আইসিসির দ্বিস্তরী কাঠামো নিয়ে ইংল্যান্ডের দুশ্চিন্তা


ক্রিকেটের কাঠামোগত পরিবর্তন করতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থা (আইসিসি) বেশি একটা সময় নেয় না। কোনো নিয়মে পরিবর্তন আনতে হলে সেই ব্যাপারে দেওয়া হয় প্রস্তাবনা। বর্তমানে আইসিসির প্রস্তাবিত দুই স্তরের টেস্ট নিয়ে চলছে অনেক আলাপ-আলোচনা। এই ব্যাপারে এখন বেশ চিন্তায় পড়ে গেছে ইংল্যান্ড।
বর্তমান আইসিসি র্যাঙ্কিং অনুযায়ী ছয় দল নিয়ে স্তর করলে প্রথম স্তরে থাকবে দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় স্তরে থাকবে বাংলাদেশ, আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং জিম্বাবুয়ে। প্রস্তাবিত দ্বিস্তরবিশিষ্ট টেস্ট চালু হলে একটি সময় পর্যন্ত ওপরের দিকে থাকা ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার সুযোগ থাকবে না দ্বিতীয় স্তরের বাংলাদেশ-পাকিস্তান-ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) আইসিসির এই প্রস্তাব নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। ইসিবির আশঙ্কা, ইংল্যান্ড বাজে খেলে দ্বিতীয় স্তরে নেমে গেলে অ্যাশেজ, অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। লন্ডনের ওভালে কদিন আগে ইংল্যান্ড-ভারত পঞ্চম টেস্ট চলার সময় বিবিসি টেস্ট ম্যাচ স্পেশালে বলেন, ‘আমরা যদি খারাপ সময় পার করি এবং দ্বিতীয় স্তরে নামি, তাহলে অস্ট্রেলিয়া বা ভারতের বিপক্ষে কি খেলব না? এটা তো হতে পারে না। এখানে জোরালো যুক্তি দরকার।’
ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি লিগ। বিপিএল, আইপিএল, পিএসএল, বিগ ব্যাশসহ সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্রেও হচ্ছে টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে টি–টোয়েন্টি লিগের ভিড়ে দ্বিপক্ষীয় টেস্ট সিরিজের গুরুত্ব অনেকটাই কমে গেছে বলে মনে করেন থম্পসন। তবে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের কাঠামোতে কিছু পরিবর্তন আনলে দুই স্তরবিশিষ্ট টেস্টের প্রয়োজন পড়বে না বলে তাঁর ধারণা। ইসিবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে তারা (দক্ষিণ আফ্রিকা) কদিন আগে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতল। টেস্ট ক্রিকেটের জন্য সেটা ছিল দারুণ এক মুহূর্ত। তাতে বোঝা গেছে প্রয়োজনীয় সহায়তা পেলে তুলনামূলক ছোট দলগুলো বড় কিছু অর্জন করতে পারে।’
২০১৯ সাল থেকে শুরু হয়েছে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত তিন আসরেই তিন নতুন চ্যাম্পিয়ন দেখা গেছে। ২০১৯-২১, ২০২১-২৩, ২০২৩-২৫ চক্রে শিরোপা জিতেছে নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা। যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকা এ বছরের জুনে লর্ডসকে অজিদের হারিয়ে ২৭ বছর পর কোনো মেজর শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছে। বাংলাদেশ প্রথম দুই আসরে তলানিতে থাকার পর সবশেষ চক্রে (২০২৩-২৫ চক্র) সাত নম্বরে থেকে শেষ করেছে।
প্রথম তিন আসরের মতো ২০২৫-২৭ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে খেলছে ৯ দল। থম্পসনের মতে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন ক্রিকেটের রাজকীয় সংস্করণে ভিন্ন মাত্রা এনে দিয়েছে। ইসিবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ আগের তুলনায় অনেক ভালো অবস্থায় আছে এখন। টেস্ট ক্রিকেটে এটা নতুন মাত্রা যোগ করেছে। কিন্তু সময়সূচি এবং ম্যাচগুলোর ভারসাম্য নিয়ে আরও চিন্তা-ভাবনা করা দরকার। ২০২৮ সালের অলিম্পিকের কথাও বিবেচনায় রাখতে হবে। সে বছরের জুলাইয়ে আমাদের শীর্ষ ক্রিকেটারদের যেতে হতে পারে লস অ্যাঞ্জেলেসে। এটা বড় একটা চ্যালেঞ্জ।’
ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড—বিশ্ব ক্রিকেটের ‘তিন মোড়ল’ হিসেবে পরিচিত এই তিন দেশ নিজেদের মধ্যে টেস্ট খেললে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ খেলে। অ্যাশেজ, অ্যান্ডারসন–টেন্ডুলকার ট্রফিতে পাঁচটি করে ম্যাচ হয়ে থাকে। টেস্টকে দুই স্তরে ভাগ করতে আইসিসি এরই মধ্যে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করেছে। এই ওয়ার্কিং গ্রুপের নেতৃত্বে আছেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক ব্যাটার রজার টুজ। ধারণা করা হচ্ছে, শিগগিরই আইসিসির বোর্ডে সুপারিশ পেশ করবেন টুজ। ওয়ার্কিং গ্রুপে আছেন আট সদস্য। যাঁদের মধ্যে টেস্ট খেলুড়ে দেশের বাইরের প্রতিনিধিরাও থাকতে পারবেন। আইসিসির নতুন প্রধান নির্বাহী সঞ্জয় গুপ্তও এই গ্রুপে যুক্ত হতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।
দ্বিস্তর বিশিষ্ট টেস্ট কাঠামো ২০২৭ সালে বাস্তবায়িত হতে পারে। ২০২৭-২৯ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে দেখা যেতে পারে এটার বাস্তবায়ন। যদি কোনো কারণে ইংল্যান্ড আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে সেরা ছয়ের বাইরে চলে যায়, তাহলে অ্যাশেজ, অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফির মতো সিরিজগুলো নাও হতে পারে। এমনকি কোনো কারণে ভারত কিংবা অস্ট্রেলিয়া নিচে নেমে গেলে ঐতিহাসিক বোর্ডার গাভাস্কার ট্রফি হবে না। ভারত-ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া দ্বিপক্ষীয় যে সিরিজ খেলে, সেই সিরিজগুলোতে আর্থিকভাবে অনেক লাভবান হওয়া যায়।