ধরনের সংস্কারের সুপারিশ করেছিল শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। এক বছর পার হলেও তার বেশির ভাগ এখন ফাইলের নিচে চাপা। তিনটি শুরু হয়েছে অর্ধেকমুখীভাবে, চারটি একটুও নড়েনি।
শ্বেতপত্রে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর দুর্বলতা স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিক, আমলা, সামরিক, বিচার বিভাগ ও ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর সমন্বয়ে ‘চোরতন্ত্র’ গড়ে উঠেছে; যা ২৮টি উপায়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট করেছে। এতে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে।
আংশিক বাস্তবায়িত সুপারিশের মধ্যে রয়েছে এলডিসি উত্তরণের জন্য রূপান্তর কৌশল বাস্তবায়ন, উত্তরণ মানদণ্ড বিশ্লেষণ এবং এসডিজি অর্জনে অগ্রগতির উদ্যোগ। তবে কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি, বাজেট কাঠামো, অগ্রাধিকারভিত্তিক সংস্কার এবং একটি জাতীয় উন্নয়ন ফোরাম গঠনের মতো চারটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়নি।
ব্যাংক খাত সংস্কারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর কার্যক্রম শুরু করেছেন। ঋণখেলাপি নিরসনে রেগুলেশন পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে প্রকৃত খেলাপি ঋণ এখনো ৫ লাখ কোটি টাকার বেশি। পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে আইন সংশোধনসহ কার্যক্রম চলছে, কিন্তু দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩০০ কোটি ডলারের বেশি দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে বিকেন্দ্রীকরণ এবং মন্ত্রীর একক নিয়ন্ত্রণ কমানোর সুপারিশ থাকলেও সেখানে কাজ শুরু হয়নি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড পুনর্গঠনের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু মেরুদণ্ড যেখানে বেঁকে রয়েছে, সেখানে শুধু বিভাগ ভাঙলেই শিরদাঁড়া সোজা হয় না। মূল সংস্কার কার্যক্রম এখনো অসম্পূর্ণ। যার ফলে রাজস্ব ঘাটতি ৯২ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বাজেটে মৌলিক পরিবর্তন হয়নি, বরং পুরোনো থোড় বড়ি খাড়া মনোভাবই চলছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আলাদা বিভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। বাজেটে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বড় কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, কিছু উদ্যোগ শুরু হলেও তা ধীরগতির। সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, সংস্কার শুরুর জন্য সরকার কাঠামোগত কোনো প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেনি।
শ্বেতপত্র কমিটির সদস্য ও বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, সাতটি সুপারিশের প্রতিটি ছিল বাস্তবমুখী। কিন্তু এগুলোর জন্য যা প্রয়োজন, তা হলো রাজনৈতিক সদিচ্ছা। সেটা এখনো অনুপস্থিত। অন্তর্বর্তী সরকার সীমিত সময়ের মধ্যে কিছু কাজ করেছে, সব নয়।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, অর্থনীতির ভয়াবহ অবস্থায় সরকার দায়িত্ব নেয়। এখন রিজার্ভ বেড়েছে, বিদেশি দায় মেটানো হয়েছে। সবকিছু ঠিক করার জন্য এক বছর যথেষ্ট নয়।
অর্থনীতিবিদ এ কে এনামুল হক বলেন, সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিকদের মাধ্যমে দুর্নীতি হয়। শ্বেতপত্রে এটি স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। এনবিআর পৃথক্করণ ও কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল এর প্রতিফলন।